এবার পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধাপরাধি শহিদুল্লাহর বিচার-তদন্ত চূড়ান্ত
স্টাফ রিপোর্টার : মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক একজন সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান সরকারি কৌঁসুলির কার্যালয়ে এ প্রতিবেদনে জমা দেওয়া হবে।
আজ বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাবেক ওই সদস্যের নাম মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ (৭৫)। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গোলাপের চর গ্রামে। শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর। তদন্ত করেন জেড এম আলতাফুর রহমান। গত বছরের ২ আগস্ট শহীদুল্লাহকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে আটক রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। নিজেকে তিনি ক্যাপ্টেন হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তাঁর নিজ জেলা কুমিল্লায় আসেন। পরে পশ্চিম পাকিস্তানে আর ফিরে না গিয়ে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কুমিল্লায় ক্যাম্প স্থাপন করেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত হন।
শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে যে তিনটি অভিযোগের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, তা হলো—
১৯৭১ সালের ৭ জুন কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে আটক করেন। পরে হাবিবুর রহমানকে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেন এবং লাশ গোমতী নদীতে ফেলে দেন।
১৯৭১ সালের ১৬ জুন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৪০-৫০ জন সদস্য নিয়ে দাউদকান্দির উত্তর ইউনিয়নের চেঙ্গাকান্দি ও গোলাপের চর গ্রামে হামলা চালিয়ে ২০ জনকে আটক করে নির্যাতন চালান। পাঁচটি বাড়ির মালামাল লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করেন। পরে ২০ জনের মধ্যে ১৯ জনকে ছেড়ে দেন এবং একজনকে শহীদুল্লাহ নিজে গুলি করে হত্যা করে লাশ গোমতী নদীতে ফেলে দেন।
১৯৭১ সালের ২১ জুলাই শহীদুল্লাহ হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি বাজারে হামলা চালান। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কালা মিয়া নামের একজনকে আটক করেন এবং তানজিনা হাসপাতালের পেছনে তাঁকে গুলি করে হত্যা করে লাশ সেখানকার একটি খালে ফেলে দেন।