অবশেষে ফরিদপুর বিভাগ হচ্ছে-প্রধানমন্ত্রীর কথা রাখলেন
ফরিদপুর প্রতিনিধি : অবশেষে ফরিদপুর বিভাগ হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর কথা রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ঢাকা বিভাগ ভেঙে নতুন একটি বিভাগ হবে। নতুন সেই বিভাগ ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা নিয়ে গঠিত হবে। আজ বুধবার ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে পুনরায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীদের প্রতি জঙ্গি, মাদক ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ আমাদের পথ নয়’। তিনি বলেন, যারা ছাত্রছাত্রী, তাদের লেখাপড়ার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তাদের জঙ্গিবাদ, মাদক ও সন্ত্রাসের পথ পরিহার করতে হবে।
অভিভাবক, শিক্ষক, আলেম সমাজ, রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো ছেলেমেয়ে যেন সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গির পথে যেতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষত অভিভাবকদের সতর্ক নজর রাখতে হবে, তাঁর ছেলে কোথায় যায়, কাদের সঙ্গে মেশে, কী করে—সেদিকে নজর রাখতে হবে।
‘ইসলাম জঙ্গিবাদ ও হত্যা সমর্থন করে না’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলাম সৌভ্রাতৃত্বের ধর্ম, হত্যার বা আত্মহনন ইসলাম সমর্থন করে না। এ কারণে ইসলাম ধর্মের বদনাম হচ্ছে, মুসলমানদের সম্মান ধ্বংস হচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে নজর দিতে হবে।’
ফরিদপুর বিভাগ ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিভাগ বিভক্ত করে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা নিয়ে নতুন বিভাগ করা হবে। প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্যই এটা করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের সেবায় এবং তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করি, আর বিএনপি-জামায়াত জোট জঙ্গিবাদে উসকানি দেয়। আওয়ামী লীগ মানে উন্নয়ন, আওয়ামী লীগ মানে ভাগ্যের পরিবর্তন। বিএনপি সারের বদলে গুলি ছুড়েছে আর আমরা ক্ষমতায় এসে তিন দফা সারের দাম কমিয়ে দিয়েছি।’
‘বাংলাদেশের একটা মানুষও গৃহহীন থাকবে না’—এ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যার কোনো ঘর নেই, জমি নেই, ঠিকানা নেই—তাদের বিনা পয়সায় ঘর তুলে ঠিকানা করে দেওয়া হবে। প্রি-প্রাইমারি থেকে উচ্চতর শ্রেণি পর্যন্ত ৭৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। বিনা মূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে ৩৬ কোটির বেশি। আজ পড়াশোনা করতে কোনো পরিবারকে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে না। ‘মায়ের হাসি’ প্রকল্পের আওতায় উপবৃত্তির টাকা সরাসরি চলে যাচ্ছে মায়েদের মোবাইলে।
শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার সুযোগ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ আগামী ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হবে।
সভায় জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাংসদ বাহাউদ্দিন নাছিম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপু মনি, আবদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা। সভা পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর জামাই খন্দকার মশরুর হোসেনকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়।
বুধবার বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারটি ফরিদপুরের শেখ জামাল স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। এরপর প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর সার্কিট হাউসের ভিআইপি মিলনায়তনে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এর আগে আরেকটি হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ফরিদপুরে পৌঁছান।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের শহরতলির বদরপুরের বাড়ি আফসানা মঞ্জিলে আসেন। সেখানে তিনি জোহরের নামাজ আদায় এবং মধ্যাহ্নবিরতি পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল খন্দকার মোশাররফ হোসেনের পুত্রবধূ। সে হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মধ্যাহ্নবিরতির ওই সময়টুকু মেয়ের বাড়িতেই অবস্থান করেন। ওই বাড়িতে তিনি দুপুরের খাবার খান।
নামাজ ও মধ্যাহ্নবিরতির পর বিকেলে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে প্রধানমন্ত্রী ১৯টি নির্মাণ প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং ও ১২টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।