এন্টি আওয়ামী ভোটে ডিসিসিতে জয়-পরাজয়!পাল্লা ভারী হাজী মোঃ সেলিমের
শফিক আজিজ.ঢাকা: আসন্ন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবার বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা দেবে এন্টি আওয়ামী ভোট।এই এন্টি আওয়ামী ভোট যে মেয়র প্রার্থী ধরতে পারবেন তিনিই ডিসিসি’র মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যাবেন। এ অভিমত নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা সমূহের।
তাঁরা বলছেন, বিগত বেশ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেয়া গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে এন্ট্রি আওয়ামী ভোটই জয় পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। এক্ষেত্রে দুই ডিসিসি নির্বাচনের মধ্যে ঢাকার দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবে হাজী মোঃ সেলিমের পাল্লা ভারী।কারণ, হাজী মোঃ সেলিম আওয়ামী বিএনপি দুই দলের মাঝেই সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অবজারভেশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন আহমেদ সাবু জানান, ডিসিসির দক্ষিণে হাজী মোঃ সেলিম ফিটেস্ট কেন্ডিডেট।
তিনি সব দলের মাাঝে সমান জনপ্রিয়।সবার বিপদে আপদে তিনি এগিয়ে যান।এজন্য ডিসিসির দক্ষিণে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে হাজী মোঃ সেলিমকেই মনোনয়ন দেয়া উচিত। তাছাড়া সঈদ খোকন একেবারে তরুণ। হাইভোল্টেজ প্রার্থীদের ভোটের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তিনি সুবিধা করতে পারবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলীয় মনোনয়ন না মিললে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন হাজী মোঃ সেলিম। তবে হাজী সেলিম এখনও আশাবাদি বলে জানিয়েছেন জাতিরকন্ঠকে। তিনি বলেন, তাঁর জনপ্রিয়তা যাচাই করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষমেষ তাঁকে মনোনয়ন দেবেন।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়েছে।এর কারণ এই নয় যে, আওয়ামী প্রার্থীরা ভাল ছিল না। দলীয় প্রার্থীরা ভাল হলেও এন্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্ট কাজ করেছে ভোটারদের মাঝে।যার ফলে গাজীপুরে আজমতউল্ল্যাহ’ন মত ভাল প্রার্থীও হেরে গেছেন।
একই অবস্থা নারায়নগঞ্জেও ঘটেছে। বেহাল অবস্থায় আওয়ামী প্রার্থীরা হেরেছে খুলনা, রাজশাহী ও সিলেটে। কাজেই আবেগের বশে কিংবা জনমত যাচাই না করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মেয়র প্রার্থী যে দলই দেবে সেই প্রার্থীর ভরাডুবি হবে।
সিটি নির্বাচনে থাকছে সব দলই-মাঠে ১৫ মেয়র প্রার্থী—-
‘শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য চাই উপযুক্ত শহর’ পরিচ্ছন্ন মহানগরী গড়ে তোলার এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝুলছে অসংখ্য বিলবোর্ড।
আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন এভাবেই প্রচার শুরু করেছেন।
পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে প্রচারে মাঠে নেমেছেন ঢাকা-৭ আসনের সাংসদ হাজী মোঃ সেলিম। নির্বাচনের জন্য তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণাও দিয়েছেন। উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার প্রচারণায় মাঠে নেমেছেন। যদিও উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ব্যবসায়ী আনিসুল হক। সব মিলিয়ে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে রাজধানীজুড়ে।
কমবেশি সরব সব দলের মেয়র প্রার্থীরা। বসে নেই সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও। জনসংযোগে নেমেছেন অনেকে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী অন্তত ১৫ জন। বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সর্বশেষ ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালের ১৫ মে। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় সাদেক হোসেন খোকা তখন মেয়র নির্বাচিত হন। নানা কারণে নির্বাচন করতে না পারায় প্রায় দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৭ সালের ১৪ মে এর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। ২০১১ সালের ২৯ নবেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করা হয়। উত্তরে ৩৬টি ওয়ার্ড ও দক্ষিণে ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৬টি। এরপর থেকেই প্রশাসক দিয়ে চালানো হচ্ছে মেয়রের দায়িত্ব।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাপক প্রচার অভিযানে নেমেছেন সাঈদ খোকন। ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের ছেলে এই সাঈদ খোকন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের হয়েই লড়বেন নগরের দক্ষিণাংশের নির্বাচনী লড়াই। বলা হচ্ছে দলের সমর্থন তিনি পেয়েছেন। প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন পরিচালনায় বাস্তব অভিজ্ঞতা এখনও নেই, তবে বাবার কর্মময় জীবন থেকে যতটুকু শিক্ষা নিতে পেরেছি তা দিয়েই চালাব।
সরকার পতনের আন্দোলনে থাকলেও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। ইতোমধ্যে দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা কাজ শুরু করেছেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, উত্তরে মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনিই এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে দলের পক্ষে সমর্থন পেতে যাচ্ছেন। দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন। এছাড়াও দক্ষিণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মীর্জা আব্বাস ও মহানগর নেতা আব্দুস সালাম প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন।সর্বশেষ মেয়র না হলেও কাউন্সিলর প্রার্থী দেবে জামায়াত।
এদিকে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে রবিবার প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দক্ষিণে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন ও উত্তরে দলের যুগ্ম মহাসচিব বাহাউদ্দিন বাবুল। নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত। ইতোমধ্যে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, জাপা সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সকল ওয়ার্ডে দলের সমর্থিত প্রার্থী থাকার কথা জানান তিনি।
এদিকে বিকল্পধারার পক্ষ থেকেও নির্বাচনে অংশ গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। চলতি মাসেই আনুষ্ঠানিক প্রার্থী ঘোষণা আসতে পারে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহি বি চৌধুরী উত্তরের মেয়র প্রার্থী হতে পারেন। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। দক্ষিণে কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স ও উত্তরে দলের জাতীয় পারিষদ সদস্য কাফি রতনকে দলীয় সমর্থন দেয়া হবে। জানতে চাইলে রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, একটি বাসযোগ্য নগরী গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। গণতন্ত্রী পার্টির সহ-সভাপতি নূরুর রহমান সেলিম বলেন, আগামী দুই দিনের মধ্যে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি দলীয় বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। অনেকেই মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুারো সদস্য বিমল বিশ্বাস বলেন, দলের পক্ষ থেকে মেয়র প্রার্থী দেয়ার বিষয়টি এখনও ঠিক হয়নি। কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। প্রার্থী দেয়ার চিন্তা করছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদও। এর আগেও নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে জাসদ থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছিলেন শিরিন আখতার। বর্তমানে তিনি সাংসদ হলেও দলের পক্ষে প্রার্থী দেয়ার বিষয়ে একমত কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে।