‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনে কোনো বাধা নাই’-বদিউলে নাখোশ বৈষম্য
এবার বদিউল আলমের বক্তব্যে নাখোশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে তারা বদিউলের বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বিশেষ প্রতিনিধি/ রংপুর প্রতিনিধি : এবার বদিউল আলমের বক্তব্যে নাখোশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সঙ্গে তারা বদিউলের বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহবান জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে না দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এর আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণে কোনো বাধা দেখছেন না বলে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক’র (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এদিকে
যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিবৃতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, নির্বাচনসহ যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর অবমূল্যায়ন হবে। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান জনাব বদিউল আলম মজুমদারকে তার বক্তৃতা প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সংস্কার থেকে কোনোরকম বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিংবা কোনোরকম বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে না। সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক সেই সুপারিশ আমরা করব। নির্বাচনে অযোগ্য না হলে সবার অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত। আমরা চাই, সব দলের অংশগ্রহণে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হোক।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অতীতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ায় নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারেনি। তবে এবারের নির্বাচনে স্থানীয় প্রশাসনসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা সব ধরনের প্রভাব মুক্ত থাকবেন। যে কারণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার প্রস্তাবনার কাজ প্রায় শেষ দিকে। হাজার প্রস্তাবনা এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে তুলে দেওয়া হবে। এরপর সেই প্রস্তাবনা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করে পরবর্তীতে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করবে। এর মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটবে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ভোটার তালিকা সংশোধন ও হালনাগাদ করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। আমরা এসব বিষয়ে সুপারিশ করব। নির্বাচন কমিশন অবশ্যই নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারবে, পক্ষপাত মুক্ত হবে। এবারের কমিশনে নির্বাচন কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ সময় সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও রংপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, মহানগর সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু, বিভাগীয় সমন্বয়ক রাজেস দে রাজুসহ রংপুর মহানগর ও জেলা সুজনের কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় মিলনায়তনে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া গতকাল বুধবার রাতে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের মাঠ থাকবে সমতল, সেভাবেই নির্বাচন কমিশনকে গঠন করা হবে। কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না। অধিকার বঞ্চিত মানুষ তাদের অধিকার আদায় করবে।
আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিবৃতি
যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিবৃতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানিয়েছে, নির্বাচনসহ যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের অবমূল্যায়ন হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান জনাব বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন- ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের কোনো বাঁধা নাই।’ কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নির্বাচন সংস্কার কমিশন প্রধানের উপরোক্ত বক্তব্য স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে একাধিক গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছে। এছাড়াও গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ বিভিন্ন মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছর ধরে জড়িত ছিলো। সর্বশেষ জুলাই গণহত্যায় প্রায় দুই হাজার শহিদের প্রাণ এবং ত্রিশ হাজারের অধিক মানুষের অঙ্গহানির করেছে কুখ্যাত আওয়ামী লীগ। আওয়ামীলীগ বিগত তিনটি নির্বাচনকে অবৈধ উপায়ে নিজেদের কুক্ষিগত করেছে।
যে দলটি বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে, তাদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান জনআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচারণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোরন যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান করে। নির্বাচনসহ যে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের রক্তের অবমূল্যায়ন হবে।
এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান জনাব বদিউল আলম মজুমদারকে তার বক্তৃতা প্রত্যাহার করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।