আইএস টার্গেটে ফিলিপিনের মিন্দানাও দ্বীপ
ডেস্ক রিপোর্টার : আইএস টার্গেটে ফিলিপিনের মিন্দানাও দ্বীপ। ফিলিপিনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মিন্দানাও দ্বীপের মারাউই শহরে লড়াইয়ের সময় যেসব ইসলামী জঙ্গি নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেক বিদেশী যোদ্ধা আছে।
মারাউই থেকে ইসলামী জঙ্গিদের হঠাতে সেনাবাহিনী গত কিছুদিন ধরে লড়াই চালাচ্ছে। সেখানে নিহত ছয় জন ইসলামী জঙ্গীর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার নাগরিকও আছে বলে দাবি করছে ফিলিপাইন।ফিলিপিনের সরকার এই লড়াইয়ে বিশেষ বাহিনী মোতায়েন করেছে। জঙ্গিদের দমনে সেখানে সেনাবাহিনী সামরিক হেলিকপ্টারও ব্যবহার করছে।
স্থানীয় জিহাদিদের সঙ্গে যে বিদেশিরাও যোগ দিয়েছে, ফিলিপিনের কর্তৃপক্ষের দিক থেকে এটি স্বীকার করে নেয়ার ব্যাপারটি বেশ বিরল একটা ঘটনা।মিন্দানাও দ্বীপের লানাও-ডেল-সুর প্রদেশের মারওয়াই শহরটি মূলত মুসলিম অধ্যূষিত। সেখানে মটে বলে যে স্থানীয় জিহাদি গোষ্ঠীটি সক্রিয়, তারা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে।
কী ঘটছে মারওয়াই শহরে?
ফিলিপিনের আবু সায়াফ জঙ্গি গোষ্ঠীর নেতা এবং একজন শীর্ষ জঙ্গি ইসনিলন হাপিলনকে ধরতে সেনাবাহিনি সেখানে অভিযান চালিয়েছিল। তারপরই মারওয়াইতে লড়াই শুরু হয়।ফিলিপিনের সলিসিটর জেনারেল জোসে ক্যালিডা জানিয়েছেন, ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী এই ইসনিলন হাপিলনকেই ফিলিপাইনে তাদের শীর্ষ নেতা নিয়োগ করেছে।
তাকে ধরতে সেনাবাহিনীর অভিযান যখন ব্যর্থ হয়, তখন বহু সশস্ত্র ব্যক্তি মারওয়াই শহরের রাস্তায় নেমে আসে। এরা সেখানে ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর পতাকা উত্তোলন করে। শহরের কারাগারগুলো থেকে বন্দীদের ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর জঙ্গিরা অনেক লোকজনকে জিম্মি করে। মারওয়াইতে এখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের বিরাট লড়াই চলছে।
এই লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ১১ জন সরকারি সেনা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে জঙ্গিদের দিকে নিহত হয়েছে ৩১ জন। নিহতদের মধ্যে কোন অসামরিক নাগরিক আছে কিনা তা পরিস্কার নয়। হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়েছে।এই সহিংসতার কারণে ফিলিপিনের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তে মিন্দানাও দ্বীপে সামরিক আইন জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে এটা করতে হচ্ছে।
ইসলামিক স্টেটের দখলে কি মারওয়াই?
মিন্দানাও দ্বীপে বহুদিন ধরেই বেশ কিছু মুসলিম বিদ্রোহী গ্রুপ স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। এদের মধ্যে প্রধান যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী, তাদের সঙ্গে সরকারের শান্তি আলোচনা চলছে। কিন্তু এদের বাইরে অনেক কট্টরপন্থী বিদ্রোহী গোষ্ঠী আছে, যারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কট্টরপন্থী গোষ্ঠীর সম্পর্ক অনেক বছর ধরে।কিন্তু ফিলিপিনের সলিসিটর জেনারেল মিস্টার ক্যালিডা বলছেন, স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো এখন ইসলামকি স্টেটের আদর্শ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মিন্দানাওয়ে এখন যা ঘটছে তাকে আর ফিলিপিনের স্থানীয় মানুষের বিদ্রোহ বলা যাবে না। এখন এটি বিদেশী জঙ্গিদের আগ্রাসনে পরিণত হয়েছে। তারা এখন মিন্দানাওকে খেলাফতের অংশ বানাতে চায়।পর্যবেক্ষকরা অনেক আগে থেকেই বলছিলেন যে ইসলামিক স্টেট ফিলিপিনের দক্ষিণাঞ্চলকে টার্গেট করেছে এবং সেখানে তারা তাদের শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলতে চায়।
জাকার্তার ইনস্টিটিউট ফর পলিসি এনালিসিসের পরিচালক সিডনি জোনস বলেন, গত কয়েক বছরে ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে মিন্দানাওতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তিনি বলেন, সেখানে যে ইসলামিক স্টেট এক বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে সেটা ফিলিপিনের সরকারের স্বীকার করে নেয়ার দরকার ছিল। কারণ এদের মোকাবেলার জন্য ফিলিপিনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দরকার।
তবে ফিলিপিনের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, মারওয়াই শহরের গোষ্ঠীটি যদিও ইসলামিক স্টেটের আদর্শে অনুপ্রাণিত, তারা ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে কোন ধরণের সরাসরি সাহায্য পেয়েছে, এরকম কোন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।