• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

একের পর এক আক্রমণে দাপুটে ফুটবলে কোনঠাসা শ্রীলঙ্কা-সেমিতে বাংলাদেশ


প্রকাশিত: ১১:১৭ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি ১৫ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৬৮ বার

 

Bangladesh football-www.jatirkhantha.com.bdস্পোর্টস রিপোর্টার.ঢাকা: বাংলাদেশ এই ম্যাচটা আরও বড় ব্যবধানেই জিততে পারতো। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেমিফাইনাল পেঁৗছানোর লড়াইয়ের স্কোর লাইনটা ঠিকমতো ম্যাচের পরিস্থিতিকে তুলে ধরতে পারছে না। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পরিচিত পরিবেশে আজ যেন ঝ​লসে উঠেছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা।

একের পর এক আক্রমণে লঙ্কানদের কোনঠাসা করে বড় জয়ের প্রেক্ষাপট তৈরি করলেও জয়টা এসেছে ন্যূনতম ব্যবধানেই। ৪০ মিনিটে হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাসের গোলেই সেমিফাইনালের টিকিট কেটেছে লোডভিক ডি ক্রুইফের শিষ্যরা।
খেলার শুরুতেই এক অাক্রমণ থেকে কর্নার পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কর্নারটি ব্যর্থ করে দেওয়ার পর থেকেই শুরু। লঙ্কানদের ওপর আক্রমণের চাপটা বাংলাদেশ বজায় রেখেছিল ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই। বাম দিকে সোহেল রানা, ডান দিকে জাহিদ হোসেন। মধ্যখানে মামুনুল ইসলাম। আক্রমণে হেমন্ত ভিনসেন্ট।

পুরো দলটাকেই আজ যেন আক্রমণের নেশায় পেয়ে বসেছিল। পেছন থেকে এসে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে তা বারবার সামনে ঠেলে দিচ্ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। রায়হান হাসান, ইয়াসিন কিংবা নাসিররাও পেছন থেকে দারুণ ভূমিকা রাখছিলেন আক্রমণে। সবমিলিয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এক অন্য বাংলাদেশকেই যেন দেখা গেল। যে দল প্রতিপক্ষকে চেপে ধরতে পারে, আক্রমণের তোড়ে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে প্রতিপক্ষের সাজানো বাগান।
প্রতিপক্ষের ওপর প্রাধাণ্য বিস্তার করেও গোল করতে না পারার ব্যাপারটি বাংলাদেশের ফুটবলের দীর্ঘ দিনের শত্রু। ‘ঐতিহাসিক’ এই ব্যাপারটি আজ যেন বেশ প্রকট হয়েই দেখা দিচ্ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের মাঠে। বারবার শ্রীলঙ্কার গোলমুখে গিয়ে খেই হারাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডরা।
খেলার আট মিনিটে রায়হানের লম্বা থ্রো গোলমুখে পড়লে তাতে টোকা দিতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়। ১০ মিনিটে হেমন্ত প্রায় একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে শ্রীলঙ্কার সীমানায় ক্রস ফেললেও সেখানে সবুজ জার্সি পড়া কাউকে দেখা যায়নি। ২০ মিনিটে জাহিদের শট বারের ওপর দিয়ে চলে যায়, অথচ এই শটটি একটু ঠান্ডা মাথায় নিলেই হয়ত স্কোরশিটে নাম তুলে ফেলতে পারতেন এই অনুনমেয় চরিত্রের খেলোয়াড়টি।
৩১ মিনিটে ওই রায়হানের থ্রো থেকে বল পেয়ে সোহেল রানার প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন লঙ্কান গোলরক্ষক। ৩৬ মিনিটে একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণের শেষটায় বুদ্ধিদীপ্ত সমাপ্তি টানতে পারেননি জাহিদ।
৪১ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। যাঁরা টেলিভিশনে খেলাটি দেখেছেন, তাঁরা নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন, বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা একটি গোল আজ দেখেছেন তারা। শ্রীলঙ্কার ডি-বক্সের একেবারে মাথায় বাম প্রান্ত থেকে সোহেল রানার আড়াআড়ি ফেলা বলটি বুক দিয়ে সামনে ঠেলেন এমিলি। একটু দূর থেকে দৌড়ে এসে দুর্দান্ত এক শটে লঙ্কান গোলরক্ষককে পরাভূত করেন হেমন্ত। এক গোলে এগিয়ে গিয়েও প্রধমার্ধের শেষ অংশে প্রতিপক্ষের ওপর চাপ অব্যহত রাখে উজ্জীবিত বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ার্ধেও ম্যাচের ​ছবি ছিল একই। বাংলাদেশের একের পর এক আক্রমণ কিন্তু ফিনিশিংটা বাজে। ৫৯ মিনিটে জাহিদের ক্রস থেকে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সোহেল রানা। এর পরের মুহূর্তেই সোহেলের পাস থেকে এমিলির প্রচেষ্টা অল্পের জন্য ব্যর্থ করে দেন শ্রীলঙ্কার গোলরক্ষক।
৬৭ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম দেখে দুরন্ত এক নাটক। শ্রীলঙ্কার একটি পরিকল্পিত আক্রমণে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের রক্ষণব্যুহ। প্রতিপক্ষের স্ট্রাইকার দ্রুতগতিতে ইয়াসিন-নাসিরদের বোকা বানিয়ে বক্সে ঢুঁকে পড়ার মুহূর্তে বাংলাদেশের গোলরক্ষক শহীদুল তাঁকে বাধা দেন। কিন্তু রেফারির চোখে বিধি-বহির্ভূত বাধায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম স্তব্ধ হয়ে যায় তাঁর পেনাল্টি সিদ্ধান্তে।
পেনাল্টিটি ছিল ন্যয়-সঙ্গতই। নির্দিষ্ট ওই জায়গাটিতে গোলরক্ষক শহীদুল যে কায়দায় শ্রীলঙ্কার স্ট্রাইকারকে বাধা দেন, সেটাতে তাঁর বুদ্ধিদীপ্ততাই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু শহীদুল নিজের ভুল শোধনরান দারুণ পেনাল্টিটি অসম্ভব দক্ষতার সঙ্গে ফিরিয়ে দিয়ে। ফিরতি বলেও শহীদুল দ্বিতীয়বারের মতো রুখে দেন শ্রীলঙ্কার ম্যাচে ফেরার সুবর্ন সুযোগটি।
পেনাল্টি ফেরানোর পর বাংলাদেশ দল যেন আরও উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে গোলের সংখ্যা বাড়ানোর। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের আক্রমণকে গোলে পরিণত করার দুর্বলতায় ভেস্তে যেতে থাকে সব প্রয়াসই। ৮০ মিনিটে প্রায় একক প্রচেষ্টায় জামাল ভূঁইয়া বল নিয়ে শ্রীলঙ্কার বক্সের মুখে থ্রু বাড়ান হেমন্তের কাছে। ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতিতে হেমন্ত মাথা ঠান্ডা রেখে ছোট্ট এক ঝটকায় শ্রীলঙ্কান গোলরক্ষককে কাটিয়ে তা গোলে প্লেস করলেও তা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন শ্রীলঙ্কা রক্ষণের এক খেলোয়াড়। হেমন্ত বঞ্চিত হন অসাধারণ প্রতিভাদীপ্ত এক গোল পাওয়া থেকে।
দাপট শেষ অবধি ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত ওই হেমন্তর গোলেই সেমিফাইনালটা নিশ্চিত করে নেয় মামুনুল ইসলামের দল।