বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: এবার ভোট-ছাত্রলীগের নের্তৃত্ব পেতে লড়াই হবে দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর । ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, এমন যেকোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে ছাত্রলীগের আগামী নেতৃত্ব নির্বাচনের নির্দেশ দেন।
আজ শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ২৮তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ নির্দেশ দেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধান শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগ করার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ২৯ বছর রাখারও ঘোষণা দেন তিনি। প্রায় ৪৩ মিনিটের বক্তব্যে শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন অবদান ও সাহসের কথা তুলে ধরেন।
ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আজ উদ্বোধন হয়েছে। ২৮তম এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান। সম্মেলনের শুরুতে শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। কাউন্সিল অধিবেশন হবে কাল রোববার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে। সেখানেই শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটে নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘এই উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন হলো ছাত্রলীগ। এই সংগঠনের ভাবমূর্তি যেন কোনোভাবেই ক্ষুণ্ন না হয়। একমাত্রই এই সংগঠনই সঠিকভাবে একটি সংগঠন হিসেবে পরিচালিত হয়। যদিও অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তারপরেও এই সংগঠনের ঐতিহ্য ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, যারা এর নেতৃত্বে ছিল।’ ছাত্রলীগের সম্মেলন দুই বছর দেরি হওয়ার কারণ হিসেবে ২০১৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালে ওই নির্বাচনের এক বছর পূর্তিতে রাজনৈতিক অস্থিরতাকে দায়ী করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের একটি বয়স সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছিলাম। ২৭ বছর। নিয়মিত শিক্ষার্থী যারা, তারাই নেতৃত্বে আসবে। যেহেতু দুই বছর নষ্ট হয়ে গেছে। তাই গ্রেস পিরিয়ড তো দিতে হয়, ২৮ বছরে সেটা পূরণ হবে না। কাজেই সেটা এখন ২৯ বছর হয়ে গেল। ২৯ বছরের মধ্যেই থাকতে হবে।’
ছাত্রলীগের সম্মেলনে নির্বাচনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ভুলে গেলে চলবে না, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে নির্বাচন ছাত্রলীগের কনফারেন্সের মধ্য দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। এখন জাতীয় নির্বাচনেও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার হচ্ছে। এটা প্রথম শুরু করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ভোটে নির্বাচিত হবে। এটা কেউ ঠিক করে দেবে না। যারা কাউন্সিলার, তারা যাকে চাইবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে। গণতান্ত্রিক ধারা যেটা ছাত্রলীগ শুরু সূচনা করেছে, সেটা অব্যাহত থাকবে। শুধু এটাই বলব—নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ছাত্রলীগের ইতিহাস, ঐতিহ্যকে সামনে রেখে নেতৃত্ব দিতে পারে, মেধাবী এবং নিয়মিত ছাত্রছাত্রী যেন নির্বাচিত হতে পারে, এই বিষয়গুলোতে নজর রাখার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।’
ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র—শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির আদর্শ নিয়ে সংগঠনের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। তিনি তাঁর ভাষণে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করেন। তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে ছাত্রলীগ বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। রক্ত দিয়েছে।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পড়ালেখায় মনোযোগী হতে উপদেশ দেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ছাত্রলীগের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগে আজকে যাঁরা নেতৃত্বে, তাঁরাই দেশের চালিকাশক্তি হবেন। ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আদর্শ নিয়ে কাজ করতে হবে। আদর্শহীন সংগঠন ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা করতে পারে। দলীয় স্বার্থ রক্ষা করতে পারে না, দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। এই সংগঠনের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত। কোনোভাবেই যাতে এই সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো ছাত্রসংগঠন আছে যা ছাত্রলীগের সঙ্গে তুলনীয়? নেই বললেই চলে।’ তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, ছাত্রলীগ আরও এগিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ছাত্রদের রাজনীতির প্রয়োজন আছে। প্রয়োজন থাকবে।’ আগামী দিনে নির্বাচনে হোক বা আন্দোলনে হোক, ছাত্রলীগ আগের মতোই ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চেঞ্জমেকার হবেন কারা? চেঞ্জমেকার হবে ছাত্রলীগ।’ তিনি বলেন, দেশকে বদলাতে হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের উপযোগী হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। মন্ত্রী বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাদের আমি বলব, শুধু বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ুন। তাহলে রাজনীতি কিংবা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে শিখতে হবে না। মুজিব পরিবারকে জানুন। তাহলে সবকিছু শিখতে পারবেন।’
ছাত্রলীগের সম্মেলনের জন্য গঠিত নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনের শীর্ষ দুই পদের জন্য মোট ২৪২ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ৩৪ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এখন বৈধ সভাপতি প্রার্থী ৬৪ জন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ১৪২ জন রয়েছেন।