• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

‘এ শট ইন দ্য আর্ম ফর হাসিনা’


প্রকাশিত: ৬:৪৬ পিএম, ১৫ জুন ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৫ বার

Kuldip-www.jatirkhantha.com.bdকুলদীপ নায়ার :  হাসিনার স্বৈরশাসকের ভাবমূর্তি ঠেকাতে বাংলাদেশে সফর করেন মোদি! বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার। ভারতের দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় ১১ জুন ‘এ শট ইন দ্য আর্ম ফর হাসিনা’ শিরোনামে লেখা কলামে তিনি এ সমালোচনা করেন। ওই কলামে তিনি ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক সফরেরও সমালোচনা করেন।

কুলদীপ নায়ারের কলামটি জাতিরকন্ঠের পাঠকদের এখানে তা তুলে ধরা হলো:  ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর হয়েছে অসময়ে। মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষতিগ্রস্ত ভাবমূর্তি পূনরুদ্ধারের জন্যই যেন ছিল এই সফর। কিন্তু মোদির সফরে শুধু ভারত-বিরোধী মনোভাবটাই বেড়েছে কারণ দিল্লি আর আগের মতো নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকেনি।
আমি জানি না, কেন এবং আর Hasina--Indian-PM-www.jatirkhantha.com.bdকত দিন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্বশীল শাসনকে আমাদের সমর্থন করে যেতে হবে। এটি ঠিক যে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা যিনি অত্যাচারী পশ্চিম পাকিস্তানের কাছ থেকে দেশকে মুক্ত করেছিলেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সংবিধান বা স্বীকৃত নীতি ও নৈতিকতাকে ইচ্ছেমতো তিনি বিদ্রুপ করবেন।

statement-300x300উদাহরণস্বরূপ সাম্প্রতিক ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি নির্বাচনের কথা বলা যায়। ভোটার ও সংশ্লিষ্টদের আতঙ্কের মধ্যে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে সীল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। শেখ মুজিব নিশ্চয়ই তার কবরের মধ্যে নাড়া খেয়েছেন। রাওয়ালপি-ির সামরিক জান্তার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের মতামত প্রকাশের অধিকার পুনপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিব।

মোদির সফর মৌলবাদীদের মোকাবেলার সেক্যুলারপন্থীদের শক্তি যুগিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারা নিজেদের মতই চলছেন। বিরোধী মতামতের লোকদের যেভাবে নির্দয়ভাবে দমন করছেন হাসিনা তাতে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার কি আদৌ মুক্ত রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার ওপর কোন বিশ্বাস ছিল?

বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনের প্রতি অপমানসূচক আচরণ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। ড. কামাল শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব রহমানের সহকর্মী ছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশের একজন নীতিবান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত রয়েছে ড. কামালের। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নির্বাচন বয়কটের বিষয়টি অচিন্তনীয় ছিল। এটা সত্যি যে, নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যে কোন কিছু করতে তৈরি ছিলেন শেখ হাসিনা। তবু বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নিত এবং তাদের কিছু সংখ্যক প্রার্থী জয়ী হতো, তাহলে তারা মানুষের সামনের হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধিতা করার সুযোগ পেতেন।

ভাগ্যবশত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু সযত্মে ভারতকে ধর্মীয় নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক দেশে পরিণত করেছিলেন। তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী গণতন্ত্রকে বিপথে নিয়ে গিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, বাক স্বাধীনতার  কণ্ঠরোধ করে দেশবাসীকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ছিলেন ইন্দিরা। নির্বাচন ঘোষণা করার পরে তার পরাজিত হওয়ার কথা থাকলেও ১৯৮০ সালে তারা নির্বাচনে জয় লাভ করেছিলেন।

ভারতের কংগ্রেস  তাদের বিপথে চলার অনুশোচনা করেন। আমি মনে করি এ পার্টির দেশ জুড়ে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাদের অনুশোচনা ও গ্রহনযোগ্যতার মধ্যে বিশাল ফারাক রয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত গত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সুশাসনে ধাক্কা লেগেছে । এটি বাংলদেশের মানুষের জন্য দুঃখজনক।

বাংলাদেশের এ পরিণতির জন্য সবাই শেখ হাসিনার দিকে আঙ্গুল তুলছে। শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার এমন কর্মকা- হতবাক করেছে। আন্দোলন সংগ্রামের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরে শুধু চুক্তিতেই সীমাবদ্ধ দেখতে চায়নি। তারা শেখ হাসিনা কর্মকা-ে পরিবর্তন আনতে মোদির পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেছিলেন।

মোদির সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বহু প্রতিক্ষিত ঝুলে থাকা স্থল সীমান্ত চুক্তিটি সত্যিই ইতিহাস হয়ে থাকবে। এই চুক্তির মাধ্যমে ছিটমহলের বাসিন্দাদের আদান প্রদান হবে। নিসন্দেহে এটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু মোদির সফরে বাংলাদেশের সংসদে সকল দলের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করা হয়নি। প্রতিবেশি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলের সমর্থন অর্জন করে ধন্যবাদ পেতে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি। ইচ্ছে করলেই মোদি এই সুযোগটি নিতে পারতেন। মোদির বার্লিন দেয়ালের সম্মান নেওয়া অনৈতিক। তার এই চিন্তার জন্য পাকিস্তানের কাছ থেকে সমালোচনা ও নিন্দা নিয়ে এসেছে। ইসলামাবাদকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নয়ন করার তত্ত্ব এড়িয়ে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ এ অঞ্চলে কোন একদিন ব্যবসা,বাণিজ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবেই।

বাংলাদেশের মানুষ আশায় ছিল যে মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে তিস্তা সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সাফ জানিয়ে দেন মোদির এবারের সফরে তিস্তার এজেন্ডা নেই। তবে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মোদির সফরে তিস্তা সমস্যা নিয়ে অগ্রগতি হবে। প্রকৃতপক্ষে তা হয়নি। মমতার এ সফরের মাধ্যমেই তিস্তা সমস্যা সমাধান করার প্রয়োজন ছিল। ভারত নিজের পথেই চলেছে, বাংলাদেশের মানুষের আশার প্রতিফলন ঘটেনি।