বিশেষ প্রতিবেদক.ঢাকা:
সাবেক সিইসি শামসুল হুদা বলেন, আগে সন্ত্রাস বন্ধ করতে হবে। পরে পরিবেশ সৃষ্টি করে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেন-এটাই আমাদের কথা।শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকদের’ পক্ষে একটি কমিটি এ আহ্বান জানায়।
তবে বিরোধী জোটের আন্দোলনে নাশকতার দিকে ইঙ্গিত করে তাদের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করেছে সরকার।সংকট উত্তরণে গত শনিবার ‘জাতীয় সংলাপের’ উদ্যোগ প্রক্রিয়া নিয়ে এক গোলটেবিল আলোচনা হয়, যার নেতৃত্ব দেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও ছিলেন ওই আলোচনায়।
রাজনীতিবিদ হয়েও কামাল ও মান্না নাগরিক সমাজের উদ্যোগের নেতৃত্বে থাকায় তা নিয়ে সমালোচনা আসে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে।তবে শামসুল হুদার নেতৃত্বে যে কমিটি করা হয়েছে তাতে নেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল হোসেন ও সাবেক ছাত্রনেতা মান্না।
সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে গত সোমবার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে আলোচনায় আসে জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের এ অংশটি।তারই ধারবাহিকতায় সকালে প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন তারা।বর্তমানে রাজনীতির নামে যেভাবে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয় বলে মনে করেন এ টি এম শামসুল হুদা।
এ অমানবিক পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না-মন্তব্য করে সাবেক এ সচিব বলেন, অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। আমরা সবাই পেশাজীবী। কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নেই এখানে। নৈতিক অবস্থান থেকে আমরা দুটো কথা বলছি- সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে, আলোচনার উদ্যোগ নিতে হবে।সংলাপের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও খালেদা জিয়াকে পাঠানো চিঠির অনুলিপি পড়ে শোনান শামসুল হুদা।
চিঠির বিষয়বস্তু তুলে ধরে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে সেই অর্থে কোনো ক্ষমতা না থাকলেও রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে চলমান সঙ্কট নিরসনে রাষ্ট্রপতির একটি নৈতিক ভূমিকা রয়েছে।আমরা মনে করি রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করে চলমান সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেবেন। বিবদমান দুই দলসহ সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলো, পেশাজীবীদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন।
শামসুল হুদা বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে পেট্রোল বোমায় আগুনে পোড়ানোসহ যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে তা হৃদয় বিদারক, অমানবিক। অর্থনীতি ভেঙে পেড়েছে। জাতি নিঃশেষিত হতে পারে না এভাবে।সন্ত্রাস বন্ধ করে এখন প্রথম কাজটা হচ্ছে-শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। তারপর কী করে রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসন করা যায় সে উদ্যোগ নিতে হবে।
সংলাপের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সন্ত্রাস বন্ধ ও সংলাপ- এ দুটো প্রক্রিয়া সমান্তরালভাবে এগোতে হবে। প্রথমে সন্ত্রাস বন্ধ করে জনগণকে শান্তি দিতে হবে। এরপরে সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
সিদ্ধান্ত নেবেন রাজনীতিকরাই
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংলাপ আয়োজনের উদ্যোগে নিজেদের কর্ম পরিকল্পনা তুলে ধরেন এ টি এম শামসুল হুদা।তিনি বলেন, সংলাপের জন্য তারা নিজেরা কিছু করবেন না। তারা সব পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিলে তারা পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
সংলাপটা কিভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কিছু করিনি। সংলাপের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছি। এটা রাজনৈতিক সমস্যা। আমরা সংলাপের উদ্যোগটা নেব। উনাদেরই তা ঠিক করা উচিত। সে রকম সুযোগ সৃষ্টি হলে আমরা অবদান রাখতে পারব।নাগরিক উদ্যোগের নানামুখী সমালোচনায় হতাশ নন জ্যেষ্ঠ নাগরিকরা।
শামসুল হুদা বলেন, আমাদের বিষয়টা নিয়ে কথা হচ্ছে-তার মানে এটাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা আশাহত নই। সমালোচনা ভালো। কেউ তো উপেক্ষা করেনি। রাজনীতিবিদরা প্রকাশ্যে যা বলেন, তা বলার জন্যে বলেন। রাজনীতির শেষ কথা বলতে কিছু নেই।
কেউ নাগরিকদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ‘বিকল্পটা’ও তুলে ধরার জন্য তার প্রতি আহ্বান জানান সাবেক সিইসি।শামসুল হুদা জানান, তারা সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। মাঝে মাঝে নিজেরা বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।সংলাপ অনুষ্ঠানের জন্য নিজেদের থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা বিএনপি নেত্রীর কাছে যাবেন না বলেও জানান তিনি।আমরা তাদের কাছে যাব না। আমাদের ডাকলে যাব। সহায়তা চাইলে নিজ নিজ দক্ষতা থেকে সহযোগিতা করব।
১৩ জনের কমিটি
‘উদ্বিগ্ন নাগরিকদের’ পক্ষে ১৩ জনের কমিটির কথা জানিয়ে শামসুল হুদা বলেন, তাদের ফোরামের নতুন নাম খোঁজা হচ্ছে এবং পরবর্তীতে কমিটির সদস্য সংখ্যাও বাড়তে পারে।সংবাদ সম্মেলনে কমিটির সদস্য সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সিএম শফি সামি, আইনজীবী শাহদীন মালিক, পলিসি রিচার্স ইনস্টিিটউটরে নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
সাবেক সিইসি হুদাকে আহ্বায়ক করে বাকি সদস্যরা হলেন- সাবেক উপদেষ্টা এস এম শাহজাহান, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, আকবর আলি খান, রাশেদা কে চৌধুরী, রোকেয়া আফজাল রহমান, কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ ও ব্যবসায়ী নেতা আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ।দেশের সমস্যা সমাধানে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ ভালো না’ বলে মন্তব্য করেন শামসুল হুদা।তাদের প্রস্তাব মেনে এগোলে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।