• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

অবশেষে ইকবাল সোবহান চৌধুরীর জয় ॥ ৭/১০ ফর্মুলায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি ঐক্য॥ জামায়াতের পেটে লাথি জাতীয় প্রেসক্লাবে!


প্রকাশিত: ২:১৪ এএম, ২৯ মে ১৫ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ১৮৮ বার

ikbal sobhan chow-www.jatirkhantha.com.bdএস রহমান.ঢাকা: অবশেষে ইকবাল সোবহান চৌধুরীর জয় হলো। তাঁর ফর্মুলা মানতে বাধ্য হলেন বিএনপিপন্থিরা। বিএনপিপন্থি নেতারাই ঘোষণা দিয়েছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ফর্মুলার কমিটি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ফর্মুলা মতে পদ ভাগাভাগি করে আওয়ামী লীগ-বিএনপিপন্থি সাংবাদিক নেতারা সাত-দশে ঐক্য করে জাতীয়  প্রেসক্লাব থেকে জামায়াতের পেটে লাথি মেরেছেন।

press_club_election-www.jatirkhantha.com.bdশওকত মাহমুদের বিএনপি-জামায়াত সমর্থক মতে নির্বাচন ছাড়াই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের একটি অংশ নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করেছে। হঠাৎ করে ডাকা দ্বি বার্ষিক সভা থেকে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ফর্মুলার কমিটিতে সভাপতি হিসেবে থাকছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন কামরুল ইসলাম চৌধুরী। মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সিনিয়র সহ সভাপতি এবং আমিরুল ইসলাম কাগজী সহ press club-jamat-www.jatirkhantha.com.bdসভাপতি মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আশরাফ আলী ও ইলিয়াস খানকে। আর কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনীত হয়েছেন কার্তিক চ্যাটার্জি।

সদস্য পদে মনোনীত হয়েছেন আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভূইঞা, সাইফুল আলম, মোল্লা জালাল, শ্যামল দত্ত, শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, সরদার ফরিদ আহমাদ, শামসুল হক দূররানী এবং হাসান আরেফিন। সমঝোতার এ কমিটিই পরবর্তীতে পাস করিয়ে নতুন কমিটি হিসেবে কাজ শুরু করবে বলে সূত্রে জানা গেছে।

কমিটি ঘোষণা করেন এলাহী নেওয়াজ খান। শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দ্বি-বার্ষিক সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, বর্তমান কমিটি অবৈধ হয়ে গেছে। তাই সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি করা হয়েছে। সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য আরও ৫০০ বাড়িয়ে ১৫০০ করার সিদ্ধান্ত হয়।

আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের প্রাধান্য রেখে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এই সাধারণ সভায় একশ’র কম সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে কামাল উদ্দিন সবুজ ও সৈয়দ আবদাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন কমিটি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

প্রেসক্লাবের এক পক্ষে আওয়ামী লীগ ও অপরদিকে বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাসী প্রেসক্লাব সদস্যরা থাকলেও বাদ পড়ছেন এতোদিন বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে প্রেসক্লাব শাসন করা জামায়াত সমর্থকরা। সকালে দৃশ্যপট থেকে জামায়াতকে সরিয়ে সমঝোতার কমিটি গঠনের জন্য সমঝোতা বৈঠকটি শুরু হয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে। ওই বৈঠকে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বিএনপির মতাদর্শে বিশ্বাসী সিনিয়র সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবির ও খন্দকার মনিরুল আলমসহ দুই পক্ষের সাংবাদিক নেতারা ছিলেন।

দীর্ঘ বৈঠক শেষে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা ১৭ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেন। দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী বিএনপির সমর্থকদের দখলে ছিলো জাতীয় প্রেসক্লাব। নতুন সদস্য পদ দেওয়া থেকে শুরু করে সব পর্যায়েই জামায়াত-বিএনপির সমর্থকদেরই প্রাধান্য ছিলো। আর দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণ চিন্তা থেকে অনেক অপেশাদার, অযোগ্য ও সাংবাদিক নামধারীকে দেওয়া হচ্ছিলো সদস্য পদ। এভাবে নিজেদের পক্ষের লোকজনকে সদস্য করে ভোট বাড়িয়ে প্রতি নির্বাচনেই জিতে আসছিলো জামায়াত-বিএনপি প্যানেল

সভায় আওয়ামী লীগ সমর্থক সাংবাদিকদের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “কয়েক বছর ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব একটি গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে, এভাবে ক্লাব চলতে পারে না।

“আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা দেশে স্বেচ্ছাচারিতা মানি নাই, জাতীয় প্রেস ক্লাবেও কোনো স্বেচ্ছাচারিতা আর মেনে নেওয়া হবে না।”

মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটিকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করে ইকবাল সোবহান বলেন, “৩১ মার্চের পর থেকে এই কমিটির ক্লাব পরিচালনার কোনো আইনগত বৈধতা নেই। অতিরিক্ত সাধারণ সভায় ক্লাবের তাদের ৩১ মার্চের মধ্যে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও তারা চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন।

“আমরা সাধারণ সদস্যরা এর জবাবে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই। এরপরও যদি আপনারা ক্লাবের চেয়ার আঁকড়ে থাকেন, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। সাধারণ সদস্যরা আপনাদের মোকাবেলা করবে।”

ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এই সাধারণ সভা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “আজকের সভায় যারা সমবেত হয়েছেন, তারা জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে অপশক্তির হাত থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে শামিল হলেন।”

সবার সমঝোতায় এই কমিটি গঠিত হয়েছে দাবি করে ইকবাল সোবহান বলেন, ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ফোরামকে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতিসহ সাতটি পদ এবং জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত ফোরামকে সাধারণ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষসহ ১০টি পদ দেওয়া হয়েছে।

এবার নির্বাচনের তফসিল হওয়ার পর সমঝোতার একটি প্যানেল দেওয়া হয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি অংশ এবং বিএনপি সমর্থকদের একটি অংশ আলাদা প্যানেল দেয়।

পরে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ‘পরিবেশ নেই’ বলে দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করলে নির্বাচন আটকে যায়।

ইকবাল সোবহান বলেন, “ক্লাবের অখন্ডতা ধরে রাখতে আমরা এটা করেছিলাম। ঐক্যও হয়েছিল। কিন্তু একটি পর্যায়ে এসে একটি সহযোগী ফোরামের গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক স্বার্থে ওই সমঝোতার ঐক্য ভেঙে দেওয়া হয়।”

সভায় বিএনপি সমর্থক সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা আমানুল্লাহ কবীর বলেন, “জাতীয় প্রেস ক্লাবকে ইউনিয়নের মতো বিভক্ত করে এর অখ- ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করায় আজকের এই সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। যদি এক ব্যক্তি এই ক্লাবের দেখভাল না করত, এই সঙ্কট সৃষ্টি হত না বলে আমি মনে করি। আমরা সেজন্য সমঝোতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই।”

“কথা ছিল একটি সমঝোতা হবে। কার কারণে ওই সমঝোতা ভেঙেছে? সমঝোতা যারা ভেঙেছে, তারা আজ এই সভায় আসেননি,” বলেন অবিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের এই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় সাংবাদিক নেতা আমানুল্লাহ কবীর বলেন, “আমরা মনে করি, দল-মত নির্বিশেষে ক্লাবকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। একে কোনো রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম বানানো যাবে না। এটা পেশাদার সাংবাদিকদের মানোন্নয়ন ও বিশ্রামের স্থান।”

ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মনিরুল আলম বলেন, “২০০২ সালে যে কমিটি বিজয়ী হয়ে আসে, তারাই একচেটিয়াভাবে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দুই ফোরামের ভোট ভারসাম্যহীন করে ফেলে। ফলে সৃষ্টি হয় সঙ্কটের। আমরা এই ভারসাম্যহীনতার অবসান চাই।”

বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য ইউনিয়ন নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান মনিরুল আলম, যিনি বিএনপি সরকারের সময়ে প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ছিলেন।

সভায় বক্তব্য রাখেন ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলতাফ মাহমুদ। সভা পরিচালনা করেন ক্লাবের সদস্য আশরাফ আলী।

সভাপতির বক্তব্যে শাহজাহান মিয়া বলেন, “আজকের এই সভা ঐতিহাসিক একটি সভা। এটা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইতিহাস মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।”

সভায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর ক্লাব লাউঞ্জে এসে সবার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শফিকুর রহমান ও কামরুল ইসলাম।

এর আগে তিনবার নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হলেও নির্বাচন হয়নি। গত বছর ৩০শে ডিসেম্বর ক্লাবের সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। সর্বশেষ ২৯ মে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে সরকার-সমর্থক ও বিরোধী দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় ১৭ই মে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিত করে পদত্যাগ করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে।

চলমান পরিস্থিতিতে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি ২৫ ও ২৬ মে সভা করে ২৮ মে অনুষ্ঠেয় দ্বিবার্ষিক সাধারণ সভা স্থগিত ঘোষণা করে এবং ২৭শে জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভা ডাকে। এই প্রেক্ষাপটে গতকাল উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সরকার-সমর্থক ফোরাম, শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ফোরাম ও আমানউল্লাহ কবিরের সভাপতিত্বে জাতীয়তাবাদী ধারার একটি ফোরাম আলাদা সভা করে।