অংশীজনদেরপর্যালোচনায় যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি- সাইবার সিকিউরিটি আইন নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি
কূটনৈতিক রিপোর্টার : সাইবার সিকিউরিটি আইনটি পাসের আগে পর্যালোচনা করার জন্য এর অংশীজনদের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে এক বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। পুরোনো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের অনেক উপাদান সাইবার সিকিউরিটি আইনে ব্যবহার করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে সাইবার সিকিউরিটি আইন পাস হয়েছে। মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষয়টি তারা খেয়াল করেছে।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটি দুঃখজনক যে আইনটি পর্যালোচনা করার জন্য এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি।
এর আগে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়ে বাংলাদেশ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তাকে স্বাগত জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিতর্কিত এই আইনটি বিরোধী ও সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এবং আটক করতে ব্যবহৃত হতো বলেও ওই সময় মন্তব্য করেছে দেশটি।
এই পরিস্থিতিতে খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছিল ওয়াশিংটন।স্থানীয় সময় সোমবার (৭ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেছিলেন। ওই সময় সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রতিস্থাপন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গটি তোলেন। ওই সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে চলেছে। বিতর্কিত এই আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেশ সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। (এই আইনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের পর) যুক্তরাষ্ট্রের কী এ সম্পর্কে কোনও মূল্যায়ন আছে এবং আইনটি কোন দিকে যেতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেছিলেন, বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আগেই বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সমালোচকদের গ্রেফতার, আটক এবং মুখ বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়েছে। কাজেই এই আইনটি সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘদিনের যে প্রতিশ্রুতি ছিল সেটিকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা বলেছি, সকল অংশীদারকে (স্টেকহোল্ডার) যেন নতুন খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং এই আইনটিতে যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ পাস হয়। আইনটিকে নিবর্তনমূলক আইন আখ্যা দিয়ে শুরু থেকেই তা বাতিলের দাবি জানিয়ে এসেছে আইনজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী ও বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন।
তাদের দাবি, ক্ষমতাসীন দলের লোকজনই বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই আইনকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। আইনটির সমালোচকদের মতে, এ আইনে দায়ের হওয়া মামলার সবচেয়ে বিতর্কিত দু’টি বিষয় হলো এখানে মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয় এবং আইনের বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মোট ৫৩ ধারার মধ্যে ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য হিসেবে নির্দিষ্ট করা আছে।