কোহলীর গোপন উত্থানের নেপথ্যে-
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্টার: ধোনি র কাছ থেকে এখনো অনেক শেখার আছে কোহলির। ছবি: এএফপি।মহেন্দ্র সিং ধোনির কাছ থেকে ব্যাটনটা পেয়েছেন। ধোনির অবসরের পর গত জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক হয়েছেন বিরাট কোহলি। দায়িত্ব নিয়ে বেশ সফলও। এরই মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি সিরিজে ভারতকে জিতিয়েছেন। তবে ২৬ বছর বয়সী কোহলি আরও একটি ‘মন্ত্র’ শিখতে চাইছেন পূর্বসূরির কাছ থেকে। ধোনির মতো চাপের মুখেও ঠান্ডা মাথায় দল পরিচালনা করার গুণ শিখে নিতে চান কোহলি।
একটু ঝুঁকি নিয়ে ধোনিকে ভারতের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক বলে দেওয়া যায়। আর ঝুঁকি না নিয়েই যেটি বলে দেওয়া যায়, সেটি হলো – ভারত এ পর্যন্ত যত অধিনায়ক পেয়েছে, তাঁদের মধ্যে চাপের মুখে সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার অধিনায়ক ছিলেন ধোনি। অনেক সময়ই দেখা গেছে, ম্যাচে এমন একটা মুহূর্ত এসেছে যখন অধিনায়কের একটা সিদ্ধান্তই ম্যাচ পাল্টে দেবে, ওই সময়ও উইকেটের পেছনে একেবারে ভাবলেশহীন ধোনি। চাপের বিন্দুমাত্র ছাপ নেই তাঁর চেহারায়। এই গুণের জন্য ‘ক্যাপ্টেন কুল’ তকমাও জুড়ে গেছে তাঁর নামের সঙ্গে।
ধোনির মতো চাপের মুখে এমন ‘কুল’ থাকতে চান কোহলিও। গতকাল এক আলোচনা অনুষ্ঠানে সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান সঞ্জয় মাঞ্জরেকার কোহলিকে প্রশ্ন করেছিলেন, ধোনির কাছ থেকে কোন গুনটা পেতে চাইবেন। তাঁর জবাবে ধোনির সাফল্যের বর্ণনা দিয়ে ভারতের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক বললেন, ‘ওঁ তো অধিনায়কত্বের আদর্শ ঠিক করে দিয়েছে। সবকিছু জিতেছে, টেস্টে ১ নম্বর, ওয়ানডেতে ১ নম্বর, টি-টোয়েন্টিতেও। নতুন করে জেতার মতো কিছুই তো আর বাদ রাখেনি। তবে আগেও যেমন বলেছি, ওঁর অধিনায়কত্ব দেখে টেস্টে আমি যেটা শেখার চেষ্টা করতে পারি তা হলো – স্থৈর্য। গত দু-একটা সিরিজে মনে হয় আমি কিছুটা উন্নতি করেছি। তবে ওঁর কাছ থেকে চাপের মুখে কীভাবে হুড়োহুড়ি না করে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় সেটি শিখছি।’
এমনিতে অধিনায়ক হওয়ার গুণাবলি যে তাঁর মধ্যে আছে, সেটি বয়সভিত্তিক দলে থাকার সময়ই দেখিয়েছেন কোহলি। তাঁর নেতৃত্বেই ২০০৮ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। তখনই ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক হিসেবে ভাবা হচ্ছিল কোহলিকে। জাতীয় দলে অভিষেকের চার বছরের মধ্যেই সহ-অধিনায়ক হয়ে যাওয়া তাঁর অধিনায়ক হওয়ার সহজাত গুণাবলিরই পুরস্কার। ২০১২ থেকে টানা ৩ বছর ধোনির পাশে থেকে শেখার সুযোগ পেয়েছিলেন কোহলি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ধোনি অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত শেখার সুযোগ আছে। সহ-অধিনায়ক হিসেবে ধোনির অধিনায়কত্ব দেখার অভিজ্ঞতা থেকে কোহলি বললেন, ‘আমি ওর কাছ থেকে সব সময়ই শিখছি। অনেক দিন ধরেই দলের সহ অধিনায়ক আমি। এ সময়ে লক্ষ্য করেছি ও বিভিন্ন অবস্থায় কীভাবে সিদ্ধান্ত নেয়।’
ধোনির ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রসঙ্গ এলে শুরুতেই আসবে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের কথা। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচে কীভাবে ঠান্ডা মাথায় শেষ ওভারে বল তুলে দিয়েছিলেন অখ্যাত যোগিন্দর শর্মার হাতে। বাজি ছিল নিশ্চিতভাবেই, তবে বাজিটি জিতে গিয়েছিলেন ধোনি। পাকিস্তানকে ৫ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। অধিনায়ক ধোনির আবির্ভাবের সেই টুর্নামেন্টের কথা মনে করিয়ে কোহলি বললেন, ‘ওটা ভারতের ক্রিকেটের জন্য একটা মাইলফলক ছিল। এটা আক্ষরিক অর্থেই অধিনায়ক ধোনির “সূচনা” ছিল। যেভাবে ও মাঠে কৌশলগুলো প্রয়োগ করেছিল, যেভাবে একটা তরুণ দলকে বিশ্বমঞ্চে নেতৃত্ব দিয়েছিল, তা অবিশ্বাস্য।’
অমন কিছু করতে পারলে হয়তো কোহলির ‘প্রতিশ্রুতি’ পূর্ণতা পাবে। ভারতের সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট অধিনায়ক হয়েছেন, আক্রমণাত্মক অধিনায়ক হিসেবে এরই মধ্যে সুনামও কুড়িয়েছেন। তবে মাঠ ও মাঠের বাইরে মাঝে-মধ্যেই এক-আধটু বিতর্কের জন্ম দেওয়া কোহলির জন্য ‘ক্যাপ্টেন কুল’ হওয়াটা একটা চ্যালেঞ্জই বটে।