• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কারবালার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ১৫ আগস্টে


প্রকাশিত: ১২:২২ এএম, ১৪ আগস্ট ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৯ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারবালায় নারী, শিশুদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা, আমার ভাইয়ের স্ত্রীদের ছাড়েনি। চার বছরের শিশুকেও ছাড়েনি। সবাইকে হত্যা করা হয়।জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনাকে ইসলামের ইতিহাসের কারবালার বেদনাবিধূর ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ও সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ তুলনা করেন।অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান হাজিদের কষ্ট লাঘবে মক্কায় একটি স্থায়ী হজ অফিস করার ঘোষণা দেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারবালায় নারী, শিশুদের হত্যা করা হয়নি, কিন্তু ১৫ আগস্ট ঘাতকরা আমার মা, আমার ভাইয়ের স্ত্রীদের ছাড়েনি। চার বছরের শিশুকেও ছাড়েনি। সবাইকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, সেই রাতে আমি ও আমার ছোট বোন দেশের বাইরে ছিলাম। স্বজনহারা আর্তনাদ আর ঘরবাড়ি ছাড়া ছয়টি বছর আমাদের কাটাতে হয়েছে। ১৯৮১ সালে আমরা দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরে আমি সেই চেনা মুখগুলো পাইনি, যারা আমাকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়েছিল।আমি পেয়েছিলাম বনানীতে সারি সারি কবর। পেয়েছি বাংলাদেশের মানুষ। কাজেই সে মানুষগুলো আমার পরিবার, তারাই আমার আপনজন। তাদের মাঝেই ফিরে পেয়েছি আমার বাবার ভালোবাসা, মায়ের স্নেহ।

সরকারপ্রধান বলেন, আমি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, আস্থা, বিশ্বাস পেয়েছি, যা আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছে, শক্তি জুগিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে। বারবার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছি, কিন্তু আমি কোনোদিন ভয় পাইনি।কেন যেন মনে হতো আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করার জন্য। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে কিছু সময় দেন, কিছু মানুষকে কিছু কাজ দেন। এই কাজটা আমি যতক্ষণ না পর্যন্ত শেষ করব, রাব্বুল আলামিন আমাকে রক্ষা করবেন। এ বিশ্বাস নিয়ে আমার পথ চলা।

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশ উল্টো দিকে চলতে থাকে। দেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেয়ার অপচেষ্টা করা হয়। গণতন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যায়। এ দেশের মানুষের জীবনে নেমে আসে দুর্যোগের ঘনঘটা। তখন আমি বিদেশে আশ্রিত ছিলাম। এ দেশের দুঃখী মানুষের পেটে দুবেলা ভাত দেয়ার সংকল্প নিয়ে দেশে ফেরার পরিকল্পনা করি। যেন মানুষ খেতে পায়, শিক্ষা পায়, বাসস্থান পায়, এসব চিন্তা নিয়েই দেশে ফিরে আসি।

সেভাবে কাজ শুরু করি। দেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে মানুষের দুর্দশা দেখেছি। আর সেসব থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে পরিকল্পনা করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার সেসব চিন্তা মাথায় রেখেই এখন কাজ করে যাচ্ছে।সরকারপ্রধান বলেন, সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে কয়েকবার হজ করেছি, কিন্তু গিয়ে বাংলাদেশি হাজিদের দুঃখ-কষ্ট দেখে কষ্ট পেয়েছি। সে উপলব্ধি থেকে সরকারে আসার পর মক্কায় হজ অফিস করে দিয়েছি, যাতে সেখান থেকে হাজিদের সাহায্য সহযোগিতা করা যায়।

তিনি আরও বলেন, সৌদি সরকারের কাছে একটি স্থায়ী জায়গা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সেটা পেলে স্থায়ী অফিস করা হবে।প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সরকার ও তার সরকারের ইসলামের উন্নয়নে পদক্ষেপ তুলে ধরেন।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু দ্রুত বাংলাদেশকে ওআইসির সদস্য করেন। আরব ইসরাইল যুদ্ধে আরবদের পক্ষ নেন। আইন করে জুয়া নিষিদ্ধ করেন।প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারে আসার পর ইসলামের প্রসারে ব্যাপক পদক্ষেপ নিই।

এ প্রসঙ্গে তিনি মডেল মসজিদ স্থাপনের উদাহরণ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে জেলা, উপজেলা পর্যায়ে মডেল মসজিদ করা হয়েছে, যেটা হবে একটা পরিপূর্ণ ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ইসলামী লাইব্রেরি থাকবে। হজ ও ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।এ ছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অফিস স্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ নিরসনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, শ্রেষ্ঠ ধর্ম। ধর্মের নামে মানুষ হত্যার কোনো সুযোগ নেই। কোমলমতি ছেলে-মেয়েদের প্ররোচিত করে এসবে জড়ানো হচ্ছে। তাই সবাইকে সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, কোথায় যাচ্ছে, কী করছে দৃষ্টি রাখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন আমরা প্রথম ক্ষমতায় আসি, তখনই বায়তুল মোকাররমের একটি মিনার ও মসজিদের উন্নয়নের কাজের পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। সে কাজও শুরু করেছিলাম। দুর্ভাগ্যের বিষয় ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসতে পারেনি। এসেছিল খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে ছিল জামায়াত।খালেদা জিয়া এসেই মসজিদ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। শুধু বায়তুল মোকাররম নয়, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেও বড় একটি মসজিদের কাজে হাত দিয়েছিলাম। এটার কাজও বন্ধ করে দেয়। তারপর সরকারে আসার পর সেই বায়তুল মোকাররমের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করি।