‘এগিয়ে যাও’ দল করে যেভাবে বিপ্লব ঘটালো মাক্রোঁ
ফ্রান্স থেকে জিসান কেরাম : ‘এগিয়ে যাও’ দল করে বিপ্লব ঘটালো মাক্রোঁ নামের এক রাজনীতিক। তিন বছর আগেও জনসাধারণের কাছে অপরিচিত ছিলেন ইমানুয়েল মাক্রোঁ। রোববার নিজের ৪০তম জন্মদিনের কয়েক মাস আগে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এক বছর আগেও তার নিজের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। ছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দের একজন উপদেষ্টা।
মাত্র এক বছর আগে সরকারি পদ ছেড়ে নিজের রাজনৈতিক দল ‘এন মার্চ’ বা ‘এগিয়ে যাও’ গঠন করেই বাজিমাত করলেন মাক্রোঁ। সাবেক ব্যাংকার মাক্রোঁ ফরাসি রাজনীতির প্রজন্ম বদলের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়েছেন। যে রাজনীতিতে বছরের পর পর বছর ধরে কতগুলো পরিচিত মুখই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে।
জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে এখন মাক্রোঁই সবচেয়ে তরুণ নেতা। এসব দেশের সব নতুন-পুরাতন তরুণ নেতার চেয়েও মাক্রোঁ তরুণতর, তা হালের কানাডীয় প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোই হোন আর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হোন।
ফ্রান্সের অভিজাত ন্যাশনাল স্কুল অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের গ্রাজুয়েট মাক্রোঁ। এই স্কুল থেকেই ফ্রান্সের ভবিষ্যৎ শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা বের হয়ে আসেন। এর সাবেক ছাত্রদের মধ্যে তিনি ফরাসি প্রেসিডেন্ট রয়েছেন, এবার মাক্রোঁকে নিয়ে তা চারে দাঁড়ালো।
গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর মাক্রোঁ ফ্রান্সের অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফিনান্সিয়াল ইন্সপেক্টর হিসেবে কাজ করেন। এর বিনিয়োগ ব্যাংকার হিসেবে রথসচাইল্ড এন্ড সি ব্যাংকে যোগ দেন। ২০০৯ সালে স্বাধীন রাজনীতিক হওয়ার আগে তিনি তিন বছর ফরাসি সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য ছিলেন।
পরে বর্তমান ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দের ব্যক্তিগত কর্মীদলের সদস্য হন এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ম্যানুয়েল ভালাসের নেতৃত্বাধীন সরকারের অর্থ, শিল্প ও ডিজিটাল অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কিন্তু দু্ই বছর মন্ত্রীত্ব করার পরই তাতে ইস্তাফা দিয়ে ২০১৬ সালে নিজের দল ‘এগিয়ে যাও’ আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। তার মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি ফরাসি রাজধানীর প্রতিষ্ঠিত সব ধারাকে ধরাশায়ী করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। উত্তর ফ্রান্সের আমিয়েঁর চিকিৎসক দম্পতির ঘরে জন্ম নেওয়া ম্যাক্রোঁ তার চেয়ে বয়সে ২৪ বছরের বড় নিজের স্কুল টিচারকে বিয়ে করেন।
বর্তমানে ৬৩ বছর বয়সী স্ত্রী ব্রিজিতের সাতজন নাতি-নাতনি রয়েছে। ১৫ বছর বয়সে প্রাইভেট স্কুলের বিবাহিত এই শিক্ষকের সঙ্গে মাক্রোঁর পরিচয় হয়। মাক্রোঁর বয়সী এক মেয়ে ছিল তার। এক ক্লাসেই পড়ত তারা।
ব্রিজিতের পরিবার আমিয়ঁ শহরের প্রসিদ্ধ চকলেট প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ী। ব্রিজিতদের থ্রনিউ পরিবার মাক্রোঁর সঙ্গে ব্রিজিতের সম্পর্ক তখনি মেনে নেয়নি, কিন্তু আজ তারা সুখি ও সফল দম্পতি।
প্রথম পর্বের ভোটে জয়ের পর এক অনুষ্ঠানে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে স্মিতহাস্যে মাক্রোঁ বলেছিলেন, ব্রিজিত সব সময় আমার পাশে আছে। তার চেয়ে বড় বিষয় তাকে ছাড়া আমি আজকের আমি হয়ে উঠতে পারতাম না।