আনারের দেহাংশের খোঁজে সিআইডি
কলকাতা প্রতিনিধি : কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের দেহাংশের খোঁজে আবারও অভিযানে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সঙ্গে রয়েছে খুনের কাজ ও মরদেহের হাড়, মাংস টুকরো করে ফেলে দেয়ার কাজে মুম্বাই থেকে ভাড়া করে আনা কসাই জিহাদ হাওলাদার। শনিবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার পোলেরহাট থানার কৃষ্ণমাটির বাগজোলা খালে তল্লাশি শুরু করে সিআইডি। খালে জাল ফেলে ও নৌকা দিয়ে চলছে এই তল্লাশি অভিযান। কিন্তু এখন পর্যন্ত সন্ধান মেলেনি নিহত এমপির দেহাংশের।
গেলো বৃহস্পতিবার রাত থেকে জিহাদকে সঙ্গে নিয়ে দফায় দফায় চলছে এই অভিযান। সকালে বাগজোলা খালের পানিতে নামানো হয় কলকাতা পুলিশের দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যদের। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, খালে তল্লাশি শেষে জিহাদকে নিয়ে তাদের সঞ্জিভা আবাসনের বিইউ সিক্সটি ফোর ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার ভোরে বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বনগাঁ থেকে জিহাদকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, সংসদ সদস্য আনারকে শ্বাসরোধে হত্যার পর হাড় থেকে মাংস আলাদা করে বানানো হয় কিমা। টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় হাড়। মাংসে মাখানো হয় হলুদ ও মশলা। এরপর তা পলিব্যাগ ও ট্রলিতে ভরে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। আর এই পুরো কাজটি করে কসাই জিহাদ। বৃহস্পতিবার রাতেই জিহাদকে নিয়ে বাগজোলা খালে অভিযান চালায় করে গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু লাশের কোনো টুকরো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই শুক্রবার জিহাদকে এনে আবারও তল্লাশি শুরু করে পুলিশ।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে জিহাদকে বারাসাতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজিএম) এজলাসে তোলা হলে আদালত জিহাদের ১২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।আদালত থেকে তাকে নিয়ে আবার শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। তারপর শুরু হয়েছে অভিযান। সে দেখিয়ে দেয়, কোথায় ফেলা হয়েছে সংসদ সদস্যের দেহাংশ। সিআইডির সঙ্গে এবার মাঠে নেমেছে স্থানীয় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ।
গত ১২ মে ঝিনাইদহর কালীগঞ্জ থেকে কলকাতায় যাওয়ার পরেরদিন রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান তিনবারের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার।এর আগে এমপি আনার খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেয় কসাই জিহাদ। বুধবার সকালের দিকে তার খুনের খবর প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ বলছে, কলকাতার উপকণ্ঠে নিউ টাউনের অভিজাত আবাসন সঞ্জীভা গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে আনারকে খুন করা হয়। খুনের আলামত মুছে ফেলতে দেহ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। এরপর সুটকেস ও পলিথিনে ভরে ফেলে দেওয়া হয় বিভিন্ন জায়গায়।
হত্যাকাণ্ডের পর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। এরা হলেন- হত্যাকাণ্ডের মূল সংঘটক ও চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি। এই তিনজনে শুক্রবার আটদিনের হেফাজতে পেয়েছে ডিবি। পুলিশ বলছে, পুরো হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আখতারুজ্জামান শাহিন। এমপিকে হত্যার পর মরদেহের মাংস কিমা ও হাড় টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকজন হত্যাকারীকে নিয়ে এ কাজে নেতৃত্ব দেন শিমুল। তিনি পরিচয় গোপন করে আমানউল্লাহ আমান নামে পাসপোর্ট করে কলকাতা যান।জিহাদকে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় মরদেহ ফেলার পর বান্ধবী শিলাস্তিকে নিয়ে ঢাকায় ফেরেন শিমুল ভূঁইয়া। আখতারুজ্জামান শাহিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। শাহিন দেশ ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।