• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ওয়ান-ইলেভেনের মত বিএনপি টার্গেট হচ্ছে: ফখরুল


প্রকাশিত: ৯:২৩ পিএম, ২৯ আগস্ট ২৪ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪০ বার

 

 

স্টাফ রিপোর্টার : ওয়ান-ইলেভেনের মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে দেশকে বিরাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, তাঁরা এখনো এক-এগারোর কথা ভুলে যাননি। তাই আবার যখন ওই চেহারাগুলো সামনে আসে, তখন যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক হয়, প্রশ্ন এসে যায়। একই সঙ্গে নির্বাচন প্রশ্নে অতিদ্রুত সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।গতকাল দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জামায়াতের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন ও দখল নিয়ে বিএনপিকে লক্ষ্যবস্তু করে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। আবারও এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে বিরাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা থেকে এ কাজগুলো করা হচ্ছে। ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত এক-এগারো সরকারের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা তো ভুলে যাইনি এক-এগারোর সময় কারা চেষ্টা করেছিল বিরাজনৈতিকীকরণের। এমনকি ওই সময় আমাদের দলকে পর্যন্ত পুরোপুরি বাতিল, নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টাও হয়েছিল। এ কথাগুলো তো আমরা ভুলতে পারি না। আমার গণতন্ত্রের জন্য, আমার রাজনীতির জন্য, আমার দেশের কল্যাণের জন্য এ কথাগুলো আমার মনে রাখতে হবে।

বর্তমান সরকারের মধ্যে বিরাজনৈতিকীকরণের কোনো লক্ষণ দেখছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, এমন লক্ষণ দেখছি না। আমি সতর্ক করছি। কিছু চেহারা আছে তো? এ চেহারাগুলো দেখলে আমরা ভয় পাই।’তিনি বলেন, ‘যাঁদের কোনো দিন দেখা যায়নি, তাঁরা সামনে চলে আসছেন।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘হঠাৎ করে ওই ব্যক্তিগুলো মিডিয়ায় সামনের পেজে চলে আসছেন।তাঁদের বক্তব্য, থিওরি প্রচার করছেন। আমি কারো নাম বলতে চাই না। আমার মনে হয়, এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ভালো বিষয় নয়।’

দুই দিন আগে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান দলীয় এক কর্মসূচিতে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবি এবং দখলদারির বিষয়ে কথা বলেন। ওই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি, এটা সুপরিকল্পিত একটা চক্রান্ত। কারণ আমরা তো এক-এগারোর কথা ভুলে যাইনি। যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে; তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের অধিকার। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এত দিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি।’

জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি হয়, এমন বক্তব্য না দিতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান বিএনপির মহাসচিব।জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাতিল করা হলো, তার জন্য ওই দলগুলো মিলেই তো আমরা আন্দোলন করেছি। ওই দলগুলোর অনেককে আন্দোলনে অনেক নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। এমনকি তাদের অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ওই আন্দোলনকে, ওই বিষয়কে বাদ দিয়ে আমি তো অন্য রাজনৈতিক চিন্তা এই মুহূর্তে করব না।’
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে একটি আন্দোলন-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে। অবশ্যই এই সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে হবে। তার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করে যাচ্ছি, করব, যত দিন সরকার সঠিক পথে থাকবে।’

কারো নাম উল্লেখ না করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি যদি মনে করি, একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে; আমার ওই চিন্তা সঠিক হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কিভাবে চলবে। সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি, সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা বলেছে বিএনপি। সেই যৌক্তিক সময় কতটা, জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ জন্যই আলোচনা দরকার। যৌক্তিক সময়ের ধারণা নির্ভর করবে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে। আমরা কী চাই, উনারা কী চান, জনগণ কী চায়, একটা আলাপ-আলোচনা তো হতে হবে। সে জন্য বলেছি, বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অতিদ্রুত আলোচনা হওয়া দরকার। খুব জোর দিয়ে বলেছি, আজকেও বলছি। নইলে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়।’

সরকার জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করার আদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে, এ নিয়ে একজন সাংবাদিক প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নই, সে যে দলই হোক। আমাদের সংবিধানে যেকোনো ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সংগঠন করার। কিন্তু স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে। আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতাই বিশ্বাস করে না, সে ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না। কিন্তু আমরা মনে করি, মানুষের অধিকার আছে একটা সংগঠন তৈরি করার, রাজনীতি করার।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অর্জিত বিপ্লব নস্যাৎ করার জন্য এবং বিএনপির অবদান খাটো করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এই বিপ্লব ব্যর্থ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্র আছে। আপনারা দেখবেন, বিদেশ থেকে, বিশেষ করে ভারত থেকে এমন কতগুলো প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশে যে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে সেটা তারা নস্যাৎ করতে চায়। কতগুলো রাজনৈতিক ইস্যুকে তারা সাম্প্রদায়িক ইস্যু বানাতে চায়, যেটা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

বিএনপির মহাসচিব আরো বলেন, ‘প্রথম দিকে তারা যে সংখ্যালঘু নির্যাতনে প্রচার চালিয়েছিল, এর বোধ হয় ১-২ পারসেন্টও সঠিক নয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, দখলদারি। এগুলো কিন্তু অপপ্রচার। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, আবার আগের মতো এক-এগারোর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত অন্যায়। আমরা ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকারের জন্য। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে নির্বাচিত সংসদ ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।