কারণ আছে-খবর আছে-আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হারলে..
বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা: রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারনে বিপর্যয় ঘটনায় তা থেকেই শিক্ষা নিয়ে তিন সিটিতে ভুল শুধরে জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। সেকারনে তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হারলে-খবর আছে। কারণ-এই তিন সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য, মন্ত্রী এবং নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলীয় নেতা ও মন্ত্রীরাই আতঙ্কে সবচে’ বেশি। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী না হলে তারা প্রধানমন্ত্রীর রোষানলে পড়ার শঙ্কায় ভুগছেন। কেউ কেউ ভুগছেন পদ ও পদবি হারানোর ভয়ে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ফল খারাপ হলে মন্ত্রিত্ব হারাতে পারেন কেউ কেউ। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বাদ দিয়ে আ জ ম নাছিরকে প্রার্থী করার পেছনে সবচে’ অগ্রণী ভুমিকা ছিল দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, গৃহায়ন ও গণপুর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের। মহিউদ্দিন চৌধুরীকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান করা হলেও নির্বাচনী কাজের সবকিছুই চলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে। আইনগত বাধ্যবাধকতার কারনে নির্বাচনী প্রচারণায় না নামলেও চট্টগ্রামে অবস্থান করে সবকাজই করছেন তিনি। দলের কর্মীসভায় ‘যেকোনোভাবেই নাছিরকে জেতাতে হবে’ বলে বিতর্কিত হয়েছিলেন তিনি।
ভুমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদও নাছিরের মনোনয়নের জন্য অগ্রণী ভুমিকায় ছিলেন। সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীও আ জ ম নাছিরের জন্য গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী সংসদ সদস্যদের অনেকেই নির্বাচনে সেভাবে কাজ করছেন না। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হারলে এসব সংসদ সদস্যের যেমন ‘খবর আছে’ তেমনি মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরাও পড়বেন বিপাকে।
ঢাকার দুই অংশের মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত সংসদ সদস্য খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ওই সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন বিরোধী লোক হিসেবে পরিচিত। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও পরিচিত খোকন বিরোধী হিসেবে। নির্বাচনে তাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা কাজ করছেন না এমন অভিযোগ ছিল আগে থেকেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল সংসদ সদস্যকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেয়ার পরেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
উত্তর সিটি করপোরেশনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন এমন সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার, একেএম রহমউল্লাহসহ অনেকের কাজই দৃশ্যমান নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরে মিরপুরে ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা জোরে-সোরে মাঠে নামলেও অন্যদের দেখা যাচ্ছে না তেমন। ওই অংশে স্বরাস্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কর্মী সমর্থকদের ভুমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সাবের হোসেন চৌধুরীর কর্মীদেরও ভুমিকা মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে জোরালে নয়। নির্বাচনের ফল বিরূপ হলে এসব মন্ত্রী সংসদ সদস্যদের পদ-পদবি নিয়ে সমস্যা হতে পারে।
বিগত রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারনে বিপর্যয় ঘটনায় তা থেকেই শিক্ষা নিয়ে তিন সিটিতে ভুল শুধরে জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে আওয়ামী লীগ। আর এ কারনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ঢাকা ও চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। যাতে থানা পর্যায়ের নেতারাও ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দিলেও শেষ সময়ে এসেও অনেকের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের ফলাফল খারাপ হলে এসব নেতাদের উপর এর প্রভাব পড়তে পারে। ভবিষ্যতে মন্ত্রিসভায় রাখা না রাখা কিংবা দলীয় পদ পদবীর ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনা করা হবে।