• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাব পরিচয়ে দুর্ধর্ষ ডাকাতি


প্রকাশিত: ১:৪৬ এএম, ২৩ অক্টোবর ২৩ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৯ বার

স্টাফ রিপোর্টার : র‌্যাব পরিচয়ে র‌্যাবের জ্যাকেট পরে দুর্ধর্ষ ডাকাতি ঘটেছে রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। ডাকাতরা লুটে নিয়েছে প্রায় পৌণে এক কোটি টাকা। গোয়েন্দারা বলছেন, রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ঘিরে গড়ে উঠেছে দুর্ধর্ষ ডাকাত চক্র। গত ১০ অক্টোবর খিলক্ষেত এলাকার এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ডাকাতির ঘটনা তদন্তে করতে গিয়ে এ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ডাকাতির ওই ঘটনায় অর্ধকোটি টাকাসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

ঢাকা মহানগর ও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকায় শনিবার অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাতজন হলেন- সবুজ মিয়া শ্যামল, সাহারুল ইসলাম সাগর, আবু ইউসুফ, দিদার ওরফে দিদার মুন্সী, ফেরদৌস ওয়াহীদ, আলামিন দুয়ারী ওলফে দিপু ও দাউদ হোসেন মোল্যা।

উত্তরার আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। সিসি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, দুই ব্যক্তি টাকা তুলছেন। এরা হলেন, ‘মাদার টেক্সটাইল’ নামের একটি কোম্পানির হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা অনিমেষ চন্দ্র সাহা এবং তার এক সহকর্মী মো. শাহজাহান মিয়া। তাদের সঙ্গে কোম্পানির গাড়ি ছিলো।

টাকা তোলার পর একটি ব্যাগে ভরে তারা ব্যাংক থেকে বের হন। তাদের গাড়িটি উড়াল সড়কের খিলক্ষেত এলাকায় পৌঁছলে কালো রংয়ের অপর একটি গাড়িতে থাকা কয়েকজন র‌্যাব পরিচয়ে গাড়িটির গতিরোধ করে। তাদের পরনে ছিল র‌্যাব লেখা জ্যাকেট। সঙ্গে হাতকড়া। অস্ত্রের মুখের সবাইকে জিম্মি করে তারা।

পরে গাড়িটি ঢাকার বাইরে নিয়ে অর্ধকোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গাড়ি থেকে টেক্সটাইল মিলসের কর্মচারীদের ফেলে দেয়া হয়। এমন ঘটনার নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ছায়া তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা বিভাগ। ঘটনার ১১ দিন পর শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীসহ সাতজনকে।

রোববার, ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ এই ডাকাতি ঘটনার বিস্তারিত জানান। বলেন, গত ১০ অক্টোবর বিকেল ৪টার দিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র‌্যাব পরিচয়ে ওই ডাকাতি হয়।

তিনি বলেন, টাকা তোলার পর ব্যাংকে বসেই কোম্পানির একজন অংশীদার মো. জাফর ইকবালের নির্দেশ অনুযায়ী তার এক পরিচিতি ব্যক্তি মো. রাজনকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেন অনিমেষ। এরপর বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে অফিসের গাড়িতে করেই বনানীর বাসায় ফিরছিলেন তিনি।

কাওলা থেকে টোল দিয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর বিকেল ৪টার দিকে মেরুন রঙের একটি প্রাইভেট কার অনিমেষদের গাড়ির পাশ কাটিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। মেরুন রঙের ওই গাড়ি থেকে র‌্যাব লেখা জ্যাকেট পরা ৫ থেকে ৬ জন বেরিয়ে আসে বলে, তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে।

পরে ওই দু’জনকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে ডাকাতরা। ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, একটি ব্ল্যাংক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেন। পরে চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও গাড়িচালক আবুল বাশারকে বিভিন্নস্থানে ঘুরিয়ে ৩০০ ফিট এলাকায় ফেলে রেখে যান ডাকাত দলের সদস্যরা।

ডিবি প্রধান জানান, সবুজের নেতৃত্বে দলটি কাটআউট পদ্ধতিতে ডাকাতি করে। কৌশল হিসেবে ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির একাধিক নম্বর প্লেট ব্যবহার করে। কাজ শেষে নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেয়। এরপর নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করে।

হারুন বলেন, এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছেন, স্ত্রীর গহনা কিনেছেন, জুয়া খেলেছেন। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৩ লাখ উদ্ধার করা হয়েছে।

ডাকাত দলে একজন মুহুরি পাওয়া গেছে। সাগর নামে একজন অনার্স-মাস্টার্স পাস করে আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করতেন। তিনি ডাকাত দলের একজনকে জামিন করাতে গিয়ে তাদের সঙ্গে জড়িয়ে যান। তার দায়িত্ব হলো বিভিন্ন ব্যাংকে রেকি করে বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা।এই ঘটনার পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা প্রধান।