• মঙ্গলবার , ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র-দুদকে দুই বস্তা বস্তা তথ্য উপাত্ত দেয়ার পরও অভিযোগ


প্রকাশিত: ১২:০৪ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারি ১৫ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৯৯ বার

 

Untitled air Tasbir--www.jatirkhantha.com.bdশফিক আজিজ.ঢাকা:
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিন বছর আগে দুদকে দুই বস্তা বস্তা তথ্য উপাত্ত দেয়ার পরও বিদেশে ৪১৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। যে প্রতিষ্ঠানটি দেশে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার মত সম্পদ গড়েছেন তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে ৪১৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

এ অভিযোগ কতটা শোভনীয় এ প্রশ্ন এখন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের। বনিক বার্তা নামের একটি পত্রিকার রিপোর্টের সূত্র ধরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে দুদক।
দুদক ওই পত্রিকাটির রিপোর্টকে পুঁজি করে বলেছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছে।এই কেনাকাটা প্রক্রিযায় কৌশলে দেশ থেকে ৪১৫ কোটি টাকা পাচার করে দেয়া হয়।
সূত্র জানায়, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিরুদ্ধে এই গভীর ষড়যন্ত্র শুরু হয় ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে। ওই সময় বনিক বার্তা নামের একটি পত্রিকায় , ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছে বলে খবর প্রচার করা হয়।এর জের ধরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে দুদক। তৎকালীন সময়ে দুদক কর্মকর্তা মোনায়েম ওই পত্রিকার রিপোর্টের ভিত্তিতে তদন্ত করেন।তখন তাঁকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ  দুই বস্তা
বস্তা তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করে প্রমাণ করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রদ্দত্ত অভিযোগ মিথ্যা।
এমনকি ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের উড়োজাহাজ ২০ বছরের পুরনো নয় বলে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়।এর ৩ বছর আবারও সেই একই অভিযোগ তোলা হয় সম্প্রতি।
United-tac-www.jatirkhantha.com.bdএ সম্পর্কে লন্ডনে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানটির এমডি ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয় দৈনিক জাতিরকন্ঠের সঙ্গে। তিনি জানান,আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা। এর আগে ২০১২ সালেও একই অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
তিনি জাতিরকন্ঠকে বলেন, আগের দুদক কর্মকর্তা সঠিকভাবে রিপোর্ট প্রদান না করায় আমরা দূভোর্গের শিকার হচ্ছি। তিনি জানান, যে প্রতিষ্ঠান প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক তারা বিদেশে ৪১৫ কোটি টাকা পাচার করতে যাবে কেন? তাছাড়া আমাদের উড়োজাহাজ কেনার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারের মন্ত্রণালয়, সিভিল এভিযেশন অথরিটি সবাই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে তারা কিছু ধরতে পারলো না অথচ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা বিদেশে ৪১৫ কোটি টাকা পাচার করেছি।
দুদক জানায়,
দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) হাজির হওয়ার জন্য মার্চ পর্যন্ত সময় চেয়েছেন বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী। গতকাল রোববার তিনি এই আবেদন করেন।
উড়োজাহাজ ক্রয়ে দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে তাসবিরুল চৌধুরীকে তলব করে ৮ ফেব্রুয়ারি দুদকে হাজির থাকতে বলা হলেও তিনি হাজির হননি।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী সময় চেয়ে কমিশনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। আবেদনে জানান, তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন স্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন। সেখান থেকে ফিরে মার্চের শুরুতে দুদকের uuuuuuজিজ্ঞাসাবাদে হাজির হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

দুদক সূত্রটি জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারদর থেকে বেশি দামে উড়োজাহাজ কেনার মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে ক্যাপ্টেন তাসবিরুলের বিরুদ্ধে। অনিয়মের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশি দামে ২০ বছরের পুরোনো উড়োজাহাজ কিনে শেয়ারবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি দল এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।

সূত্রটি জানায়, দরপত্রের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে কেনাকাটার নিয়ম থাকলেও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়াই শুধু পরিচালনা পর্ষদের একক সিদ্ধান্তে উড়োজাহাজ কিনেছে। নয়টি উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে জ্বালানি সাশ্রয়ের বিষয়টিও দেখা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়া একই সময়ে কেনা একই মডেলের উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। এমডি-৮৩ মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে দাম দেখানো হয় যথাক্রমে ৭৬ লাখ ডলার, ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার ও ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৮০ ডলার।

পরিচালনা পর্ষদের চাপের মুখে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ২০১৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী পদত্যাগ করেন। পরিচালন ব্যয় জোগান দিতে না পারায় বিমান সংস্থাটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পথের সব বিমান চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়। দুদিন পরে ক্যাপ্টেন তাসবিরুলকে আবার স্বপদে ফিরিয়ে এনে সংকট নিরসন করা হয়।

এদিকে একই অভিযোগ অনুসন্ধানে ১২, ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ইউনাইটেড এয়ারের ১৬ জন পরিচালক ও সংস্থাটির ক্রয় ব্যবস্থাপককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুদক।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা জাতিরকন্ঠকে জানান, এ দেশের এভিয়েশন শিল্পকে যখন আরো সমৃদ্ধ করার প্রত্যয়ে নিয়ে কাজ শুরু করে যাচ্ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় দেশ বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের ষড়যন্ত্র।
অভিযোগ উঠেছে, দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমাত্র এই এভিয়েশন প্রতিষ্ঠানটি যাতে আরো প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশে বিদেশে ব্যবসায়িক সাফল্য ও সুনাম কুড়াতে না পারে সেজন্য দেশবিরোধী একটি চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে দুদক লেলিয়ে দিয়েছে। এরা চায়না দেশীয় প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ আরো এগিয়ে যাক এবং এর বহরে যুক্ত হোক অত্যাধুনিক বোয়িং-৭৭৭ এর মত উড়োজাহাজ।
জানা গেছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ (বিডি) লিমিটেড বাংলাদেশের পূঁজিবাজারে বিমান পরিবহন সেক্টরে প্রথম এবং অন্যতম বেসরকারী বৃহত্তর বি ১০ জুলাই ২০০৭ এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অন্যতম বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে সিলেটে উদ্বোধনী ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে একমাত্র বিমান সংস্থা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। গত সাত বছরে ইউনাইটেড অভ্যন্তরীন ও আন্তজার্তিক রুটে আটচল্লিশ হাজার ফ্লাইট অত্যন্ত সফলভাবে পরিচালনা করেছে এবং ইতিমধ্যে প্রায় বিশ লাখ যাত্রী এবং ৫০০০ টন কার্গো পরিবহন করেছে বিভিন্ন গন্তব্যে। এছাড়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ইতোমধ্যে কয়েক হাজার চাকুরীর সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এক লাখ ছত্রিশ হাজার শেয়ার হোল্ডার রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের।ফ্লাই ইউর ওন এয়ারলাইন
স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সেবা প্রদানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ গত সাত বছরে অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটে উল্লেখযোগ্য মার্কেট শেয়ারের অংশীদার। বিমান পরিবহন সেক্টরে ফ্লাইট সিডিউল, সেবা ও নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব ব্র্যান্ড পরিচিতি লাভ করেছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ বর্তমানে ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুট জেদ্দা, দুবাই, মাস্কাট, দোহা, কুয়ালালামপুর, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কাঠমুন্ডু, কলকাতা এবং চট্টগ্রাম থেকে কলকাতা রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তর্জাতিক রুট ছাড়াও অভ্যন্তরীণ সকল রুটে যেমন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, যশোর, রাজশাহী, সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী ও বরিশালে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
উল্লেখ্য যে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ আগামী ১৭ জুলাই থেকে প্রতিদিন এটিআর-৭২ এয়ারক্রাফটের পাশাপাশি দু’বার ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে  ১৭০ আসনের জেট ইঞ্জিন বিশিষ্ট এয়ারক্রাফট এমডি-৮৩ পরিচালনা করতে যাচ্ছে।
১০ জুলাই ২০০৭ তারিখে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ৩৭ আসন বিশিষ্ট ড্যাশ ৮-১০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউনাইটেডের বিমান বহরে বর্তমানে রয়েছে একটি ড্যাশ-৮-১০০, তিনটি এটিআর-৭২, পাঁচটি এমডি-৮৩ এবং দু’টি এয়ারবাস-৩১০ সহ মোট এগারোটি এযারক্রাফট।
শীঘ্রই চারটি এয়ারবাস ৩২০ ও দু’টি এটিআর-৭২ বিমান সংযোজন করে বহরকে আরও সমৃদ্ধশালী করবে।
এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক গন্তব্য ঢাকা থেকে করাচি ও মদিনা রুটে ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। নিকট ভবিষ্যতে রিয়াদ, দাম্মাম, আবুধাবী, শারজাহ ও ইয়াগুন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড।
গত ৭ বছরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের অভাবনীয় সফলতার জন্য দেশের কাগজ বিজনেস এ্যাওয়ার্ড-২০০৭, বেগম রোকেয়া শাইনিং পারসোনালিটি এ্যাওয়ার্ড-২০০৭, অভ্যন্তরীন ও আঞ্চলিক রুটে সফলতার জন্য অর্থকণ্ঠ বিজনেস এ্যাওয়ার্ড- ২০০৮, ২০১১, ২০১২, ২০১৩, বিজনেস এক্সপ্রেস বিজনেস এ্যাওয়ার্ড-২০০৯, ইবিএল-মনিটর বেস্ট ডমেস্টিক এয়ারলাইন অব দ্যা ইয়ার-২০১০, ২০১২ এনআরবি ইনভেস্টমেন্ট অব দ্যা ইয়ার-২০১০, বিজনেস এশিয়া বিজনেস এ্যাওয়ার্ড-২০১২, মিরর এভিয়েশন এ্যাওয়ার্ড-২০১৩, বিজনেস এশিয়া মোস্ট রেসপেক্টেড কোম্পানী এ্যাওয়ার্ড-২০১৩-এ ভূষিত হয়েছিল।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দঘণ মূহুর্তে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমরা যেকোন ধরনের প্রতিযোগিতার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আমাদের বিমান বহরে অধিক সংখ্যক আধুনিক বিমান যুক্ত করে চলেছি। বহরে অধিক সংখ্যক বিমান ও অধিক গন্তব্য সম্প্রসারনের লক্ষ্যে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কাজ করছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমরা সকলেই আনন্দিত ও গর্বিত। গত সাত বছরে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বহরে ১১টি বিমান যুক্ত হয়েছে। ইনশাল্লাহ  পরবর্তী সাত বছরে ইউনাইটেড এর বহরে মোট ২৫টি বিমান যুক্ত হবে যা এ দেশের এভিয়েশন শিল্পকে আরো সমৃদ্ধ করবে।