কেমন বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধু- শিশুদের জানালেন শেখ রেহানা
এস রহমান : কেমন বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধু- শিশুদের সেটাই জানালেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা জাতির জনকের মতো মহান ব্যক্তিত্বদের সম্পর্কে জানতে শিশুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এর মাধ্যমে কীভাবে অন্যের উপকার করতে হয়, মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয় এবং অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে হয়—শিশুরা তা জানতে পারবে। শিশুরা তাদের বাবা-মা ও বন্ধুদেরও সাহায্য করতে শিখবে।
শুক্রবার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন উপলক্ষে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ রেহানা এসব কথা বলেন। শিশু-কিশোরদের কাছে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরার লক্ষ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও তার ছেলে রেদোয়ান মুজিব সিদ্দিক উপস্থিত হন। পরে আগত শিশু-কিশোরদের সঙ্গে বসে শেখ রেহানা তার বাবা বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন।
শিশুদের শেখ রেহানা জানান, তিনি যখন ছোট, দেশের জন্য লড়ার কারণে তার বাবা তখন বেশিরভাগ সময় জেলেই থাকতেন। বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার সৌভাগ্য তার হয়নি। বেশিরভাগ সময় একাই যেতেন, না হয় তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা তাকে স্কুলে নিয়ে যেতেন।
তিনি বলেন, ‘বাবা বাসায় থাকলে তার সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার বায়না ধরতাম। তাই বঙ্গবন্ধু অফিস থেকে ফেরার সময় আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসতেন। এ সময় ঈদের আনন্দের মতো আনন্দ হতো।’
ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িতে তাদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাও তুলে ধরেন শেখ রেহানা। তিনি জানান, তার বয়স যখন ৩-৪ বছর, তখন তারা এই বাড়িতে এসে ওঠেন। বাড়ির উঠানে বাস্কেটবল খেলতেন। বাসায় পরিবারের সবাই মিলে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। বিভিন্ন রকমের ফুলে ভরে থাকত বাড়ির বাগান ও বারান্দা। সকালে খবরের কাগজ পড়ে, স্কুলে যাওয়ার আগে ফুল কুড়িয়ে মালা বানাতেন।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা রেহানা বলেন, ‘বাবা সকালে পুরো ধানমণ্ডি এলাকায় হাঁটতেন। আমি আর ভাইয়েরা শুধু ৩২ নম্বর সড়কেই তার সঙ্গে হাঁটতাম। ওনাকে তো আমরা সবসময় কাছে পেতাম না। তাই যখনই তিনি বাড়িতে থাকতেন, বাচ্চারা সবাই তার সঙ্গে খেলত। তার কারাগারে থাকার গল্প শুনত, তার হাতে ভাত খেত।’
শিশু-কিশোরদের কাছে শেখ রেহানা জানতে চান, তারা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শুনেছে কি-না। এরপর বাচ্চারা সবাই শেখ রেহানার সঙ্গে উচ্চারণ করে—’এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধু কোথায় জন্মেছিলেন ও তার বাবা-মায়ের নাম কী—শেখ রেহানার করা এ দুটি প্রশ্নেরও সঠিক জবাব দেয় শিশুরা।
বাবা কেমন শাসন করতেন—এক শিশুর এমন প্রশ্নে শেখ রেহানা বলেন, ‘মারধর তো দূরের কথা, কখনও বকাও দিতেন না। শুধু এমনভাবে তাকাতেন যে, আমরা বুঝে ফেলতাম কোনো ভুল করে ফেলেছি। বঙ্গবন্ধু শিশুদের অনেক ভালোবাসতেন। বাবার চেয়ে মা-ই বেশি শাসন করতেন।’
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা জানান, তাদের পড়াশোনায় বঙ্গবন্ধুর ছিল কড়া নজর। সবার পড়ালেখার খোঁজখবর রাখতেন তিনি। যখনই সুযোগ পেতেন, ছেলেমেয়েদের বাংলা-ইংরেজি লেখার দক্ষতা, অঙ্কের দক্ষতার পরীক্ষা নিতেন। তখন তিনি (শেখ রেহানা) ও তার ভাইবোনরা খুব ভয়ে থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা যখনই বাসায় আসতেন, যত রাতই হোক, তিনি নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিতেন। ছোটবেলায় খেতে চাইতাম না, ঘুমের ভান করে পড়ে থাকতাম। কিন্তু বাবা সবসময়ই বুঝতে পারতেন যে ঘুমের ভান করছি।’
শেখ রেহানা বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে অন্য বাচ্চারা যখন বাবার সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে কেনাকাটার গল্প করত, তখন আমার অনেক মন খারাপ হতো। একবার ঈদের সময় বাবা বাড়িতে ছিলেন, তখন তাকে আমি জোর করে নিউমার্কেটে নিয়ে যাই। এখনকার মতো শপিং মল তখন ছিল না, নিউমার্কেটই ছিল কেনাকাটার সবচেয়ে বড় জায়গা। বঙ্গবন্ধু আমাকে নিউমার্কেটে নিয়ে যান আর একটি জামা ও আইসক্রিম কিনে দেন। সেদিন সন্ধ্যায় আমরা সব ভাইবোন খুশিতে আত্মহারা ছিলাম।’