কামলা থেকে পেসার মারুফা
লাবণ্য চৌধুরী : বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজ এর ফাইনালে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ ‘টাই’ হয়ে যাওয়ার পর যে ক’জন নারী ক্রিকেটার এর নাম ছড়িয়ে পড়েছে মারুফা আক্তার তাদের অন্যতম। নিজেদের ক্ষেতে একসময় কামলার কাজও করেছেন তিনি। সেই মারুফা এখন পেসার মারুফা।বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের নয়া আইকন।
বাংলাদেশ-ভারত ওয়ানডে সিরিজ ম্যাচে বল হাতে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন মারুফা আক্তার। নিজের করা প্রথম ও ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই স্মৃতি মান্ধানার ব্যাটের কানা খুঁজে নিয়েছিলেন। কিন্তু উইকেটকিপার নিগার সুলতানা সহজ ক্যাচটা ধরতে পারেননি। সেই ওভারেই অবশ্য আরেক ওপেনার শেফালি বর্মাকে আউট করেন মারুফা। ফুল লেংথের বলে সোজা খেলতে গিয়ে মারুফার হাতে ক্যাচ তোলেন শেফালি (৪)। দারুণ দক্ষতায় ফিরতি ক্যাচটা নিয়েছেন মারুফা।
এই সেই মারুফা যিনি ফুটবলার থেকে হয়েছেন পেসার। এখন লাল সবুজ জার্সিতে মাঠ মাতাচ্ছেন নীলফামারীর মারুফা আক্তার। এ ক্রিকেটার পরিণত হয়েছেন হাজার তরুণীর আইকনে। এখনও অবসরে বাবার সাথে কৃষি কাজটা উপভোগ করেন তিনি। যদিও তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথটা সুগম ছিল না। প্রতিবেশীদের তাচ্ছিল্য সহ্য করেই সৈয়দপুর ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি থেকে ভর্তি হন বিকেএসপিতে। ৩০-৩৫ জন ছেলের সাথে একমাত্র মেয়ে হিসেবে করেছিলেন ব্যাট-বলের অনুশীলন।
বাংলাদেশের গণ্ডি ছাপিয়ে মারুফা আক্তার এখন নারী ক্রিকেটের পরিচিত মুখ। ভারতীয় ব্যাটার স্মৃতি মান্ধানা যার মধ্যে আলাদা বারুদ দেখেছিলেন। সেই মারুফার জন্ম ২০০৫’এর ১ জানুয়ারি, নীলফামারী সদরের সংগলশী ইউনিয়নের কাদিখোল এলাকায়। চার-ভাই বোনের সবার ছোট মারুফা।
জাতীয় দল র্পযন্ত পৌঁছতে পার করতে হয়েছে নানান চড়াই উতরাই। জীবন যুদ্ধে স্কুলের মত সময় দিতে হয়েছে সংসারে। বড় ভাইয়ের অনুরোধে সৈয়দপুরের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে যাওয়া। সেখানে প্রায় ৩০-৩৫ জন ছেলের সাথে একমাত্র নারী হিসেবে করতেন অনুশীলন। কোচ মো. ইমরান হাসানের চোখে স্বপ্ন– একদিন জাতীয় দলের নেতৃত্ব মারুফা আক্তারের কাঁধে উঠবে।
বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার স্বপ্ন দেখেন একদিন আইপিএল-বিগব্যাশের মত ফ্রাঞ্জাইজি লিগ থেকে তার ডাক আসবে। ২২ গজে তার গতির ঝড়ই হয়তো খুলে দেবে সেই দরজা। ফসলের মাঠ থেকে যেভাবে আজকের লাল সবুজের মারুফা হয়েছেন, তাতে তিনি এখনই পরিণত হয়েছেন একজন আইকন হিসেবে, হাজার তরুণীর যুদ্ধজয়ে।