আলভিরা ট্রাজেডি-বিচার করবে কে?
স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীতে আবাসিক ভবনের ‘ত্রুটিপূর্ণ লিফটে’ আটকা পড়ে শিশু আলভিরা রহমানের (১০) মৃত্যুর পর এখনো মামলা হয়নি। এ ঘটনায় ডিসি মতিঝিল আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘এখনও শিশু আলভিরার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও অভিযোগ দেয়নি। যদি তারা এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়, আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
ওদিকে ভুক্তভোগী পরিবার কী আইনি প্রতিকার পেতে পারে তা নিয়েও চলছে আলোচনা। আইনজীবীরা বলছেন, ক্ষতিপূরণ চাওয়া ছাড়া আর কোনও নির্ধারিত আইন নেই। আদালতে ন্যায়পরতা আইনে ক্ষতিপূরণ চাওয়া যেতে পারে। তবে কতটা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে, সেটা নির্ভর করবে আদালতের বিবেচনার ওপর।
পুলিশও বলছে, পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।‘লিফট দুর্ঘটনায়’ প্রতিকার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী বলেন, ‘আইনিভাবে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার বাইরে কিছু নেই। ন্যায়পরতার আইনে আদালতে ভুক্তভোগী মামলা করবেন। এ ধরনের ঘটনায় ঠিক কত টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, এটা আদালতের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে।’
গত ২৯ মার্চ রাত ৯টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলীবাগের ‘গ্রিন পিস’ নামের বহুতল ভবনের ১৬ তলায় লিফটের দরজায় আটকে গুরুতর আহত হয় আলভিরা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার দিন আলভিরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে লিফটে ওঠার সময় দরজা দ্রুত বন্ধ হয়ে যায়। এতে লিফটের দুই দরজার মাঝখানে আটকা পড়ে সে। লিফটের দরজা আটকে যাওয়ার পর উপরে দিকে উঠে গেলে মাথায় আঘাত পায় সে। দ্রুত উদ্ধার করে স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আলভিরার পরিবারের অভিযোগ, সেসময় লিফটের সেন্সর কাজ করছিল না। এ কারণে তারা তাদের সন্তান হারিয়েছেন। আর এর জন্য ভবন কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন তারা।ভবন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে নিহত আলভিরার চাচা রাফি ইশতিয়াক পিয়াল বলেন, ‘আমাদের সবার মানসিক অবস্থা ভালো না। আমরা এখন এ বিষয়টা নিয়ে ভাবিনি। এ দুর্ঘটনার দায় ভবন কর্তৃপক্ষের। তাদের অবহেলার কারণেই আমরা আমাদের সন্তানকে হারিয়েছি।’
‘ত্রুটিপূর্ণ লিফটে’ আটকে শিশু আলভিরা রহমানের মৃত্যুর তিন দিন পরও সেই লিফট মেরামত করা হয়নি। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভবনের ছয়টি লিফটের দরজার সেন্সর দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে না। এটা নিয়ে বারবার বলা হলেও ভবন কর্তৃপক্ষ কানে তোলেনি। তাদের অবহেলার কারণে শিশু আলভিরার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
আলভিরা যে লিফটে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলশান্তিনগর চামেলীবাগ ‘গ্রিন পিস’ ভবনটিতে গিয়ে দেখা গেছে, বহুতল ভবনটির তিনটি টাওয়ারের জন্য ছয়টি লিফট রয়েছে। এই ছয় লিফটে উঠা-নামা করেন ১৮০ ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা। ভবনটির স্টাফদের ইনচার্জ রঞ্জন রায় জানান, লিফট ছয়টি থাকলেও লিফটম্যান রয়েছেন তিন জন।
সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তিন জন লিফটম্যান ৬টি লিফটে কাজ করেন বলে জানান রঞ্জন রায়। তিনি বলেন, ‘ওইদিন লিফটে কোনও লিফটম্যান ছিল না। আর ভবনের লিফটগুলো প্রতিমাসে একবার করে পরীক্ষা করানো হয়।’ তারপরও শিশু আলভিরা দুর্ঘটনার শিকার হওয়া লিফটির সেন্সর যে কাজ করছিল না, সেটা তারা বুঝতে পারেননি বলে দাবি করেন রঞ্জন রায়।
নিহত আলভিরার চাচা রাফি ইশতিয়াক পিয়াল বলেন, ‘আমরা সাত বছর ধরে এই লিফটি মেরামত করার জন্য বলে আসছি। কিন্তু তারা করেনি। গত পাঁচ বছর ধরে বলা হচ্ছে লিফটম্যান দেওয়ার জন্য। সেটাও তারা দেয়নি। যে কজন লিফটম্যান আছে, তাদের দিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষ বাজার করা ছাড়া আর কোনও কাজে লাগায় বলে চোখে পড়ে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই একই লিফটে চার বছর আগে আরও এক শিশু আটকা পড়ছিল। সেই মেয়েটি আলভিরার বাবার বন্ধুর মেয়ে। ১৫ তলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত নিয়ে আসছিল। আমি নিজে তখনকার দুর্ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম। শুধুমাত্র অবহেলার কারণে এই ঘটনাগুলো হচ্ছে।’
আগে থেকেই লিফটিতে ত্রুটি থাকার বিষয়টি জানিয়েছেন ভবনটির একাধিক বাসিন্দা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী বাসিন্দা বলেন, ‘লিফটের ঝামেলা পুরনো। এত বড় ভবনে লিফটগুলো যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় না। ঠিক করার জন্য আগেও বলা হয়েছে ভবন কর্তৃপক্ষকে। তারা কর্ণপাত করেনি।’নিহত আলভিরার পরিবার ও ভবনের বাসিন্দাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে ‘গ্রিন পিস’ ভবনে মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।