আমেরিকার নয়া চাল ড.উইনূস
হয়রানি বন্ধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ১০০ নোবেলজয়ীর চিঠি
শফিক রহমান : এবার আমেরিকার নয়া চাল দিয়েছে ড.উইনূস নিয়ে। তারা বলিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বিচারের নামে হয়রানি না করতে।
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে চিঠি লেখানো হয়েছে ১০০ জন নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কে দিয়ে। ইউএসএর এই চাল স্পষ্ট হচ্ছে চিঠিটির শুরুতেই তারা দেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে একটি নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছে। যে চাপ আমেরিকা বেশ কিছুদিন ধরে দিয়ে আসছে।
যাহোক প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা আপনাকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী ও নাগরিক সমাজের নেতা এবং বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনার জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে, আমরা তার প্রশংসা করি।
সম্প্রতি বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের যে হুমকি দেখেছি—তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া এবং নির্বাচনী প্রশাসন দেশের সব বড় দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগের দুটি জাতীয় নির্বাচনে বৈধতার অভাব ছিল।
পরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রসঙ্গ টেনে লেখা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের জন্য যে হুমকিটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন তা হলো—নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন যে সম্প্রতি তাঁকে টার্গেট করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা ৪০ জন বিশ্বনেতার পাঠানো চিঠির প্রসঙ্গ টেনে চিঠির এই পর্যায়ে লেখা হয়, ‘এই চিঠিটি ৪০ জন বিশ্বনেতার দ্বারা আপনার কাছে পূর্বের আবেদনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, যাঁরা তাঁর নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন।
আমরা সসম্মানে অনুরোধ করছি, আপনি যত শিগগির সম্ভব অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ করুন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত আইন বিশেষজ্ঞসহ আপনার দেশের নিরপেক্ষ বিচারকদের একটি প্যানেল দ্বারা অভিযোগগুলো পর্যালোচনা করা হোক। আমরা নিশ্চিত তাঁর (ইউনূস) বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী এবং শ্রম আইনের মামলাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনা করলে তাঁকে খালাস দেওয়া হবে।
চিঠির শেষ দিকে লেখা হয়েছে, আপনি জানেন, অধ্যাপক ইউনূসের কাজ আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণামূলক। কীভাবে সামাজিক ব্যবসা আন্তর্জাতিক অগ্রগতির জন্য একটি শক্তি হতে পারে, যার ফলে শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ হয়। সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশিরা কীভাবে বৈশ্বিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন—তার একটি প্রধান উদাহরণ তিনি। আমরা আন্তরিকভাবে কামনা করি, তিনি নিপীড়ন বা হয়রানি মুক্ত হয়ে তাঁর কাজ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবেন।
আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি নিরপেক্ষ এবং ন্যায্য পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। পাশাপাশি আসন্ন মাসগুলোতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সমস্ত মানবাধিকারের প্রতি সম্মান নিশ্চিত করবেন ৷ সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এ বিষয়গুলো সমাধান করা হয়—তা ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখতে আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের সঙ্গে শামিল হবো।
এর আগে ১৭ আগস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজের গুরুত্বপূর্ণ কাজ চালিয়ে যেতে মুক্ত থাকতে পারবেন। সর্বশেষ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকিসহ শ্রম আইনে বেশ কয়েকটি মামলা চলছে। সর্বশেষ সোমবারও (২৮ আগস্ট) তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে ১৮টি মামলা হয়েছে।