• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

কেউ কথা রাখেনি-গরুর মাংস ৮শ ব্রয়লার আড়াইশ


প্রকাশিত: ১০:৫১ পিএম, ৯ এপ্রিল ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭২ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : কেউ কথা রাখেনি- বাজারের চড়া দাম কেউ কমাতে পারেনি। গরুর মাংস আর মুরুগির দাম লাফিয়ে বেড়েছে। গরু ৮শ’ ব্রয়লার আড়াই”শ টাকা। কোথাও কোথাও আরো বেশি। ফলে ঈদুল ফিতরের বাজারে চলছে অস্বস্তি। লাগামছাড়া হয়ে উঠেছে মাংসের বাজার। বেড়েছে সব ধরনের মাংসের দাম।

ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়েছে, বেড়েছে সোনালি মুরগির দামও। ব্রাজিল থেকে মাংস ও গরু আমদানির আলোচনা সামনে আসায় কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় আটকে গেছে গরুর মাংসের দাম। খাসির মাংস কোথাও কোথাও কেজিপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।

রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী বাজার, পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, হাতিরপুল বাজার, মগবাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের আগে মাংসের বাজার বেশ চড়ে গেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম পড়ছে ২৫০ থেকে ২৬০ টাকা; দেড় সপ্তাহ আগে যা ছিল ২১০ থেকে ২২০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম এক সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিপ্রতি আরও ২০ টাকার মতো বেড়েছে; এখন যা কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গরুর মাংসের দাম আরও সপ্তাহখানেক আগেই কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় উঠেছিল। নতুন করে ব্যবসায়ীরা দাম না বাড়ালেও আগে কোথাও কোথাও ৫০ টাকা কমেও মাংস পাওয়া যাচ্ছিল, কিন্তু এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। শুধু কারওয়ান বাজারের বিক্রেতারা ২০ টাকা কমে ৭৮০ টাকায় মাংস বিক্রি করছেন। বাজারে খাসির মাংসের দামও বাড়তি। ভালো মানের মাংসের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা; মানে একটু ছাড় দিলে ১ হাজার ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অনেকেই বলছেন, গরুর মাংসের চাহিদা যেভাবে বেড়েছে, তাতে দাম আরেকটু বাড়ত, কিন্তু সরকার ব্রাজিল থেকে কম দামে মাংস আমদানি করতে পারে—এমন আলোচনা ব্যবসায়ীদের মনে ভয় ধরিয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশে গরুর মাংস রপ্তানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকার দেশটি প্রতি কেজি গরুর মাংস সাড়ে চার মার্কিন ডলারে (৪৯৫ টাকা) বাংলাদেশকে দিতে চায় বলে সম্প্রতি ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার সফরে আলোচনায় আসে।

রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী বাজারের মোল্লা গোস্ত বিতানের বিক্রেতা আলম হোসেন বলেন, কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি আকারের গরু জবাই দিয়ে ভালো মাংস বিক্রি করতে গেলে এর চেয়ে কম দামে বিক্রি সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদ উৎসবের সময় মাংসের চাহিদা বেড়ে যায়; এই বাড়তি চাহিদা পুঁজি করে মাংসের দাম দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে বাজারে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মাংসের দাম বেড়েছে। ঈদ উপলক্ষে খামারিরা গরুর দাম বাড়িয়েছেন, তাতে মাংসের দাম বেশি পড়ছে। অনেকে বলছেন, বেচাকেনা বেশি পরিমাণে না হলে কেজিপ্রতি ৮০০ টাকায় মাংস বিক্রি করেও টিকে থাকা কষ্ট হবে।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজার দাবি, বাজারে সব জিনিসের যে দাম, সেই হিসাব করলে গরুর মাংসের দাম ঠিক আছে। অনেক মাছের দামও এখন কেজিপ্রতি ৮০০ টাকার ওপরে। মাছ কাটলে আবার উচ্ছিষ্ট চলে যায়; কিন্তু এসব নিয়ে আলোচনা হয় না। গরুর মাংসের দাম একটু বাড়ালে তার প্রতিক্রিয়া বেশি হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আগামী ঈদুল আজহায় ব্রাজিল থেকে গরু আনতে চায় বাংলাদেশ। গত রোববার ঢাকা সফররত ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েরার কাছে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহসানুল ইসলাম বলেন, আলোচনায় ব্রাজিলের পক্ষ থেকে অ্যানিমেল প্রোটিনে (প্রাণিজ আমিষ) গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ব্রাজিল অত্যন্ত কম দামে মাংস রপ্তানি করে; সে বিষয়ে তারা কথা বলেছে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল গড়ে ৩০০ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল সোমবারের হিসাবে, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় এখন গরুর মাংসের দাম এখন ১৫০ শতাংশের বেশি।