জিরা লুটেরা-

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার সহসভাপতি মাহিদুর রহমান মাহাদীকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি : ময়মনসিংহে ট্রাকভর্তি জিরা লুট করার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা গ্রেপ্তার হওয়ার পর দল থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।বহিষ্কার হওয়া নেতার নাম মাহিদুর রহমান ওরফে মাহাদী। তিনি জেলা উত্তর ছাত্রদলের সহসভাপতি পদে ছিলেন।

বুধবার রাতে তাঁকে বহিষ্কার করে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ উত্তর জেলা শাখার সহসভাপতি মাহিদুর রহমান মাহাদীকে সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। ছাত্রদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তাঁর সঙ্গে কোনোরূপ সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

মাহিদুর রহমান ফুলপুর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আব্দুল আজিজের ছেলে। মাহিদুর নিজেও ইউপি নির্বাচন করে দুবার পরাজিত হন। গত মঙ্গলবার রাতে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় তাঁর সঙ্গে থাকা আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ফুলপুর হাসপাতাল রোডের শসার বাজার এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তারে পর বুধবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহ উত্তর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রায়হান শরীফ হলুদ বলেন, ‘কমিটি হওয়ার পর থেকে মাহিদুর রহমানকে সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি। ডিবি পুলিশের মাধ্যমে গতকাল (বুধবার) আমি জানতে পারি, সে অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার কাছ থেকে ইন্ডিয়ান জিরা পাওয়ার কথা আমাকে জানিয়েছে। ডিবি আমাকে জানিয়েছে, সে আগে থেকেই এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এসব ঘটনায় দল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে বহিষ্কার করেছে। এ ধরনের ঘটনায় যারাই জড়িত হবে, তাদের বিরুদ্ধেই দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’

মাহিদুর বুধবার আদালতে জিরা লুটের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। লুট করা জিরা সিরাজগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাই জিরা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।ডিবি পুলিশ জানায়, টাঙ্গাইল থেকে মুক্তাগাছা হয়ে ৮ অক্টোবর হালুয়াঘাটে যাচ্ছিল একটি জিরাবাহী ট্রাক। মো. জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যবসায়ী দরপত্রের মাধ্যমে এসব জিরা কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু মুক্তাগাছা এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে একদল লোক জিরাবাহী গাড়ি থেকে প্রায় ৪০০ বস্তা জিরা লুট করে নিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ৯ অক্টোবর মুক্তাগাছা থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ডিবি পুলিশ তদন্তকাজ শুরু করে।

জেলা ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জিরাবাহী গাড়ি লুটের ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকায় মাহিদুর ও এক সহযোগীকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মাহিদুর বুধবার আদালতে জিরা লুটের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। লুট করা জিরা সিরাজগঞ্জে নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তাই জিরা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। চক্রটির কাছ থেকে জিরাবাহী গাড়ি ব্যারিকেড দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় অন্তত ৮ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। চারজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।