এবার ‘বাংলায়’ জঙ্গি বিস্তারে আল কায়েদা
বিশেষ প্রতিনিধি : এবার বাংলা’য় মেতেছে শীর্ষ জঙ্গি আল কায়েদা। এশিয়ার বাংলা ভাষাভাষিদের টার্গেট করে আল কায়েদা শীর্ষ জঙ্গিরা তাদের নেতা আনওয়ার-আল-আলওয়াকি-র বক্তব্যে’ও বাংলায় সংকলন বের করেছে। একই সঙ্গে আল কায়েদার প্রচার ওয়েব সাইটে বাংলায় প্রকাশিত আচরণবিধি প্রকাশ করেছে। এনিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, ‘ভারতীয় উপমহাদেশের জিহাদি মুজাহিদিনদের জন্য আদর্শ আচরণবিধি প্রকাশ করল আল কায়েদা। বাংলা ভাষায় ওই আচরণবিধি একটি অডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশ করল আল কায়েদা’।শুধু এই অডিও বার্তাই নয়।
আল কায়েদা তাদের অন্যতম শীর্ষনেতা আনওয়ার আল আওলাকির বিভিন্ন ভাষণসঙ্কলিত করে বাংলায় ‘দ্য বুক অব জিহাদ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছে। আওলাকির ভাষণের বাংলা অনুবাদ করে সিডিও তৈরি করেছে বিশ্ব ত্রাস ওই জঙ্গি সংগঠন।ভারতীয় স্বরাস্ট্র দফতর সূত্রের খবরে বলা হয়, সম্প্রতি ইজরায়েল এবং আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ভারতকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়ে সতর্ক করেছে আল কায়েদার ভারতে সংগঠন বিস্তারের পরিকল্পনা নিয়ে। সূত্রের খবর, ওই সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতে আল কায়েদার সংগঠন বিস্তারে মূল ফোকাস এলাকা দুটি। এক, কাশ্মীর এবং দুই পশ্চিমবঙ্গ সমেত পূর্ব ভারতের বাংলাভাষী এলাকা।
সেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী আইএস-এর ধাঁচে নিজেদের প্রচার বিভাগকে সাজিয়েছে আল কায়েদা। ইসলামিক জঙ্গি কার্যকলাপের উপর নজর রাখা ভারতীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্তা বলেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস) জমি হারানো শুরু করার পরই পশ্চিম এশিয়ার একাধিক দেশের বিভিন্ন প্রকাশ্য সংগঠনের মাধ্যমে আল কায়েদার তহবিলে বিপুল অঙ্কের টাকা ঢালা হচ্ছে।
আইএস-কে টেক্কা দিতে, ওই সংগঠনেরই ট্রেডমার্ক অনলাইন প্রচারকে হাতিয়ার করেছে আল কায়েদা। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা প্রায় দু’ডজন ওয়েবসাইট চিহ্নিত করেছেন যেখানে প্রকাশ্যে আল কায়েদার হয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে। তার মধ্যে এক ডজনের বেশি ওয়েবসাইট বাংলায়। বাংলা ওই ওয়েবসাইটগুলি আল কায়েদার মতাদর্শ থেকে শুরু করে সংগঠনের শীর্ষ জিহাদি নেতাদের আরবি বক্তব্যকে বাংলায় ডাব করে প্রচার করছে। সেই সঙ্গে ওই ওয়েবসাইটের পড়ুয়াদের জন্য দেওয়া হচ্ছে অনলাইন প্রশিক্ষণ—কী ভাবে ফোন এবং ইন্টারনেটের উপর নজরদারি এড়ানো সম্ভব বা কী ভাবে নিজের মোবাইলে কোনও নির্দিষ্ট ফাইল গোপনে রাখা সম্ভব হবে।
আল কায়েদার ভারতীয় শাখার প্রধান আসেম ওমরের বার্তার বাংলা তর্জমা প্রকাশ করেছে। ভারতের এক শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তা বলেন,‘‘মূলত ওয়ার্ডপ্রেসে ওই সাইটগুলিবানানো হচ্ছে। সাইটগুলিকে চিহ্নিত করে ব্লক করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন সাইট খোলা হচ্ছে।”অন্য এক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাকর্তা বলেন, সাইটগুলি বেশির ভাগই পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন,‘‘লাদেন জীবিত থাকাকালীন আল কায়েদা কখনওই এ ভাবে সংগঠনের প্রচার করত না। বর্তমানে তারা এই নতুনপন্থা নিয়েছে।”
আইএস বা আল কায়েদার মতো সংগঠনে এত দিন বাঙালিদের আলাদা কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এমনকি, মার্কিন গোয়েন্দাদের বিভিন্ন রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, আইএস শিবিরেও, মূল বাহিনীতে ভারতীয় এবং বাঙালিদের যোদ্ধা হিসাবে কোনও সম্মান ছিল না। মূলত পশ্চিম এশিয়া, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার মুজাহিদরাই বেশি গুরুত্ব পেয়েছে ওই দুই সংগঠনে।
কিন্তু আল কায়েদার সাম্প্রতিক কার্যকলাপ থেকে গোয়েন্দারা নিশ্চিত যে এবার তারা সংগঠন বিস্তার করতে বাংলাভাষী মুজাহিদদেরই গুরুত্ব দিচ্ছে। তারা তাদের প্রচারে বাংলাভাষী শহিদদের কথাও ফলাও করে প্রচার করছে। আফগানিস্তানে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের এক জিহাদি আল কায়েদার হয়ে লড়াই করতে গিয়ে শহিদ হয়। তার নামে গজল তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, এ ভাবে বাংলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আল কায়েদা দুই বাংলাতেই জিহাদি নিয়োগ শুরু করেছে। আর সেই নিয়োগে সাহায্য করছে জামাতুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠন।
স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, আল কায়েদা প্রতি সপ্তাহে একটি উপ-মহাদেশীয় সংবাদ বুলেটিন প্রচার করছে যেখানে পশ্চিমবঙ্গ সমেত দেশের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করা হচ্ছে। সম্প্রতি ক্যানিং লোকালে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনাও জায়গা পেয়েছে ওই বুলেটিনে। গোটা প্রক্রিয়াটিকে উস্কানিমূলক খবর দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে মগজধোলাই করার পরিকল্পনা বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এ রাজ্যে সক্রিয় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে চিহ্নিত করেছেন। ওই সংগঠনগুলি দাবি করে, তারা নিপীড়িত মুসলিম মানুষদের জন্য কাজ করে। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই প্রকাশ্য সংগঠনগুলিই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে জিহাদের বীজতলা তৈরি করছে। রাজ্য পুলিশের এক কর্তাও স্বীকার করেন, সম্প্রতি বৈষ্ণবনগরে এক যুবককে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আচমকাই অশান্তি ছড়িয়েছিল মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান এলাকায়। ওই অশান্তির ক্ষেত্রেও ওই ধরনের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সরাসরি ভূমিকা পাওয়া গিয়েছে। ওই পুলিশকর্তা বলেন, খুব পরিকল্পিত ভাবেই সাধারণ একটি দুর্ঘটনা বা অপরাধের ঘটনাকেও অন্যদিকে মোড় দেওয়ার চেষ্টা করছে ওই ধরনের কিছু সংগঠন।