কোটিপতি হিসাব গরমিল-
এটা টিআইবির জনগনকে বিভ্রান্ত করার হিসাব-তথ্যমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির দেওয়া কোটিপতির হিসাবে গরমিল আছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, এই হিসাব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নেই। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে টিআইবির মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া তথ্য ‘আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে
কোটিপতি প্রার্থী বেশি’ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘গ্রামেও এক কাঠা জমির দাম ২০ লাখ টাকা, পাঁচ কাঠা জমির দাম এক কোটি টাকা। আর ঢাকা শহরে এক কোটি টাকার নিচে কোথাও জমি নাই। চট্টগ্রাম শহরেও নাই। সুতরাং এই হিসাব দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কোনো সুযোগ নাই। তাদের এই হিসাব ধরে যদি কোটিপতি গোনা হয় তাহলে সেই হিসাবে গরমিল আছে এবং সেটা উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।
মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘নির্বাচনী হলফনামার তথ্যচিত্র: জনগণকে কী বার্তা দিচ্ছে?’ শীর্ষক এক বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়। টিআইবি বলছে, এবার সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যবসায়ী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। দ্বাদশ নির্বাচনে মোট প্রার্থীর ২৭ শতাংই কোটিপতি। একশ কোটির ওপরে সম্পদের মালিক ১৮ জন। টিআইবির ওই সংবাদ সম্মেলনের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংস্থাটিকে বিএনপির শাখা সংগঠন হিসাবে আখ্যা দেন।
এদিকে সাংবাদিকদের বুধবার তথ্যমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির খুব বড় গলা ছিলো, প্রচুর প্রেস কনফারেন্স করেছে, বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছে। পরে দেখা গেলো যে, পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি তো হয়ই নাই, দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগও সৃষ্টি হয় নাই কারণ টাকা ছাড়া দুর্নীতি হয় কীভাবে! তারা নানা সময়ে নানা গবেষণা করে, পরে দেখা যায় সেগুলো আসলে গবেষণা নয়, কতগুলো রিপোর্ট। নিজেদের ইচ্ছামতো বা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়।’
রিজভীর জনগণ ও বিদেশিরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান এর জবাব-
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর ‘জনগণ ও বিদেশিরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে’ মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা হাছান মাহমুদ বলেন, সারাদেশে এখন নির্বাচনী উৎসাহ-উদ্দীপনা। আর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে। নির্বাচন যদি প্রত্যাখ্যান করতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা অবজারভার পাঠাতো না, ওআইসি, সার্কভুক্ত দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশ অবজারভার পাঠাতো না। তাদের ভোটে আগ্রহ আছে এবং এই নির্বাচনকে গ্রহণ করেছে বিধায় তারা অবজারভার পাঠাচ্ছে। রুহুল কবির রিজভীসহ গুটিকয়েক নেতা হয়তো নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের কর্মী-সমর্থকরাও সবাই প্রত্যাখ্যান করে নাই, তাদের সমর্থকরা ভোট দিতে যাবে।
‘আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে দেশ ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাবে’ রিজভীর এমন মন্তব্য সম্পর্কে হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে। ভারতের কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু আদায় করেছি। ১৯৭৪ সালে ভারতের সাথে আমাদের ছিটমহল বিনিময়ের চুক্তি হয়েছিলো, সেটি কার্যকর ছিলো না, সেটি শেখ হাসিনা কার্যকর করেছেন। আমরা আন্তর্জাতিক শালিসী আদালতে মামলা করে ভারতের কাছ থেকে বিপুল সমুদ্রসীমা আদায় করেছি। সমুদ্রে বাংলাদেশের প্রায় সমপরিমাণ একটি অঞ্চল আমাদের অধিকারে এসেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ভারতের সাথে সীমান্তচুক্তি বাস্তবায়ন হয়েছে। সীমান্তে লক্ষ লক্ষ মানুষের কোনো পরিচয় ছিলো না, তারা এখন পরিচয় পেয়েছে। শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভবপর হয়েছে। সমগ্র ভারতে এখন বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখা যায়। এভাবে বহুকিছু অর্জন হয়েছে। অঙ্গরাজ্য হলে তো বহু আগে হয়ে যেতো। উনারা ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলো যে আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় গিয়েছিলো কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। বরং ভারতের কাছ থেকে আমরা কূটনৈতিকভাবে এবং সুসম্পর্কের মাধ্যমে বহুকিছু আদায় করেছি। অর্থাৎ এই সমস্ত দাওয়াই উনারা আগে ব্যবহার করেছিলেন তখন কিছুটা কাজ করতো এখন আর এই দাওয়াই কাজ করে না।’
এ দিন মতবিনিময়ের শুরুতে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগের সদ্যঘোষিত ইশতেহার নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশ করেছেন। এবার আমাদের শ্লোগান হচ্ছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। বরাবরের মতো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যেমন ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে, জনগণ যদি আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে, আমরা সরকার গঠন করতে পারি, এবারে ইশতেহারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হবে।