এমপি লিটনের খুনীদের গুরু কাদের খানের পিএস
গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ কর্নেল (অব.) ডা. আবদুল কাদের খানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) মো. শামছুজ্জোহা সরকার ওরফে জোহাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ রোববার ভোরে গ্রেপ্তারের পর পরই বিকেলে গাইবান্ধার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মইনুল হাসান ইউসুফের আদালতে এমপি লিটন হত্যায় নিজের সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে জোহা জবানবন্দি দেন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জোহা আদালতকে জানিয়েছেন, অস্ত্র রাখা ও খুনিদের সবকিছুতেই তিনি সাহায্য করেছেন।
আটক শামছুজ্জোহা সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গ্রেপ্তারের পর পরই দুপুরে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহম্মেদ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘কাদের খাঁন ও হত্যায় অংশ নেওয়া চার খুনির আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শামছুজ্জোহাকে সাতদিন ধরে নজরদারিতে রাখা হয়।
এরপর ঘটনায় জড়িত থাকার প্রাথমিক প্রমাণ মেলায় আজ ভোররাতে সাদুল্যাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা এলাকা থেকে শামছুজ্জোহাকে আটক করা হয়। তিনি হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র নিজের হেফাজতে রেখেছিলেন এবং হত্যাকাণ্ডটি সফল করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরো জানান, এ ছাড়া পলাতক চন্দন সরকারসহ অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলের সহযোগিতাসহ সব ধরনের চেষ্টাও অব্যাহত আছে। পরে বিকেলে আদালতে জবানবন্দি দেন কাদের খানের পিএস জোহা। আদালত থেকে বেরিয়ে আসামির স্বীকারোক্তির বিষয়ে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন সহকারী পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) রবিউল ইসলাম।
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, ‘শামসুজ্জোহা দীর্ঘদিন ধরে কাদের সাহেবের পিএস হিসেবে কাজ করতেন। নির্বাচনকালী সময়ে থেকে এমপি থাকাকালীন তিনি তাঁর সঙ্গে কাজ করতেন। একটা সময় তিনি কাদের সাহেবের সঙ্গে জড়িত হয়ে যান। কাদের সাহেব তাঁকে ব্যবসা করার জন্য কিছু টাকা-পয়সা দেন।’
‘তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি কিলারদের গুদামে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। অস্ত্রগুলো নিজের হেফাজতে রেখে তাদের সাহায্য করেন। পলাতক চন্দনের সঙ্গেও সাবেক এমপি কাদের সাহেবের যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন। সুতরাং এই সবকিছুই তিনি করেছেন এবং আদালতে সবকিছুই স্বীকার করেছেন। এই স্বীকারোক্তিতে বোঝা যায়, তিনি সবকিছুর সঙ্গে জড়িত, তিনি পেছন থেকে কাজ করেছেন, কিন্তু কিলারদের সঙ্গে সরাসরি কিলিং মিশনে অংশ নেননি।’
চন্দন সরকার এ ঘটনায় সন্দেহভাজন। তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে। পুলিশের দাবি, চন্দন সরকার এমপি লিটনের গতিবিধির তথ্য সাবেক সংসদ সদস্য কাদের খানের কাছে দিয়েছিলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, ‘চন্দন সরকারকে আমরা খুঁজছি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জেনেছি, তিনি বাংলাদেশে নেই। তিনি হয়তো ভারতে অবস্থান করছেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে ইন্টারপোলের সাহায্যে তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান রবিউল ইসলাম।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে শাহবাজ (মাস্টারপাড়া) এলাকায় নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় লিটনের বোন তাহমিদা বুলবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় চার-পাঁচজনকে আসামি করে ১ জানুয়ারি সুন্দরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন।
ওই হত্যা মামলায় আবদুল হান্নান, মেহেদী হাসান ও শাহীন মিয়া নামের তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁরা এমপি লিটনকে হত্যার কথা স্বীকার করে গাইবান্ধার বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে, ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বগুড়ার বাসা থেকে আবদুল কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে গাইবান্ধার পুলিশ। পরের দিন তাঁকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। একই দিন আনোয়ারুল ইসলাম রানা নামের একজনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।