অবশেষে আবাহনীই চ্যাম্পিয়ন হলো যেভাবে-
স্পোর্টস রিপোর্টার : অবশেষে আবাহনীই চ্যাম্পিয়ন হলো। সাকলাইন সজীব নিয়েছেন ৭ উইকেট। লিগে অসাধারণ খেলেছেন মোসাদ্দেক হোসেন। বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন তাসকিন আহমেদ। আর আইপিএল থেকে ফেরা বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব তো বদলে দিলেনসবকিছু..।সবমিলিয়ে আবাহনী’ই সেরা। সাফল্যের শতভাগ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ল চ্যাম্পিয়নরা। কাল মিরপুরে l
সামান্য ‘কারিগরি’ ত্রুটির কারণে চূড়ান্ত উল্লাসটা আটকে থাকল। আবাহনীর খেলোয়াড়েরা যে তখনো জানেন না প্রাইম দোলেশ্বরের সঙ্গে স্থগিত ম্যাচের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে!
ম্যাচ আবার হলে আবাহনীর শিরোপা জয়ের সম্ভাবনা ৯৯ শতাংশ। চ্যাম্পিয়ন হতে হলে দোলেশ্বরকে তখন জিততে হতো অনেক বড় ব্যবধানে। সেটা প্রায় অসম্ভব বুঝেই কাল মিরপুরে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবকে ১১৫ রানে হারানোর পর খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা গ্রুপ ছবি তুললেন, সাকলাইন সজীব ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ের স্মারক হিসেবে নিলেন ম্যাচের বল, লিগজুড়েই দারুণ ব্যাটিং করা মোসাদ্দেক হোসেন দখল করলেন একটা স্টাম্প।
কিন্তু চার মৌসুম পর লিগ শিরোপা ঘরে নেওয়ার যে উল্লাস, সেটা হয়ে থাকল বাক্সবন্দী।আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা এল সন্ধ্যার পর, ততক্ষণে খেলোয়াড়েরা মাঠ ছেড়ে আপন ঠিকানায়। স্থগিত ম্যাচের নিষ্পত্তির জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশে দুই দলকে ১ পয়েন্ট করে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থগিত ম্যাচটি আর হবে না। অর্থাৎ ১৬ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে আবাহনীই চ্যাম্পিয়ন বহুল আলোচিত এবারের প্রিমিয়ার লিগে। এটি তাদের ১৮তম লিগ শিরোপা। ২১ পয়েন্ট নিয়ে রানার্সআপ প্রাইম দোলেশ্বর।
১৪২ রানের ইনিংস খেলার পথে তামিম ইকবাল l প্রথম আলোলিগের প্রথম পর্বে আম্পায়ারিং বিতর্কে আবাহনীর বেশ কয়েকটি জয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সুপার লিগে সেই আবাহনীই দুর্বার। কাল ইনিংসের তৃতীয় বলে ওপেনার লিটন দাসের উইকেট হারালেও আবাহনী শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে করেছে ৩১৬, বিশাল এই স্কোরের ভিত গড়েছেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করে লিগে নিজের রানটা ৫৭২ থেকে এক লাফে তুলে এনেছেন ৭১৪-তে। এবারের লিগে সর্বোচ্চ রান দোলেশ্বরের রকিবুল হাসানের (৭১৯), তারপরই তামিম।
তামিম সেঞ্চুরি করলে দলের স্কোর কেমন হয়, সেটা সবার জানা। তার ওপর কাল আরও একবার জ্বলে উঠলেন মোসাদ্দেক হোসেন। ৯৭ রানে ৩ উইকেট যাওয়ার পর তামিম-মোসাদ্দেকের চতুর্থ উইকেট-জুটির ১৭৩ রানই ৩০০ পেরোনোর সিঁড়িতে তুলে দেয় আবাহনীকে। ৭ নম্বরে নেমে মাত্র ১০ বলে ২৬ রান করে ছোট্ট একটা ঝড় তুলে গেছেন আবুল হাসান।
ব্যাট হাতে তামিম, না মোসাদ্দেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন, সেটাই একটা প্রশ্ন। ১১ বাউন্ডারির সঙ্গে চার ছক্কা তামিমের। মোসাদ্দেক মাত্র তিনটি চার মারলেও ছয় মেরেছেন পাঁচটি। ১৩২ বলে ১৪২ রান করে গেছেন তামিম, তাঁকে দারুণ সংগত দিয়েছেন মোসাদ্দেক। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৫৫ বলে ৭৩ করেছেন এই তরুণ।
ওটিরই ধারাবাহিকতায় কাল তাঁর ব্যাট থেকে ৭৪ বলে এল ৭৮। দুজনের ঝড়ে সবচেয়ে বেশি নিষ্পেষিত প্রাইম ব্যাংকের অফ স্পিনার ও অধিনায়ক শুভাগত হোম চৌধুরী। ৮ ওভারে ৫০ রান দিয়েছেন, এর মধ্যে ২৫-ই ইনিংসের ৪২তম ওভারে। ওই ওভারের প্রথম বলেই তামিমের ছক্কা। তৃতীয়, পঞ্চম ও শেষ বলে আরও তিন ছক্কা মোসাদ্দেকের। তাঁদের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে আবাহনী তুলেছে ১১৭।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ তামিমই, কিন্তু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন প্রাইম ব্যাংককে ২০১ রানে থামিয়ে দিতে সাকলাইন সজীবের অবদানও বিশাল। ৭ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষের ইনিংসটা ধসিয়ে দিয়েছেন তো তিনিই। এবারের লিগে তামিমের ১৪২ যেমন সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস, সাকলাইনের কালকের বোলিংও সেরা বোলিং পারফরম্যান্স। লিস্ট ‘এ’–তে তাঁর নিজেরও সেরা।
প্রাইম ব্যাংকের হয়ে যা একটু চেষ্টা করেছেন মেহেদী মারুফ ও শুভাগত। উদ্বোধনী জুটিতে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক উন্মুক্ত চাঁদকে নিয়ে ১২ ওভারে ৭২ রান তোলেন মারুফ। ৮২ বলে ৫ চার ও ৩ ছয়ে মারুফ করেছেন ৬৯। সাতে নেমে ৩৩ বলে ৫১ রান শুভাগতর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আবাহনী–প্রাইম ব্যাংক, মিরপুর
আবাহনী: ৫০ ওভারে ৩১৬/৭ (তামিম ১৪২, মোসাদ্দেক ৭৮; চাঁদ ৩/৫৯, নাজমুল ২/৪৮, রুবেল ২/৬৯)। প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব: ৩৭.২ ওভারে ২০১ (মেহেদী ৬৯, শুভাগত ৫১; সাকলাইন ৭/৫৮, তাসকিন ২/৪৫)। ফল: আবাহনী ১১৫ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: তামিম ইকবাল।