কুকি চিনের গোপন ট্রেনিং-ফাঁস করল আকিম বম
বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে-বিদেশে কুকি-চিন আর্মির সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং বান্দরবান সদর ও রোয়াংছড়ি জোনের নারী শাখার অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক আকিম বমসহ দুই জনকে লাইমী পাড়া থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৫। শুক্রবার (১৭ মে) সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দেন র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন।তিনি বলেন, র্যাব-১৫ বান্দরবান ক্যাম্পের আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার ভোর ৬টার সময় বান্দরবান লাইমী পাড়া থেকে সিয়াম থং বমের মেয়ে আকিম বম ও মৃত থন থাম বমের ছেলে লাল সিয়াম লম বমকে (৬০) গ্রেফতার করে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকিম বম জানান, ২০২৩ সালে কাল্পা কেউক্রাডং এলাকার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে অধ্যয়ন করেন। তখন মাইকেল নামে একটি ছেলের সঙ্গে পরিচয় ও পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রেমিক মাইকেলের মাধ্যমেই কেএনএফের ট্রেনিংয়ে যান। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শুরু দিকে আকিম ও মাইকেল সন্ধ্যা বেলায় পায়ে হেঁটে কেএনএফের ট্রেনিং সেন্টারের উদ্দেশে রওনা করেন এবং পর দিন ভোর ৫টার দিকে রোয়াংছড়ির গহীন পাহাড়ি জঙ্গলের ট্রেনিং সেন্টারে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছানোর পর ভান থার ময় বম নামে কেএনএফের এক নারী কমান্ডারের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং ট্রেনিং সেন্টারে তাদেরকে স্বাগত জানান।
তার ভাষ্যমতে, সেখানে অনেক মেয়ে ছিলেন। তবে তাদের বেশিরভাগই মুখে কালি মাখা থাকতো। যার কারণে অনেকেই অপরিচিত। এ কালি প্রতি সাত দিন পরপর পরিবর্তন করতো। ট্রেনিং সেন্টারের নাম ছিল কেডিওন (ঈশ্বরের দিকে)। আকিম বমসহ তাদের ব্যাচে ২০ প্রশিক্ষণার্থী ছিল। তাদের প্রশিক্ষণ দিতো ৪-৫ জন এবং প্রশাসনিক কাজের জন্য আলাদা সদস্য নিয়োজিত ছিল।
ট্রেনিংয়ের বিষয়ে আকিম জানান, প্রাথমিকভাবে ভোর ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে ট্রেনিং শুরু হতো। প্রশিক্ষণ হিসেবে শারীরিক প্রশিক্ষণ বিশেষ করে মার্শাল আর্ট ট্রেনিং গ্রহণ করতেন। কষ্ট সহ্য করার জন্য তাদের বেত দিয়ে আঘাত করা হতো। এ ছাড়া লাঠি দিয়েও আঘাত ও টর্চার করা হতো যাতে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতিতে টিকে থাকতে পারে। আর এ প্রশিক্ষণে প্রধানত তাদের জঙ্গলে পাহাড়ি এলাকায় নিজেদের কীভাবে লুকিয়ে রাখতে হয় সেটা শেখানো হতো। এ ছাড়াও জঙ্গলে বৈরী পরিবেশে কীভাবে টিকে থাকতে হয় সে প্রশিক্ষণও দিতো।
এসব প্রশিক্ষণ সকাল ১০টা পর্যন্ত চলমান থাকতো। প্রশিক্ষণ চলাকালে সাধারণ খাবারের পাশাপাশি তারা বনের পাখি, কাঠবিড়ালি শিকার করেও রান্না করে খেত। তার ট্রেনিংয়ের সময় মেয়েদের একদলে ৫০ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। প্রায় তিন শতাধিক পুরুষ সদস্যও প্রশিক্ষণে ছিল। রুমা এলাকায় আরও দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ প্রশিক্ষণরত ছিল বলেও জানান।