ইউনূসের শিনাজুরিতে হিলারী-নিজের লুটপাট শ্রমিক ঠকানো গোপন করে ফায়দা নেয়ার চেষ্ঠা
শফিক রহমান : বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার লুট করে শ্রমিকের টাকা মেরে বিদেশে নিয়ে লুটেরা ড.ইউনূসের শিনাজুরি চলছেই। বারাক ওবামার পর এবার ইউনূসের শিনাজুরিতে মদদ দিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক টুইট বার্তা পোস্ট করেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। একই বক্তব্য নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও শেয়ার করেন তিনি। এতে বলা হয়, ‘মহান মানবতাবাদী ও নোবেল পুরস্কারজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রয়োজনের মুহূর্তে সমর্থন দেয়ার জন্য আমিসহ ১৬০-এর বেশি বিশ্বনেতা পাশে এসে দাঁড়ান।
খোঁজ জানা গেছে, ২০১২ সালের দিকে নোবেলজয়ী বাংলাদেশি ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনের পারিবারিক বন্ধু; ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে ইউনূসের লাখ ডলার তহবিল জোগানোর পাশাপাশি ইউনূসকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলারের তহবিল জোগাতে হিলারির প্রভাব খাটানোর অভিযোগও যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে এসেছে।
তৎকালীন সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাসলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসনকে পাঠানো চিঠির সঙ্গে জয়ের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব চাওয়ার হুমকি দেওয়া বিষয়ক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও যুক্ত করে দিয়েছিলেন।
জয় বলে আসছিলেন, তিনি বৈধভাবে ১৭ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থেকে এলেও কখনও কোনো সমস্যার মুখে পড়েননি। কিন্তু ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানোর পর ওই সময় পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ এনে তদন্ত শুরুর হুমকি দিয়েছিলেন।
ওই বছর ১ জুন পাঠানো চিঠিটি নিজের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করেছিলেন সিনেটর গ্রাসলি। তাতে ‘ব্যবসায়ী’ ইউনূসের জন্য ‘বিশেষ খাতিরের’ অভিযোগের কথা বলা হয়েছিল। তদন্তের স্বার্থে কমিটির সামনে হাজির হওয়ার জন্য ঢাকায় তখন কাজ করে যাওয়া জন ডানিলোভিচকে প্রস্তুত রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছিল।
চিঠিতে তিনি বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বাইরে গিয়ে শুধু ব্যক্তিগত ও ক্লিনটন ফাউন্ডেশন থেকে উৎসারিত আর্থিক সম্পর্কের কারণে একটি সার্বভৌম সরকারের স্বাধীন তদন্তে হস্তক্ষেপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী (হিলারি) যদি তার ক্ষমতা ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে সেটা অগ্রহণযোগ্য।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে হিলারির ক্ষমতার সঙ্গে তার পারিবারিক ফাউন্ডেশন মিলেমিশে গিয়ে থাকলে সেটাকে ‘সমানভাবে অসঙ্গত’ বলেছেন গ্র্যাসলি। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, “এই তদন্ত আটকাতে প্রধানমন্ত্রীর ছেলের (জয়) বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব নেওয়ার হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র দপ্তরের কোনো ভূমিকা ছিল কি না, তা নির্ধারণ করা জরুরি।” পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময়কার হিলারির ই-মেইল পরে প্রকাশিত হলে তাতে দেখা যায়, ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে হাসিনা সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ঘোচাতে হিলারি ক্লিনটনের সহায়তা চাওয়ার ক্ষেত্রে ইউনূস নাছোড়বান্দা ছিলেন।
যাহোক, হিলারি ক্লিনটনের টুইট বার্তা ও ফেসবুক পোস্টে ১৮০ জনের বেশি বিশ্বনেতা ও নোবেলজয়ীর সইসংবলিত একটি বিবৃতির লিংক সংযুক্ত করা রয়েছে। ’প্রটেক্ট ইউনূস’ শীর্ষক ওই ওয়েবসাইটে সোমবার প্রকাশিত বিবৃতিটি মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে দেয়া একটি খোলা চিঠি। এতে ‘অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচারিক কার্যক্রম অবিলম্বে প্রত্যাহার’ এবং জাতীয় নির্বাচন ‘অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি তোলা হয়।
এ বিষয়ে পরদিন মঙ্গলবার সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সবকিছু আইন মতো চলে। আর এ দেশে বিচারাধীন বিষয়ে আমরা কথা বলি না। তাছাড়া আমি কে মামলা প্রত্যাহার করার? তিনি বলেন, কেউ যদি ট্যাক্স না দেয় আর শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে এবং সেই শ্রমিকের পক্ষে শ্রম আদালতে মামলা হলে আমাদের কি হাত আছে যে সে বিচার বন্ধ করে দেব?
সংবাদ সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার খুব অবাক লাগছে। অপরাধ করেননি, ভদ্রলোকের যদি এতটাই আত্মবিশ্বাস থাকত তাহলে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না।অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে এখন একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। আজই তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলার বিচারিক কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হঠাৎ করেই আলোচনায় এসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ড. ইউনূসকে নিয়ে আলোচনা ব্যাপকতা পায় গত রোববার। ওইদিন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাকে লেখা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি চিঠি শেয়ার করেন ড. ইউনূস। ১৭ আগস্ট তারিখ দেয়া ওই চিঠিতে ওবামা তাকে উদ্দেশ করে লেখেন, আমার প্রত্যাশা এ মুহূর্তে এ কথাটুকু আপনাকে শক্তি জোগাবে যে যাদের ভবিষ্যতের ওপর আপনি বিনিয়োগ করেছেন এবং আমাদের মধ্যে যারা সবার জন্য আরো ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করি; তারা সবাই আপনার কথা ভাবছি। এবং আমি আশা করছি, আপনি আপনার গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা পাবেন।
রোববারেই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি ড. ইউনূসকে হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ৩৪ বিশিষ্ট নাগরিক। এর পরদিনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে চিঠি প্রকাশ করেন ১৬০ নোবেলজয়ী ও বিশ্বনেতা। পরে এতে স্বাক্ষরকারীর সংখ্যা আরো বেড়ে বর্তমানে ১৮০ ছাড়িয়েছে।
ওদিকে ইউনূসের পক্ষ নিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। তিনি মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইউনূসকে ‘জাতির সূর্যসন্তান’ অভিহিত করে তাকে ‘হেনস্তা করা বন্ধের’ আহ্বান জানান। বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা সব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ওনাকে যারা ছোট করতে চান, অপমান করতে চান, তারা আরেকবার জন্ম নিলেও ওনার সমান উচ্চতায় যেতে পারবেন না। এ অনিবার্য সত্য মেনে নিয়ে ওনাকে হেনস্তা বন্ধ করুন। এসব মামলাবাজি বন্ধ করুন।
অধ্যাপক ইউনূসের বিপক্ষে চলমান মামলা নিয়ে বিতর্কে যুক্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারাও। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যারা ড. ইউনূসের মামলা স্থগিত করতে বলেন, মামলা কীভাবে স্থগিত হবে? মামলার কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ ঠিক আছে কিনা দেখুন। হাওয়ায় একটি বিবৃতি ছেড়ে দিলেন! আবার এর সঙ্গে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি! তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে বানচাল করতে চান। বাংলাদেশে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ভণ্ডুল করতে তারা নতুন প্লাটফর্ম করতে চান। পরিষ্কার বলতে চাই, বাংলাদেশের মাটিতে এ অশুভ খেলা আমরা খেলতে দেব না।
মামলা প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নোবেল পেয়ে অপরাধ করেও অব্যাহতি পেয়ে যাবেন, এটা কোন দেশের আইনে আছে? শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করেন যিনি, তার মতো নোবেল বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সন্তানের আমাদের প্রয়োজন কী? নোবেল বিজয়ীরা যে বিবৃতি দিয়েছেন, সেই বিবৃতির স্পেস কিনতে ২ মিলিয়ন ডলার লাগে। এ অর্থ কোথা থেকে এল?’
প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিনও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট মিলনায়তনে গতকাল জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আইন সমিতি আয়োজিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে বিবৃতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কোনো দেশের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে অন্য দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারে না। আমার মতে, তারা প্রকৃত সত্য জানেন না। প্রকৃত সত্য জানলে তারা কখনো এমন বিবৃতি দিতেন না। এটা এক ধরনের ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, যে মামলা সুপ্রিম কোর্ট থেকে চলতে বাধা নেই বলা হয়েছে সেই মামলা নিয়ে এমন বিবৃতি বিস্ময়কর। আমাদের বিচারাধীন মামলার বিরুদ্ধে তারা বিবৃতি দেয়, এটা তো হতে পারে না।