• সোমবার , ২৫ নভেম্বর ২০২৪

আত্মত্যাগের মহান মহিমার দিন-পবিত্র আশুরা আজ


প্রকাশিত: ২:১৫ পিএম, ১২ অক্টোবর ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৫৩ বার

 

ইসলাম ডেস্ক প্রতিবেদক : আজ ১০ মহররম, পবিত্র আশুরা। দিনটি মুসলিম উম্মাহর জন্য একই সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ ও 334শোকাবহ। হিজরি ৬১ সনের এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা ইয়াজিদের সৈন্যদের হাতে কারবালার ময়দানে শহীদ হন। আশুরা অর্থ দশ। হাদিস শরিফ এবং প্রাচীন ধর্ম ও ইতিহাস গ্রন্থ অনুসার ১০ মহররমে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐশী ঘটনা ঘটে। যে কারণে দিনটি মুসলমানদের পাশাপাশি ইহুদি, খ্রিস্টান এবং শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানদের কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরের মতো এবারও দিনটি ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হবে। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দিবসটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, বিশেষ করে শিয়া অনুসারীরা নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনেকে রোজাও রাখছেন। শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা কারবালার সেই ঐতিহাসিক হৃদয়বিদারক ঘটনার স্মরণে আজ প্রতীকী দুলদুল ঘোড়া সাজিয়ে, বুক চাপড়িয়ে তাজিয়া মিছিল বের করবেন।

অশ্রুসজল চোখে তারা হায় হোসেন, হায় হোসেন বলে মাতম করবেন। দিবসটি উপলক্ষে তিন দিন ধরে রাজধানীর শিয়া সম্প্রদায়ের হাজারও মানুষ তাদের পবিত্র স্থান হোসনি দালানকে ঘিরে পালন করেছেন নানা আনুষ্ঠানিকতা। শোকের আবহে কালো পতাকা উড়ানো হয়েছে। ইমাম হোসাইন (রা.) স্মরণে আয়োজন করা হয়েছে বয়ান, জিকির, শিরনি বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচির।

গত বছর হোসনি দালানে দুর্বৃত্তদের বোমা হামালায় এক কিশোর নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়। এ কারণে এবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মহররমের পবিত্র মিছিলে জিঞ্জির, দা, ছুরি, তলোয়ার, ঢোল বহন করা যাবে না। মিছিলে লাঠি খেলা ও আগুন খেলাও নিষিদ্ধ থাকবে। তিন দিনের মিছেলের সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। মঙ্গলবার মিছিলের সময় ছিল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা। কিন্তু নির্ধারিত এ সময়ের পর মিরপুর থেকে একটি মিছিল হোসনি দালানে যায়। সেখানে মিছিলকারীরা উচ্ছৃংখল আচরণ করে। এ কারণে ১৪ জনকে আটক করে পুলিশ। চকবাজার থানার এসআই আজিজুল ইসলাম জানান, আটকরা চকবাজার থানায় আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এদিকে পবিত্র আশুরাকে কেন্দ্র করে হোসনি দালান এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইমামবাড়ার বাইরে কেনো দোকানপাট বসতে দেয়া হয়নি। পুরো এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও হোসনি দালানে প্রবেশের ক্ষেত্রে আর্চওয়ে ব্যবস্থা ছাড়াও ব্যাপক তল্লাশি করে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে।

হিজরি একষট্টি সনে বর্তমান ইরাকের কুফার নিকটবর্তী কারবালা প্রান্তরে নবীজির প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র এবং মা ফাতেমা ও হজরত আলী (রা.)-এর চোখের মণি পুত্র হজরত ইমাম হোসাইন ও তার ৭২ জন সঙ্গী-সাথী নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন। নবীজির ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগ শেষ হওয়ায় মুসলিম সমাজ বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হয়ে পড়ে।

নবীজির হাতে পরাজিত কাফের, মুশরেক ও মুনাফেক শক্তি নানা ছলচাতুরী ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেয়। তারা গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে ন্যায়-ইনসাফপূর্ণ শান্তি ও সমৃদ্ধির ইসলামী সমাজকে পুনরায় জাহেলিয়াতের লুটপাট, বর্বরতা, সন্ত্রাস-যুদ্ধ ও দুর্নীতি-অনাচারের দিকে নিয়ে যায়।

ইসলামের সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক সরকার এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা উচ্ছেদ করে দুরাচারী এজিদের বংশীয় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করে। এমন অবস্থায় হজরত ইমাম হোসাইন সত্য ও ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। অবশেষে ৬১ হিজরি সনের ১০ মহররম তথা আশুরার এ দিনে কারবালা প্রান্তরে তিনি নিজের পরিবার-পরিজন, সন্তান এবং সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে এক অসম যুদ্ধে এজিদ ও ইবনে জিয়াদের হাজার হাজার সৈন্যের হাতে শাহাদতবরণ করেন।

ইমাম হোসাইন (রা.) তার সন্তান ও সঙ্গীদের নিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিবাদে যে মহান আদর্শ স্থাপন করেন, তা ইসলামী উম্মাহর মাঝে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে। এরই ফলে উমাইয়াদের রাজতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে একে একে বিদ্রোহ দেখা দেয় এবং তাদের পতন ঘটে। কারবালায় ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আদর্শ শত শত বছর ধরে ন্যায়-ইনসাফকামীদের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে।

পবিত্র আশুরা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো আশুরা উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠান।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী : পবিত্র আশুরা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তিনি অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে জাতীয় জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন। পবিত্র আশুরাকে মানব ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় হিজরি ৬১ সনের ১০ মহররম মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তার পরিবারের সদস্যরা কারবালা প্রান্তরে শাহাদতবরণ করেন। তাদের এ আত্মত্যাগ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।