• শুক্রবার , ২২ নভেম্বর ২০২৪

আলোহীন রাতের ঢাকায়-ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে


প্রকাশিত: ১১:৩৭ পিএম, ৫ জুলাই ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮২ বার

স্টাফ রিপোর্টার : ঈদের ছুটির পর অফিস খোলার দিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দেড় শতাধিক ছিনতাইকারী। এরমধ্যে ছিনতাইকারীদের হাতে কনস্টেবল খুনের দায়ে গ্রেফতারকৃতরাও রয়েছেন। এই যখন অবস্থা তখন রাতের ঢাকা যে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে তা আরো ভয়ার্ত হয়ে ওঠে ঢাকায় ল্যাম্পপোস্টে লাইট না থাকা। লাইট আছে কিন্তু জলে না।এ যেন ছিনতাইকারীদের সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠে! সড়কে অন্ধকারের সুযোগ নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে অনেকে টাকা, গহনা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন। কিন্তু সেদিকে ভুক্ষেপ নেই সিটি মেয়রদের। নগরবাসী মনে করছে এই গাফিলতি একদিকে দুই সিটি কর্পোরেশনের, অন্যদিকে পুলিশের। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন ট্যাক্স নেয় ঠিকই কিন্তু রাতে যে সড়কে বাতি জলে না সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সন্ধ্যা নামলেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রধান সড়কে জ্বলছে না বাতি। নির্দিষ্ট দূরত্বে পর পর ল্যাম্প পোস্টগুলো দাঁড়িয়ে থাকলেও সেগুলোর লাইট জলে না।। দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে নগরবাসীকে‌। এছাড়া, রাতে প্রধান সড়কে ল্যাম্প পোস্টের বাতি যেমন থাকে না, তেমনই ওইসব সড়কে দেখা মেলে না সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশের টহল।

সরেজমিনে মিরপুর তালতলা বাসস্ট্যান্ডমিরপুর তালতলা বাসস্ট্যান্ড
পুলিশ জানিয়েছে, ঈদের চার দিনের ছুটিতে রাজধানীতে শতাধিক চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বলছে, ভোর রাতের দিকে বিভিন্ন সড়কে ছিনতাইকারীরা সক্রিয় থাকে। তারপরও ছিনতাই প্রতিরোধে বাড়ানো হয়েছে থানা পুলিশের কার্যক্রম। বাড়ানো হয়েছে পুলিশি টহল। বিভিন্ন সড়কে ল্যাম্প পোস্টে আলো না থাকার বিষয়ে নানান অজুহাত দেন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। এমনকি সড়কে যে আলো জ্বলে না, তাদের অনেকের তাও জানা নেই।

মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কাফরুল, আগারগাঁও, মহাখালী, খিলগাঁও, পল্টন, দৈনিক বাংলার মোড়, হাইকোর্টের গেট থেকে দোয়েল চত্বর হয়ে টিএসসি হয়ে চারুকলা ইনস্টিটিউট পর্যন্ত, পরীবাগ, বাংলামোটর থেকে কাওরান বাজার মোড়, ফার্মগেট মোড়, শ্যামলী সিগন্যাল, কাজীপাড়া, মিরপুর-২-এর প্রধান সড়কে ল্যাম্প পোস্ট থাকলেও জ্বলছে না আলো। লোকজনকে অন্ধকারের মধ্যেই চলাচল করতে দেখা যায়। সরেজমিন দোয়েল চত্বরে শাহবাগ থানার একটি টিম, রাজারবাগ মোড়ে পল্টন থানার একটি পেট্রোলিং টিম, খামারবাড়ি এলাকায় শেরেবাংলা নগর থানার একটি পেট্রোলিং টিম ছাড়া আর কোথাও পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়েনি।

রাতে যারা জরুরি কাজে রিকশা বা সিএনজিতে বের হন, তাদের আতঙ্কের মধ্যেই চলাচল করতে দেখা গেছে। অনেকে বলেছেন, সড়কে ল্যাম্পপোস্টে লাইট না জ্বলায় চলাচল করতে ভয় লাগে।মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর তালতলায় অন্ধকারে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আশরাফ। তিনি বলেন, পাশের গলিতেই আমার বাসা। জরুরি কাজে হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। বাসা থেকে মূল সড়কে আসতে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। এ পর্যন্ত আসতে সড়কে কোনও রোডলাইট দেখলাম না। অন্ধকারে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। ভয় লাগছে, কখন কী হয়ে যায়।

জরুরি কাজ শেষে নারায়ণগঞ্জ থেকে পরিবার নিয়ে প্রাইভেটকারে রাজধানীর মিরপুরে যাচ্ছিলেন জাহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী। ফার্মগেট এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে।তিনি বলেন, রাজধানীতে ঢোকার সময় বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টে আলো জ্বলতে দেখিনি। অন্ধকারে বিভিন্ন জায়গায় লোকজনের জটলা দেখেছি। কীসের জটলা সেগুলো বুঝতে পারিনি। অন্ধকার থাকায় ভয়ে কাছে যাইনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাতে কথা হয় রিকশাচালক সলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাইকোর্ট-দোয়েল চত্বর-টিএসসি, এই রাস্তায় লাইট না থাকার কারণে যাত্রীরা এদিক দিয়ে আসতে চান না। অন্য রাস্তা দিয়ে ঘুরে আসতে হয়। অন্ধকারে চুরি ও ছিনতাইয়ের ভয় থাকে। ফলে এই পথ দিয়ে আমরাও বেশি আসি না।দোয়েল চত্বর এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা শাহবাগ থানা পুলিশের এসআই আবুল কালাম বলেন, আপনার মতো আমরাও দেখতে পাচ্ছি— হাইকোর্ট মোড় থেকে দোয়েল চত্বর, টিএসসি এবং চারুকলা সড়কে কোনও রোডলাইট নেই। ঊর্ধ্বতন স্যারেরা সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তারাই এসব বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন। অন্ধকারের কারণে চুরি-ছিনতাই যেন না হয়, সেজন্য আমরা দায়িত্বে রয়েছি।

বাংলামোটর হয়ে কাওরান বাজারের দিকে যেতে মূল সড়কে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সড়কে কোনও আলো নেই। একটু সামনে যেতেই দেখা গেলো মানুষের জটলা। পান্থকুঞ্জ পার্কের পাশে কয়েকজন যৌনকর্মী ঘোরাফেরা করছেন। পথচারীদের নাজেহাল করছেন তারা। কেউ কেউ হারাচ্ছেন টাকা-পয়সা। তবে কেউ অভিযোগ করতে রাজি হননি।
মিরপুর সনি মোড় থেকে কিডনি হাসপাতালের সামনের সড়কমিরপুর সনি মোড় থেকে কিডনি হাসপাতালের সামনের সড়ক
রাত একটার দিকে মহাখালী মোড়ে উত্তরার বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন আজাদ মিয়া। তিনি বলেন, যেখানে বাস দাঁড়াবে, সেই জায়গাটা অন্ধকার। সেজন্য এদিকে দূরে এসে আলোতে দাঁড়িয়েছি। বাস এলে ওদিকে যাবো। অন্ধকারে দাঁড়ালে ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার ভয় আছে।

রাজধানীর মিরপুরে কিডনি হাসপাতালের সামনে থেকে সনি সিনেমা হলের মোড় পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও কোনও আলোর দেখা মেলেনি। জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুরাদ হোসেন বলেন, আপনি যে সড়কের কথা বলছেন, সেটি আমার এলাকার মধ্যে পড়েছে, আবার অন্য ওয়ার্ডেও পড়েছে। রোডলাইটের আলো না থাকার বিষয়টি ডিএনসিসি অঞ্চল-২-এর কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকা, পরীবাগ এবং বাংলামোটর মোড় থেকে কাওরান বাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে লাইট জ্বলছে না স্বীকার করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (ওয়ার্ড ১৬, ১৭ ও ২১) নার্গিস মাহতাব বলেন, এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। কী কারণে আলো জ্বলছে না, সে বিষয়ে খোঁজ-খবর নেবো।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের সামনের সড়ক থেকে দৈনিক বাংলা মোড় এবং আশপাশের সড়কের দুই পাশেই ছিল ঘুটঘুটে অন্ধকার। সড়কে লাইট জ্বলছে না কেন, জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এনামুল হক বলেন, ঈদের ছুটির কারণে কোনও সমস্যা হয়েছে কিনা, খতিয়ে দেখবো।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, অনেক সড়কেই আলো জ্বলছে না। অন্ধকার থাকায় অপরাধ ঘটলেও তা সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে না। যেসব সড়কে আলো নেই সংশ্লিষ্ট থানাগুলোকে সেসব জায়গায় টহল বাড়ানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকেও সিটি করপোরেশনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সড়কের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকি। আর রাস্তায় রোডলাইটের বিষয়টি দেখভাল করে সিটি করপোরেশন।ফলে রাস্তায় লাইট না থাকলে ছিনতাইকারীদের ধরা যায়না।