আন্ডারওয়ার্ল্ডে সোনার চেয়েও দামি সাপের বিষের জমজমাট ব্যবসা
এস রহমান : আন্ডারওয়ার্ল্ডে এখন সোনার চেয়েও দামি সাপের বিষের জমজমাট ব্যবসা হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার সাপের বিষ চোরাচালান হচ্ছে ইউরোপে। একাধিক সূত্র জানায়, ভারত, নেপাল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে এসব চালান যাচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলিতে।
এদিকে মাদক আন্ডারওয়ার্ল্ডে নেশা বাড়াতে সাপের বিষে মেশানো হচ্ছে । অবিশ্বাস্য হলেও ঘটনাটি সত্য। মাদকাসক্তি যাঁদের চরমে পৌঁছেছে, হেরোইন, মারিজুয়ানা বা কোকেনেও নেশাটা ঠিক জমছে না, তাঁদের মাদকে এখন মেশানো হচ্ছে সাপের বিষ ৷ তাই দিনকে দিন চাহিদা বাড়ছে সাপের বিষের৷ ফেঁপে উঠছে এই বিষের অবৈধ ব্যবসাও৷
এদিকে মাদক ব্যবসার কারণে সোনার চেয়েও সাপের বিষের দাম বেশি এখন বিশ্ব বাজারে৷ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও মাদকাসক্ত লোকের অভাব নেই৷ এদের মধ্যে কিছু লোকের মাদকাসক্তি এমন স্তরে পৌঁছেছে, যে কোকেন, হেরোইন, মারিজুয়ানা, আফিমেও নেশাটা ঠিক জমছে না৷
তাঁদের আরও কড়া নেশা দরকার৷ তাই তাঁদের মাদকে এখন মেশানো হচ্ছে সাপের বিষ৷ ফলে সাপের বিষের চাহিদা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে৷ ফুলে ফেঁপে উঠছে ড্রাগ সিন্ডিকেটের অবৈধ ব্যবসা৷
বলা বাহুল্য, সাপের বিষের ব্যবসা অসম্ভব লাভজনক৷ কোটি কোটি টাকার সাপের বিষ পাচার হচ্ছে দেশের বাইরেও৷ এ মুহূর্তে এক লিটার সাপের বিষের বাজার দাম প্রায় চার কোটি টাকা৷ ভারতে বিষ নিষ্কাশনের জন্য ধরা হয় প্রধানত চার প্রজাতির সাপ – গোখরো, রাসেল ভাইপার, পিট ভাইপার এবং শাখামুটে৷ বিষ নিষ্কাশনের পর সেই বিষ চালান করা হয় দেশে এবং বিদেশে৷ দেশে চোরা চালানকারীদের নারকটিক সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক ব্যাপক৷ সরকারি নজরদার এজেন্সিও নাকের ডগায়৷ কিন্তু তাদের ধরা সম্ভব হচ্ছে না৷
তবে একেবারে ধরাও যে পড়ছে না, তা নয়৷ বিষের চোরা চালানকারীরা প্রায়ই ধরা পড়ছে বন বিভাগের জালে৷ কিন্তু তাতে চোরা ব্যবসায় ইতরবিশেষ কিছু হয়নি৷ গত মাসে বন্যজীবন অপরাধ দমন ব্যুরো এবং গুজরাটের বন বিভাগ আমির খান নামে একজন চোরা চালানকারীকে গ্রেপ্তার করে৷ তার কাছে পাওয়া যায় ৮০ মিলি লিটার সাপের বিষ, যার বাজার দাম সাত-আট লাখ টাকা৷
বিহারের পুর্ণিয়ায় গ্রেপ্তার করা হয় আরো দু’জনকে৷ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় এক বোতল সাপের বিষ৷ এতে ছিল ৯০০ গ্রাম গোখরো সাপের বিষ, যার বাজার দাম তিন কোটি টাকা৷ বোতলের গায়ে লেবেলে লেখা ছিল মেড ইন ফ্রান্স৷ জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে বিহারে ঢোকে সেই বিষ৷
দিল্লির রাজধানী এলাকায় সম্প্রতি ধরা পড়ে সাপের বিষের আরো কিছু চোরা চালানকারী৷ উত্তর প্রদেশ রোডওয়েজের বাসে তারা যাচ্ছিল মিরাটের দিকে৷ গোপনসূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করে৷ তাদের কাছে ছিল সফটড্রিঙ্কের বোতলে ৫০০ মিলি লিটার সাপের বিষ৷ শুধু তাই নয়, তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় দু-দু’টো জ্যান্ত সাপও, যা রাখা ছিল থার্মোকলের বাক্সে৷
বিষের বোতল ও বাক্সটা যে ট্রাভেল ব্যাগে ছিল, তাতে ঝুলছিল বিমান সংস্থার ট্যাগ৷ অর্থাৎ সেসব এসেছিল দেশের বাইরে থেকে৷ মিরাট হয়ে সম্ভবত তা যাচ্ছিল নেপালে৷
তবে শুধু নেপাল নয়, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে এ সব চালান হয়ে থাকে ইউরোপীয় দেশগুলিতেও, বলেন ‘পিপলস ফর অ্যানিমেলস’ নামে এক এনজিওর কর্মকর্তা সৌরভ গুপ্ত৷ সাপের বিষ দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলি তৈরি করে অ্যান্টি-ভেনাম সিরাম৷ এটা সাপে কাটা মানুষের জীবনদায়ী ওষুধ৷
তাই সাপের বিষের এই অবৈধ ব্যবসার ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলি পড়েছে নানা ধরনের সমস্যার মুখে৷ সাতপুরা ফাউন্ডেশনের এক পরিবেশবিদ বলেন, অ্যান্টি-ভেনাম ওষুধ তৈরি চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক বাড়ছে৷ একমাত্র সরকারি হফকিন ইনস্টিটিউটই সাপের বিষ নিষ্কাশনের বৈধ সংস্থা৷ তাই এই পরিবেশবিদের মতে, এই ধরনের আরো বৈধ সংস্থা থাকা দরকার৷