• শুক্রবার , ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

আরামবাগ ক্লাবের জুয়াড়ীদের তান্ডব বাফুফে ভবনে-


প্রকাশিত: ২:২৮ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ১৫ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭৭ বার

bfufaখোকন দাস:    আরামবাগ ক্লাবের জুয়াড়ীদের তান্ডবের চিত্র এখনও বাফুফে ভবনেরা।মঙ্গলবার অনেক রাত পর্যন্ত মতিঝিল থানায় ছিলেন স্থানীয় কাউন্সিলর  ও আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি মোমিনুল হক সাঈদ।  তিনি  মধ্যস্ততা করার চেষ্ঠা করছেন। এদিকে এখনও এলাক্য় থমথমে অবস্থা।পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি আসল জুয়াড়ীদের।

ঢিলের আঘাতে ভেঙে গেছে বাফুফে কর্মকর্তাদের কক্ষের জানালার কাচ। নিচতলার স্টোর রুমের সামনে পড়ে আছে কাচের টুকরো। সমর্থকদের তাণ্ডবের পর বাফুফে ভবন যেন এখ  বাফুফেঘড়ির কাঁটা বিকেল পাঁচটা ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অভ্যর্থনাকক্ষে বসা সদ্য নেপালজয়ী বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ মহিলা দলের রুমা, মৌসুমী, সানজিদারা। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের অডিশনে যোগ দিতে গাড়ির অপেক্ষায় ছিল এই মেয়েরা। একই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ময়মনসিংহ থেকে এসেছেন কলসিন্দুর স্কুলের কোচ মফিজউদ্দিন। হাসিমুখে ফুটবলাররা তাঁর সঙ্গে কুশল বিনিময় করছিল। কিন্তু হঠাৎই বাফুফে ভবনে ঢুকে একদল যুবক আচমকা ভাঙচুর চালাতে শুরু করলে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে তারা। ভবনের কাচ, পার্কিংয়ে থাকা বাফুফে কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের গাড়ি—ভাঙচুর থেকে রেহাই পায়নি কিছুই। ফুটবলার, কর্মচারীরা আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন।
এতে কেউ হতাহত না হলেও ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় চলমান বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ফুটবল স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাফুফের পেশাদার লিগ কমিটি। স্থগিত করা হয়েছে পূর্বনির্ধারিত তারিখের মধ্যবর্তী দলবদলও। ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল এই দলবদল।

ঘটনার সূত্রপাত বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ ফুটবলের আরামবাগ-বাংলাদেশ পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাবের ম্যাচকে কেন্দ্র করে। কমলাপুর স্টেডিয়ামের ওই ম্যাচে কাল পুলিশের কাছে ৩-২ গোলে হারে আরামবাগ। হার মেনে নিতে পারেননি ক্লাবটির কর্মকর্তাসহ সমর্থকেরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ম্যাচের শুরু থেকে উচ্চস্বরে রেফারিকে গালাগাল করতে থাকে তারা। ম্যাচ শেষে উচ্ছৃঙ্খল সমর্থকদের একটা দল সহকারী রেফারি মনির হোসেনের মাথা ফাটিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে স্টেডিয়ামের পার্কিংয়ে রাখা কয়েকটি মোটরসাইকেল। সেই তাণ্ডবলীলা শেষে মিছিল করে মতিঝিলের বাফুফে ভবনে আসে ওই সমর্থকেরা। লাঠিসোঁটা হাতে প্রায় ৩০-৩৫ জনের একটি দল নিরাপত্তারক্ষীকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বাফুফে ভবন এলাকার ভেতরে ঢুকে আচমকা গাড়ি ও ভবনের কাচ ভাঙতে শুরু করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পার্কিংয়ে থাকা প্রথম আলোর উপ ক্রীড়া-সম্পাদক পবিত্র কুন্ডুর গাড়িও। ভবনের ভেতরে ঢুকে অভ্যর্থনাকক্ষের কাচের দরজা ভাঙচুর করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা, চতুর্থ তলায় এসএ গেমসের ক্যাম্পে থাকা জাতীয় দলের মেয়েদের কক্ষের দিকেও পাথর ছুড়ে মেরেছে। আতঙ্কে কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ফুটবলাররা। মিনিট দশেক চলে এই তাণ্ডব।

দেশের সর্বোচ্চ ফুটবল সংস্থার কার্যালয়ে এসে এভাবে কেউ হামলা করে যাবে, এটা মানতেই পারছেন না বাফুফের সহসভাপতি বাদল রায়, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’ ক্লাবগুলোর এমন আচরণ বদলানো উচিত বলে মনে করেন তিনি, ‘হেরে গেলে প্রতিপক্ষ দল বা রেফারিকে গালাগালি করা, ভবনে এসে আক্রমণ করা, মিছিল করা—ইদানীং ক্লাবগুলোর মধ্যে এমন প্রবণতা দেখছি। এগুলো বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ফুটবল চালানো মুশকিল হয়ে যাবে।’

পুলিশ দলের ম্যানেজার এবং বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান মাঠে বসেই দেখেছেন আরামবাগ সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খলতা। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মারুফ বললেন, ‘ওরা ম্যাচের শুরু থেকেই রেফারিকে গালাগালি করছিল। মনে হয়েছে এই ম্যাচটি পণ্ড করার উদ্দেশ্যেই মাঠে এসেছিল তারা।’

ঘটনার পরপরই আরামবাগ ক্লাব অফিস ঘিরে ফেলে পুলিশ। পরে চালানো হয় তল্লাশিও। নিরাপত্তা বাড়ানো হয় বাফুফে ভবনের। ভাঙচুরের ১৫ মিনিট পর পুলিশসহ বাফুফে ভবনে আসেন আরামবাগ ক্লাবের সভাপতি মোমিনুল হক সাঈদ। তিনি ঢাকা (দক্ষিণ) যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং স্থানীয় কাউন্সিলর। ঘটনা সম্পর্কে জানতে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানিয়েছেন, ‘ধারণা করছি, পরাজিত দলের সমর্থকেরা এটা করেছে। ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে, তা এখনই স্পষ্ট করে বলা যাবে না। তবে ম্যাচ কমিশনার ও রেফারির রিপোর্ট হাতে পেলে আমরা সে অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেব।’তবে কাল রাতেই ঘটনার পুরো দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েেছ আরামবাগ ক্লাব।