• রোববার , ৫ জানুয়ারী ২০২৫

অনেকের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে-ছাত্রদলকে সজাগ থাকতে হবে: তারেক রহমান


প্রকাশিত: ৩:৪৭ এএম, ২ জানুয়ারী ২৫ , বৃহস্পতিবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৮ বার

সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে যেন দেশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা যেন বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। অনেকের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। এসব থেকে সাবধান থাকতে হবে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে।

 

বিশেষ প্রতিনিধি : সংস্কার ও নির্বাচন দুটোই অনিবার্য জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, হাজারো ছাত্রজনতার সীমাহীন আত্মত্যাগ ও তেজোদীপ্ত সাহসী ভূমিকার মাধ্যমে মাফিয়াতন্ত্রের পতনের পর বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনা দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে যেন দেশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা যেন বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। অনেকের ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। এসব থেকে সাবধান থাকতে হবে। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে। লোভ ও লাভের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে ছাত্র ও তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম।বুধবার (১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দেশে রাজনীতির প্রয়োজনে আরও রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটবে। এটি গণতান্ত্রিক রীতি। বিচলতি হওয়ার কিছুই নেই। বিএনপি সব গণতান্ত্রিক উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই বহু দল ও মতচর্চার পক্ষে।তিনি বলেন, জনগণ কোন দলকে গ্রহণ করবে, নাকি বর্জন করবে, নির্বাচনের মাধ্যমে সেই রায় দেবে জনগণের আদালত। যারা জনগণের আদালতের মুখোমুখি হতে ভয় পায় কিংবা যাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তারাই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে।

গণতন্ত্রকামী জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনারা ধৈর্য হারাবেন না। নির্বাচনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকুন। নির্বাচন কমিশন যথারীতি দায়িত্ব পালন করবে, সেই বিশ্বাস রাখুন। বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বলব, আপপ্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। সতর্ক থাকবেন। নিজেরা অপপ্রচারের জন্য এমন কোনো কার্যক্রম করবেন না, যাতে অন্যরা সুযোগ পায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য অর্জনে শিক্ষা, ঐক্য এবং প্রগতি স্লোগানে ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ছাত্রদলের গৌরবময় পথচলা শুরু হয়। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের বক্তব্যে এটাই প্রমাণিত হয় যে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বর্তমান ছাত্রদল দেশের ছাত্রসমাজের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে। যারা এই ছাত্রদলকে গড়ে তুলতে ত্যাগ শিকার ও অবদান রেখেছেন, তাদেরও গভীরভাবে স্মরণ করছি।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, যুবদলের সভাপতি আবদুর মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বর্তমান সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম প্রমুখ।

তারেক রহমান আরও বলেন, হাজারো ছাত্রজনতার সীমাহীন আত্মত্যাগ ও তেজোদীপ্ত সাহসী ভূমিকার মাধ্যমে মাফিয়াতন্ত্রের পতনের পর বাংলাদেশ বিপুল সম্ভাবনা দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের হঠকারি সিদ্ধান্তের কারণে যেন দেশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা যেন বিনষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে। লোভ ও লাভের ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে ছাত্র ও তরুণদের ভূমিকা অপরিসীম।

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে একটি কার্যকর ও প্রভাবশালী রাষ্ট্রের ভূমিকায় দেখতে চাইলে এবং বাংলাদেশের একজন মর্যাদাবান নাগরিকে হিসেবে বেঁচে থাকতে হলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়তে হবে। এ জন্য শিক্ষার্থীরাই প্রথম হাতিয়ার। রাষ্ট্র ও রাজনীতি হিসেবে ছাত্রদের সজাগ থাকতে হবে। তবে এর জন্য দরকার লেখাপড়া, লেখাপড়া এবং লেখাপড়া।

তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত রাখতে দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধ্বংস করছিল পলাতক মাফিয়াতন্ত্র সরকার। সব খাতে অচলাবস্থা তৈরি করেছিল। প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নিয়ে দেশ ও জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এ কারণেরই বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচার আন্দোলনের মতোই চব্বিশে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষ অংশ নিয়েছিল। তুমুল আন্দোলনে মাফিয়া স্বৈরাচার সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সামনে এবার জনগণের কাঙ্ক্ষিত একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক, মানবিক দেশ গড়ার পালা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য দলগুলো জনগণের সামনে যার যার আদর্শ ও কর্মসূচি উপস্থাপন করবে। জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করবে। এটিই গণতান্ত্রিক বিশ্বের স্বাভাবিক ও স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম। এমন অবস্থায় কোনো কোনো মহল থেকে সংস্কার নাকি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে বিএনপি মনে করে এটি অসৎ উদ্দেশ্যে একটি কূট তর্ক।

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি মনে করে রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলের গুণগত পরিবর্তনের জন্য সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন। বিদ্যমান ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে সংস্কার একটি অনিবার্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। একইভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টেকসই ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নির্বাচনই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর পন্থা। নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পায়। যেটি রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করে।

বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্রে জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা না গেলে গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবাদ পুঁথিগত সংস্কার কোনো কিছুই টেকসই হয় না। এ জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে; যা অবশ্যই প্রয়োজন। তবে এসব সংস্কার কর্মসূচির আড়ালে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা উপেক্ষিত থাকলে জনগণ হয়তো খোদ সরকারের সংস্কার দাবি নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জনগণের মনে প্রশ্ন উঠেছে, পলাতক স্বৈরাচারের আমলে সৃষ্ট বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? ফ্যাসিস্ট আমলে দায়ের করা লাখ লাখ মামলায় এখনো কেনো মানুষকে অকারণে প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় ছোটাছুটি করতে হচ্ছে? দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মনে করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের সংস্কার কিংবা গৃহীত পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থতার পরিচয় দিলে ষড়যন্ত্রকারীরা চব্বিশের অভ্যুত্থানের স্পিরিট বিনষ্ট করার সুযোগ নেবে। এরইমধ্যে তারা দেশে একাধিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। সে জন্যই মানুষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা গণতান্ত্রিক শক্তি দেখতে চায় না। বিএনপিসহ অন্য দলগুলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেওয়া অব্যাহত রেখেছেন।

সরকারের বিষয়ে তারেক রহমান বলেন, রাষ্ট্র ও সরকারের বিদ্যমান বিধিব্যবস্থা নিয়ে তরুণ প্রজন্মের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এটি থাকা স্বাভাবিক। ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটার অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। তারা ভোটার হলেও আজ পর্যন্ত কোনো নির্বাচনে ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারেনি। সুতরাং রাষ্ট্র ও রাজনীতি, সরকারের প্রচলিত বিধি ব্যবস্থায় সংস্কার করে আরও উন্নত এবং টেকসই বিধি ব্যবস্থার পক্ষে ছাত্র ও তরুণরা অবস্থান নেবে সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে এটিই স্বাভাবিক।