অভিনেতা থেকে রাজনীতিক সুরঞ্জিতের অজানা অধ্যায়
পঙ্কজ ভট্টাচার্য : আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন প্রিয় বন্ধু সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। কী অসীম নীরবতা তার চারপাশে! কী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন তিনি! পাঁচ দশকেরও বেশি সময় তিনি কত বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, বাকপটু হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন, সংসদীয় রাজনীতি বারবার হোঁচট খেয়ে পড়ার দেশে দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানের অনন্য স্বীকৃতি পেয়েছেন। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তিনি আর কথা বলবেন না। নিজের কথা বলতে গিয়ে, প্রতিপক্ষের কথার জবাব দিতে গিয়ে তিনি যুক্তির পর যুক্তির মালা গাঁথবেন না। হাস্যরসে, কৌতুকে ও যুক্তিতে মুগ্ধ করবেন না শ্রোতাদের।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন, তখন কেবলই অতিক্রম করে এসেছেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নূ্যনতম বয়স ২৫ বছর। অথচ দেখুন, ১৯৭২ সালের ২৪ অক্টোবর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য গঠিত গণপরিষদে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ভাষণ দিয়েছিলেন। তখন তার বয়স কেবলই ২৭ বছর। তিনি ছিলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি থেকে নির্বাচিত একমাত্র সদস্য।
গণপরিষদে ৪ শতাধিক সদস্য আওয়ামী লীগের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গণপরিষদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী। সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংসদ উপনেতা। মুক্তিযুদ্ধের বীর নায়করা রয়েছেন সেখানে। সেখানে তরুণ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার বাগ্মিতা আর যুক্তি দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। দীর্ঘ সময় ধরে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন সদস্য তার বক্তব্য প্রদানের সময় বারবার বিঘ্ন সৃষ্টি করেন। কিন্তু স্পিকার তাকে বারবার সময় বাড়িয়ে দেন।
তার বক্তব্য প্রদানে বাধা না দিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অনুরোধ জানান। ওই দিনের ভাষণে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত পাকিস্তান আমলে গণপরিষদ ও পার্লামেন্টে দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ানদের ভাষণ থেকে একের পর এক উদ্ধৃতি দিতে থাকেন। সংসদে বক্তব্য প্রদানের মালমসলা সংগ্রহের জন্য তিনি দিনের পর দিন আমাদের সংসদ লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন।
সেদিনের ভাষণে তিনি মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ্য কী ছিল তার উল্লেখ করে বলেন, ‘…এমন এক স্বাধীন বাংলা হবে, যে বাংলায় থাকবে না অন্যায়, যে বাংলায় থাকবে না অবিচার, যে বাংলায় কৃষক জমির ওপর অধিকার পাবে এবং যে বাংলায় কর্মচারীর নিগড়মুক্ত, শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থার মধ্যে তাদের ন্যায্য অধিকার পাবে। অত্যাচারীর নিগড়মুক্ত, শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থার মধ্যে তাদের সন্তান-সন্ততি নির্বিঘ্নে জীবনযাপন করবে।
তারা রোগে চিকিৎসা, ক্ষুধায় অন্ন পাবে। লাখ লাখ বেকার যুবক, শিক্ষিত বেকার যুবক, যারা এতদিন ঘুরে বেড়িয়েছে, তারা পাবে চাকরির সন্ধান। আর হাজার হাজার মা-বোন, যারা দিয়েছে মান-ইজ্জত এই স্বাধীনতার জন্য, তাদের সেই স্বার্থত্যাগ সার্থক হবে যদি তাদের সেই ত্যাগের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয় চার মূলনীতি, চার স্তম্ভ- সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বিলম্বে হলেও জাতীয়তাবাদ। সেই জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে এসেছে সংবিধান।’
তিনি আমাদের স্বাধীনতার পটভূমি তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনকে আজকের এই সাংবিধানিক সংগ্রাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে ভুল করা হবে। কারণ, ভাষা আন্দোলনের মধ্যে যে মূল কথা ছিল, যে মূল বুলি ছিল এবং তার পেছনে যে শক্তি ছিল- তৎকালীন যেসব প্রগতিশীল শক্তি আজকে ছিটকে পড়েছে বিভিন্ন দলে, আজকে যারা মতবিরোধ নিয়ে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেছে- সেসব প্রগতিশীল শক্তি সেদিন এককভাবে, একতাবদ্ধ হয়ে চিন্তা করেছিল যে, এই কৃত্রিম রাষ্ট্র ভুলপথে পরিচালিত; কারণ ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মূলনীতির ভিত্তিতে পৃথিবীর কোনো রাষ্ট্র পরিচালিত হতে পারে না। তাই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের যুবসমাজ তাদের সেই বিপ্লবী মনোভাব এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে তাদের রায় দিয়েছিল।’
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে ষাটের দশকের শুরুতে। তখন পাকিস্তানে আইয়ুব খানের নিষ্ঠুর সামরিক শাসন। শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা। কারাগারগুলো রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীতে পূর্ণ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ। দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ। চারদিকে সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ ছাত্রদের মধ্যে অগ্রদূত ও অগ্রগামী প্রভৃতি নামে।
রাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ থাকায় ২১ ফেব্রুয়ারি, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি দিবস উদযাপনের মাধ্যমে আমরা ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করি। সুরঞ্জিত সেন এসেছেন সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকা থেকে। হাওরাঞ্চলের লোক তিনি। সে সময় সুনামগঞ্জের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা ছিলেন প্রসূন কান্তি রায় (বরুণ রায়)। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের আমলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তার পিতা করুণাসিন্ধু রায় ছিলেন জনপ্রিয় কৃষক নেতা। তিনি আসাম পার্লামেন্টের সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ আমলে তিনি জমির অধিকারসহ কৃষকদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে আসাম পার্লামেন্টে লংমার্চ করেছিলেন। সাধারণ মানুষের প্রিয়জন ছিলেন তিনি। তার করুণাসিন্ধু নাম যথার্থ, এটাই মুখে মুখে বলা হতো। এমন একটি এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সে সময়ে ওই এলাকায় বরুণ রায়ের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ছিল বিপুল।
কিন্তু তিনি কমিউনিস্ট পার্টি করতেন এবং এ পার্টি নিষিদ্ধ ছিল। পাকিস্তান আমলের শুরুর বছরগুলোতে কমিউনিস্টরা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৫৭ সালে তারা যোগ দেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজ এলাকায় ফিরে গেলে জনগণ তাকে সাদরে গ্রহণ করে নেয়।
তবে মজার ব্যাপার যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ছাত্র ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তার প্রধান পরিচয় ছিল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে। তিনি চমৎকার অভিনয় করতেন। রামেন্দু মজুমদার, আবদুল্লাহ আল মামুন, ফেরদৌসী মজুমদার- তাদের সঙ্গে কাজ করতেন। তার লেখা একাধিক নাটক সে সময় প্রশংসিত হয়েছে।
১৯৬২ সালে ছাত্রদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। সে বছর জানুয়ারির শেষ দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হলে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ একযোগে আন্দোলনে নামে। ঢাকায় শুরু হওয়া আন্দোলন ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ছাত্ররা আইয়ুব খানের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধেও শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
১৭ সেপ্টেম্বর পালিত হয় সর্বাত্মক হরতাল। আন্দোলনের চাপে সরকার বাধ্য হয় প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষানীতি স্থগিত ঘোষণা করতে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৬৪ সালে ফের ছাত্ররা আইযুববিরোধী আন্দোলন বেগবান করে তোলে। এ সময়েই আমরা দেখি, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সংগঠক থেকে, অভিনেতা থেকে ক্রমে নেতা হয়ে উঠছেন। তবে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে তেমনভাবে যুক্ত হননি। জগন্নাথ হল ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল তার কাজ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া আধিপত্যের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জয়লাভ অনেকের কাছে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিল, সন্দেহ নেই। কিন্তু সুনামগঞ্জের ওই এলাকায় বামপন্থি আন্দোলনের প্রভাব যে কত ব্যাপক ছিল তার প্রমাণ মেলে বাংলাদেশের সংসদে তার বারবার নির্বাচিত হওয়ার ঘটনায়। সুনামগঞ্জের আরেকটি আসন থেকে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীও একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেন। তিনি ছিলেন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য। সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য তিনি নিজে প্রশিক্ষণ নেন এবং একই সঙ্গে শত শত মুক্তিযোদ্ধার নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় গণপরিষদ। এর ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয় সংবিধান প্রণয়নের।
সংবিধানের খসড়া প্রণয়নের জন্য যে কমিটি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে কাজ করে, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার সদস্য ছিলেন। এ সময়ে তিনি বিভিন্ন দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেন। আইন প্রণয়নের পদ্ধতি বিষয়েও সম্যক ধারণা লাভ করার জন্য সংসদের লাইব্রেরিতে দিনের পর দিন কাটাতে থাকেন। গণপরিষদে তার ভূমিকা সবার নজর কাড়ে। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তিনি জয়ী হননি। তবে অভিযোগ রয়েছে, নানা কৌশলে তার জয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৯ সালে তিনি ফের সংসদে নির্বাচিত হন।
এরপর আরও পাঁচবার তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথম দিকে তিনি সংসদে ন্যাপ কিংবা একতা পার্টির মতো দলের প্রতিনিধিত্ব করতেন। সংসদে তার সক্রিয় ভূমিকা ও বাগ্মিতায় মুগ্ধ সংবাদপত্রে তখন লেখা হতো ছোট দলের বড় নেতা। প্রকৃতপক্ষে তিনি দ্রুতই নিজেকে জাতীয় নেতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারেন। সামরিক শাসন আমলে সংসদে তিনি যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।
সংসদের বাইরের গণতান্ত্রিক ও বামপন্থি দলগুলোর নেতাকর্মীরা শুধু নয়, সাধারণ মানুষও এতে উৎসাহিত হতো। জনসমাবেশে বক্তা হিসেবে তার নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের মধ্যে শিহরণ বয়ে যেত। সবাই ভাবত- এবারে মজার কিছু শোনা যাবে। যুক্তিপূর্ণ কিছু শোনা যাবে। স্বৈরাচারী শাসকদের বাক্যবাণে জর্জরিত করা হবে। হুল ফোটানো হবে। সংসদে তার দক্ষতা দেখে বারবার মনে হয়েছে, আমাদের দেশে প্রকৃতই যদি সংসদীয় রাজনীতির চর্চা হতো তাহলে তিনি নিজেকে নিয়ে যেতে পারতেন বিশ্বসেরা পার্লামেন্টারিয়ানদের কাতারে। তবে মানুষ তাদের নেতাকে চিনতে ভুল করেনি।
তিনি নিজেকে সর্বদা জাতীয় রাজনীতির মূল স্রোতধারার সঙ্গে রেখেছেন। পাকিস্তানের শাসকদের সাম্প্রদায়িক মনোভাব ছিল প্রবল, গণতন্ত্রের বিকাশ তারা ঘটতে দেয়নি। এমন পরিবেশেই রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি। বাংলাদেশ আমলেও বারবার এসেছে সামরিক শাসন। এ সময়ে শাসকরা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়েছে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের আলো ছড়ানোর কাজ মোটেই সহজ ছিল না। তার বিরুদ্ধে অপবাদ দেওয়া হয়েছে, কুৎসা রটনা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যে ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা হয় তাতে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন।
তাকে হত্যা করার জন্য দিরাইয়ে একাধিকবার হামলা হয়েছে। কিন্তু প্রতিকূলতার মধ্যেও তিনি নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন। জিয়াউর রহমান সংবিধান থেকে অগণতান্ত্রিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়েছেন। বিসমিল্লাহ সংযুক্ত করেছেন। এইচ এম এরশাদ সংবিধানে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এসব পদক্ষেপকে মনে করেছেন অন্যায়। সংখ্যালঘু হিসেবে নয়, বরং জাতীয় দায়িত্ব হিসেবে তিনি এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতা তিনি মেনে নেননি। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। তিনি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। এ সংগঠন গড়ে তোলায় সব ধরনের সহযোগিতা দিয়েছেন। আদিবাসীদের প্রতি অবিচারের ঘটনায় সোচ্চার হয়েছেন। এ ক্ষেত্রেও তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট- মানবাধিকার লঙ্ঘন চলবে না। তিনি সর্বদা পরিচালিত হয়েছেন দেশপ্রেম দ্বারা, জাতীয় দায়বদ্ধতা ও উচ্চ মানবতাবোধ দ্বারা।
বঞ্চিত মানুষের পক্ষেই ছিল তার অবস্থান। আমাদের দেশে অনেকে মন্ত্রী হয়েছেন। সংসদ সদস্য হয়েছেন। কিন্তু জাতীয় নেতা, জাতীয় ব্যক্তিত্ব খুব বেশি নেই। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিজেকে সেই পর্যায়ে উন্নীত করতে পেরেছেন। তিনি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে সশস্ত্র লড়াই করার বিরল গৌরব রয়েছে তার। তিনি ছিলেন মুক্তিবাহিনীর সাব-সেক্টর কমান্ডার।
দেশবাসীর কাছ থেকে পেয়েছেন বীরের সম্মান। তাকে বহু বহু দিন বাংলাদেশের মানুষ স্মরণ করবে। সংসদীয় রাজনীতির চর্চা যতদিন চলবে, সংসদে সারগর্ভ ও যুক্তিপূর্ণ ভাষণ যারা দেবেন কিংবা তার চর্চা যারা দেখতে চাইবেন তারা সর্বদা স্মরণ করবেন সুনামগঞ্জের ভাটি অঞ্চল থেকে উঠে আসা এই প্রখর রুচিবান ও রসবোধসম্পন্ন মানুষটিকে। তার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।