• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

আগামী ২ বছর গার্মেন্ট রফতানিতে উৎসে কর প্রত্যাহার চায় বিজিএমইএ


প্রকাশিত: ১:৪৬ এএম, ৫ জুন ১৭ , সোমবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৭০ বার

স্টাফ রিপোর্টার :  আগামী দুই বছরের জন্য তৈরি পোশাক রফতানিতে উৎসে কর প্রত্যাহার ও ৫ শতাংশ নগদ

 বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিজিমইএ

বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বিজিমইএ

সহায়তা চায় পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ ছাড়া পাঁচ বছরের জন্য করপোরেট কর ১০ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

তৈরি পোশাক খাতের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিকূলতা তুলে ধরে প্রাক-বাজেট আলোচনায় দুই বছরের জন্য উৎসে কর প্রত্যাহার ও সব বাজারে ৫ শতাংশ হারে রফতানি প্রণোদনাসহ আরও কিছু নীতি সহায়তা চেয়েছিল বিজিএমইএ। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে এসব দাবিদাওয়া বাস্তবায়িত না হওয়াকে অত্যন্ত দুঃখজনক ও শিল্প বিকাশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।

বাজেটের ওপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার বিজিমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, পোশাক খাত গত ৩৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সংকটকাল পাড় করছে। এ অবস্থায় আগামী দুই বছরের জন্য উৎসে কর অব্যাহতি, ৫ শতাংশ হারে রফতানি প্রণোদনা ও উৎসে কর ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার মাধ্যমে পোশাক শিল্পের সংকটকাল মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকূল আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির, মাহমুদ হাসান খান বাবু, পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎসে কর রফতানির সময় পোশাকের দর অনুযায়ী কর কেটে রাখা হয়। বিদ্যমান আয়কর অধ্যাদেশের ৫৩ (বিবি) ধারায় পোশাক রফতানিতে উৎসে কর ১ শতাংশ নির্ধারিত আছে। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) বাজেট প্রস্তাবে এই কর ১ দশমিক ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে উদ্যোক্তাদের দাবির মুখে শেষপর্যন্ত এসআরও জারি করে তা এক বছরের জন্য শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা হয়। চলতি অর্থবছরের জুনে এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে উৎসে করের হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে কোন কথা বলেননি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ফলে মেয়াদ শেষে তা আবারও আইনে উল্লেখিত ১ শতাংশ হচ্ছে। অর্থাৎ বাজেট পাস হলে উৎসে কর বর্তমানের ৭০ পয়সার সঙ্গে অতিরিক্ত ৩০ পয়সা মিলে এক টাকা দিতে হবে উদ্যেক্তাদের। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা আগের বছরের ৩০ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে ৬০ শতাংশ করা হয়।

বিজিএমইএ কেন দুই বছরের জন্য উৎসে কর প্রত্যাহার চায় সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পোশাক খাতের সব প্রতিযোগী দেশ বিভিন্ন হারে প্রণোদনা দিচ্ছে। রফতানি খাতকে সুবিধা দেওয়ার জন্য স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার সহনীয় করেছে। যেমন: ভারত ডলারের বিপরীতে রুপির দর ৩৬ শতাংশ কমিয়েছে, তুরস্ক কমিয়েছে ১০২ শতাংশ।

অথচ ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার গত চার বছর ধরে ৫ শতাংশ বেশি রয়েছে।’ এজন্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে দুই বছরের জন্য উৎসে কর অব্যাহতি ও ৫ শতাংশ হারে রফতানি প্রণোদনা চেয়েছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তৈরি পোশাকের রফতানি বাণিজ্যের সংকট তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত এক দশক ধরে পোশাকের রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল গড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ।

অথচ চলতি অর্থবছরের গত দশ মাসে এ হার মাত্র ২ দশমিক ২১ শতাংশ। আয় কমেছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ শতাংশের ওপরে। এই হারটাও স্বাভাবিক বৃদ্ধি নয়। বরং পোশাকে মূল্য সংযোজন অর্থাৎ উচ্চমূল্যের পোশাকের কারণেই এতটুকু অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ইউরোপ এবং আমেরিকায় নীরব মন্দার কারণে ২০১৫ সালে  সারা বিশ্বে পোশাক রফতানি বাণিজ্য কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। অথচ আগের বছর এ হার বেশি ছিল ৫ শতাংশের মত। অন্যদিকে দেশে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৮ শতাংশ।’

সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পোশাক খাতের সংস্কার বিষয়ক দুই ক্রেতা জোট ইউরোপের অ্যাকর্ড এবং উত্তর আমেরিকার অ্যালায়েন্সের চাপে পোশাক শিল্প বিপর্যস্ত। সংস্কারে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন উদ্যোক্তারা। এরপরও প্রতিকূলতায় সক্ষমতা হারিয়ে এক হাজার ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন বাজেটে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আরও অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হবে।’

দুই বছরের জন্য বাজেটে নীতি সহায়তা দেওয়া হলে পোশাক খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি।পোশাক খাতের এ দুঃসময়ে টিকে থাকতে অর্থমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রীও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ রেখে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘এমন পদক্ষেপ নিন, যাতে সামগ্রিক অর্থনীতিতে পোশাকশিল্প আরও অবদান রাখতে পারে।’