• শুক্রবার , ৩ মে ২০২৪

উপ-সচিবের ধর্ষণের সাজা গুরুদন্ড কেন!


প্রকাশিত: ১১:২০ পিএম, ৬ জুলাই ২৩ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৫ বার

বিশেষ প্রতিনিধি : ধর্ষণের সাজা গুরুদন্ড কেন! প্রচলিত আইনে কেন বিচার নয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে! অনেকে বলেছেন, প্রচলিত আইনে ধর্ষণকারীর সাজা হলে উচিত শিক্ষা হতো ধর্ষণকারীর। এতে ভবিষ্যতে কেউ একই ধরনের অপরাধ করতে সাহস পেতো না। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত থাকা অবস্থায় একাধিক গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উপসচিব মেহেদী হাসানকে গুরুদণ্ড দিয়েছে। এটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র।

বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে সই করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের ফলে সংশোধিত আইনটি কার্যকর হিসেবে জারি হয়েছে।ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভের পর আইনের সংশোধনীটি অনুমোদন করে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা।
২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ধর্ষণ, ধর্ষণ জনিত কারণে মৃত্যু শাস্তি ইত্যাদি প্রসঙ্গে ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
তবে ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দল বেধে ধর্ষণের ঘটনায় নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা আহত হলে, সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। সেই সঙ্গে উভয় ক্ষেত্রেই ন্যূনতম এক লক্ষ টাকা করে অর্থ দণ্ডের বিধানও রয়েছে।সেই আইনেই পরিবর্তন এনে ধর্ষণ প্রমাণিত হলেই মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবনের বিধান রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে অর্থদণ্ডের বিধানও থাকছে।

প্রথমে ২০০০ সালে জারি করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৩৪টি ধারার মধ্যে ১২টি ধারাতেই বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান ছিল।তবে পরবর্তীতে অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ ও মানব পাচার সংক্রান্ত দুইটি আইনের অংশ আলাদা হয়ে যাওয়ার পর এই আইন থেকে বাদ দেয়া হয়।ফলে এই আইনের সাতটি ধারায় মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি বহাল থাকে। নতুন অধ্যাদেশে ৯ (১) ধারাটি সংশোধন করে যাবজ্জীবন অথবা মৃত্যুদণ্ডের বিধান আনা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলেছে, উপসচিব মেহেদী হাসানকে গুরুদণ্ড দিয়ে বরখাস্ত করে অর্থাৎ সরকারি চাকরির সর্বোচ্চতম শাস্তি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের প্রশাসনের ২১ ব্যাচের এ কর্মকর্তা চাকরী সংক্রান্ত কোনো সুযোগ–সুবিধা পাবেন না।
কিন্তু ওই উপ সচিব যাদের ধর্ষণ করে কালিমা লেপে দিলেন তাদের কি হবে? তাদেরতো কোনো সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেয়া হয়নি? তাদের তো কোনো অপরাধ ছিল না।

এর আগে মেহেদী হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়েছিল। এ সংক্রান্ত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরবের রিয়াদে অবস্থানকালে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দূতাবাসের সেইফ হোমে আশ্রিত কয়েকজন গৃহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের তদন্তে প্রমাণিত হয়।

এরপর মেহেদী হাসানকে ওই দূতাবাস থেকে ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রত্যাহার ও একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২১ মার্চ অভিযোগ বিবরণী জারির মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। ব্যক্তিগত শুনানি এবং দ্বিতীয় বার কারণ দর্শানোর নোটিস দিলেও কোনোবারেই এ উপসচিব সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। তাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাকে গুরুদণ্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) পরামর্শ চায়। পিএসসি এ দণ্ডের সঙ্গে একমত পোষণ করলে সেটা রাষ্ট্রপতির মতামতের জন্য পাঠানো হলে সেখানেও অনুমোদন পায়। এরপরই আজ বৃহস্পতিবার ৬ জুলাই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তদন্তে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে সেইফ হোমে আশ্রিত কতিপয় গৃহকর্মীকে অপ্রয়োজনীয় একান্ত সাক্ষাৎকারের নামে অশ্লীল প্রশ্ন ও আচরণসহ বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা এবং যৌন নির্যাতন (ধর্ষণ) করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়।