• শনিবার , ২৩ নভেম্বর ২০২৪

ইমরুল ঝড়ে কাঁপল জিম্বাবুয়ে


প্রকাশিত: ২:০২ পিএম, ২২ অক্টোবর ১৮ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১২৫ বার

স্পোর্টস রিপোর্টার : ম্যাচের ফল প্রত্যাশিত, তবে শুরুটা তা ছিল না। কিন্তু একটি আদর্শ ইনিংস গড়ে দিল প্রত্যাশিত জয়ের ভিত। বাংলাদেশের ব্যাটিং কাঁপিয়ে দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। পেরে উঠল না তারা একজনের সঙ্গে। শুরু থেকে প্রায় শেষ, পুরো পথ দলের আস্থা হয়ে রইলেন ইমরুল কায়েস। এক প্রান্ত আগলে দলকে জুগিয়ে গেলেন নির্ভরতা। শেষের দাবি মিটিয়ে তুললেন ঝড়। তার অসাধারণ সেঞ্চুরিতে যে ঠিকানায় পৌঁছেছিল বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে পায়নি সেটির নাগাল।

প্রথম ওয়ানডেতে মিরপুরে জিম্বাবুয়েকে ২৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এগিয়ে গেছে তিন ম্যাচের সিরিজে। শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে রোববার ইমরুল খেলেছেন ১৪০ বলে ১৪৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ৫০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৮ উইকেটে ২৭১ রান। জিম্বাবুয়ে থমকে গেছে ২৪৩ রানে। পরাজয়ের ব্যবধান যেমনটা বোঝাচ্ছে, বাংলাদেশের জয়টা এসেছে এর চেয়েও অনায়াসে। শেষ দিকে একটি জুটিতে ব্যবধান কমিয়েছে জিম্বাবুয়ে।

ইমরুলের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস তো বটেই, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। তিনি স্পর্শ করেছেন গত এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ১৪৪ রানকে।ইনিংস যখন পেরিয়েছে ৩০ ওভার, বাংলাদেশ তখন ধুঁকছিল। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করেছে ইমরুলের সঙ্গে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের জুটি। সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের রেকর্ড ১২৭ রান যোগ করেছেন দুজন। দলে ফেরার ম্যাচে সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার সাইফ উদ্দিন পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম ফিফটির স্বাদ।

শেষটা যতটা উজ্জ্বল, বাংলাদেশের শুরু ছিল ততটাই বিবর্ণ। গত কিছু দিনের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে আবার ব্যর্থ টপ অর্ডার।এশিয়া কাপের ফাইনালে আলো ছড়ানো লিটন দাসের ব্যাটে এ দিন ছিল আঁধার। একবার রান আউটের হাত থেকে বেঁচেছেন, একবার বেঁচে গেছেন ক্যাচ দিয়ে। এরপরও উইকেট বিলিয়ে এসেছেন ৪ রানে।৩০ বছর ২৯৫ দিন বয়সে অভিষিক্ত ফজলে মাহমুদ রাব্বি সুযোগ পেয়েছিলেন তিনে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পাওয়া সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। শূন্য রানে তাকে ফিরিয়েছে তেন্ডাই চাতারার বাড়তি লাফানো দারুণ এক ডেলিভারি। ৬ ওভারে বাংলাদেশের রান তখন ২ উইকেটে ১৭।

এশিয়া কাপের মাঝপথে নাটকীয়ভাবে ডাক পেয়ে মিডল অর্ডার ও তিনে খেলে এ দিন আবার ওপেনিংয়ে সুযোগ পান ইমরুল। শুরুতে ছিলেন উইকেট আঁকড়ে। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটিতে চেষ্টা করেন দলকে টেনে তোলার। কিন্তু এদিন আর উদ্ধারপর্ব শেষ করতে পারেননি মুশফিক। লেগ স্পিনার ব্রেন্ডন মাভুটার বাজে বলে দিয়ে এসেছেন উইকেট।

বাংলাদেশ প্রথম একটু দাপট দেখাতে পারে পরের জুটিতে। চাপের মধ্যেও দারুণ ইতিবাচক ব্যাটিং করেছেন ইমরুল ও মোহাম্মদ মিঠুন। জিম্বাবুয়ের স্পিনারদের পাল্টা আক্রমণে চাপে ফেলে দেন দুজন। মাভুটাকে টানা দুই বলে ছক্কা মারেন ইমরুল। সিকান্দার রাজাকে তিনটি ছক্কায় ওড়ান মিঠুন, যার দুটি ছিল পরপর দুই বলে মাথার ওপর দিয়ে।

সম্ভাবনাময় জুটি ৭১ রানে থামে মিঠুনের বিদায়ে। আক্রমণে ফেরা কাইল জার্ভিসের বলে অযথা খোঁচা দিয়ে মিঠুন ফেরেন ৩৭ রানে।হ্যামস্ট্রিংয়ের টান লেগে শুরুতে বাইরে গিয়েছিলেন জার্ভিস। কিন্তু ফিরে দুর্দান্ত এক স্পেলে এলোমেলো করে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং। মিঠুনের পর মাহমুদউল্লাহ ও মিরাজও শিকার এই পেসারের। ২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩০তম ওভারে রান ৬ উইকেটে ১৩৯।

প্রায় ১৮ হাজার দর্শকে ভরা গ্যালারি তখন নিস্তব্ধ। ধীরে ধীরে সেই গ্যালারিতে আবার প্রাণ ফেরায় ইমরুল ও সাইফের জুটি। শুরুতে বেশ নড়বড়ে ছিলেন সাইফ, কিন্তু সময়ের সঙ্গে আত্মবিশ্বাস খুঁজে পান। ইমরুল তো ততক্ষণে হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। শুধু বিপর্যয় থেকে দলকে টেনেই তোলেনি এই জুটি, শেষ দিকে রানও তুলেছে ঝড়ের গতিতে।১১৮ বলে ইমরুল স্পর্শ করেন তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি। এরপর তার ব্যাট হয়ে ওঠে আরও উত্তাল। সেঞ্চুরির আগে ছিল তিন ছক্কা, সেঞ্চুরির পর ছক্কা মারেন আরও তিনটি। ইনিংসে চার ১৩টি। ৪৯তম ওভারে যখন আউট হয়ে ফিরছেন, নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে ১৪৪ রান।

সাইফ উদ্দিন ফিরেছেন পঞ্চাশ ছুঁয়েই। তবে ততক্ষণে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে জয়ের মতো রানের স্বস্তির আশ্রয়ে। জিম্বাবুয়ের রান তাড়ার শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ও সেফাস জুয়াও ৭ ওভারেই তোলেন ৪৮ রান।২৪ বলে ৩৫ রান করা জুয়াওকে বোল্ড করে নিজের প্রথম ওভারেই জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজুর রহমান। এরপর ক্রমে ভেঙে পড়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংও।

অভিজ্ঞ ব্রেন্ডন টেইলরকে দারুণ ডেলিভারিতে বোল্ড করেন নাজমুল ইসলাম অপু। বড় ভরসা সিকান্দার রাজাও শিকার এই বাঁহাতি স্পিনারের। প্রথম স্পেলের হতাশা ভুলে পরে তিন উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। নবম উইকেটে শন উইলিয়ামস ও কাইল জার্ভিস গড়েছেন ৬৭ রানের জুটি। তাতে ম্যাচের দৈর্ঘ্য বেড়েছে, কমেছে পরাজয়ের ব্যবধান। ম্যাচের শেষ বলে উইলিয়ামসন ছুঁয়েছেন ফিফটি। কিন্তু ম্যাচ কার্যত শেষ অনেক আগেই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৮ (লিটন ৪, ইমরুল ১৪৪, মাহমুদ ০, মুশফিক ১৫, মিঠুন ৩৭, মাহমুদউল্লাহ ০, মিরাজ ১, সাইফ ৫০, মাশরাফি ২*, মুস্তাফিজ ১*; জার্ভিস ৪/৩৭, চাতারা ৩/৫৫, টিরিপানো ০/৬০, মাভুটা ১/৪৮, রাজা ০/৩৭, উইলিয়ামস ০/৩২)।

জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ২৪৩/৯ (মাসাকাদজা ২১, জুয়াও ৩৫, টেইলর ৫, আরভিন ২৪, সিকান্দার ৭, উইলিয়ামস ৫০*, মুর ২৬, টিরিপানো ২, মাভুতা ২০, জার্ভিস ৩৭, চাতারা ২*; মাশরাফি ০/৫৫, মিরাজ ৩/৪৬, মুস্তাফিজ ১/২৯, অপু ২/৩৮, সাইফ ০/২৯, মাহমুদউল্লাহ ০/১১, ফজলে রাব্বি ০/১৬); ফল: বাংলাদেশ ২৮ রানে জয়ী, সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১-০তে এগিয়ে, ম্যান অব দা ম্যাচ: ইমরুল কায়েস