• রোববার , ২২ ডিসেম্বর ২০২৪


প্রকাশিত: ৪:১৩ এএম, ৭ মে ২৪ , মঙ্গলবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৪৬ বার

 

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : খেলাপি ঋণ, নানা অনিয়মে জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থা এক বছরের মধ্যে ভালো হবে বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান।তিনি বলেছেন, অন্য কারও সঙ্গে একীভূতও হবে না ব্যাংকটি। আগামী এক বছরের মধ্যে আর্থিক স্বাস্থ্যে উন্নীত হওয়ার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংক তাতে সম্মতি দিয়েছে।সাড়ে চার মাসের মাথায় নতুন পর্ষদ গঠনের পরদিন সোমবার রাজধানীর বাংলা মোটরে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন খলিলুর রহমান।

তিনি বলেন, এর আগে যা হওয়ার হয়েছে, আর কোনো লুটপাট হবে না। ব্যাংক থেকে যারা টাকা নিয়েছেন, তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। এক বছরের মধ্যে আমরা ব্যাংকটিকে আগের অবস্থায় নিতে পারব।ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডকে (এনবিএল) দেশের সবার ব্যাংক দাবি করে নতুন চেয়ারম্যান বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে ব্যাংকটি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর শেষে এনবিএল এর আর্থিক প্রতিবেদন সন্তোষজনক অবস্থানে উন্নীত হলে একীভূত হওয়ার মতো পরিস্থিতি থেকে বেঁচে যাবে ব্যাংকটি।

গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটি থেকে সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারসহ চার পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরপর গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয়। এতে উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর ছাড়াও আরেক উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেনকে রাখা হয়। আর গত দেড় দশকের মধ্যে প্রথমবার সিকদার পরিবারের কাউকে রাখা হয়নি।

নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়ে সোমবার আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে আসেন চট্টগ্রামভিত্তিকি শিল্প গ্রুপ কেডিএসের কর্ণধার খলিলুর রহমান। এ সময় আরও তিন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

ঋণ অনিয়ম হওয়া সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর বলেন, ন্যাশনাল ব্যাংকে লুপপাট আর হবে না, এক পয়সাও লুটপাট হবে না। এতটুকু আপনাদের বলতে পারি।সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড় করাতে উদ্যোক্তারা নতুন করে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছে। নতুন পর্ষদ তিন হাজার কোটি টাকার আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।

ন্যাশনাল ব্যাংককে ব্যবসায়ীবান্ধব ব্যাংক হিসেবে গড়া হবে মন্তব্য করে খলিলুর বলেন, ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন আমরা বুঝি। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যাংক হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে।তিনি বলেন, নতুন পর্ষদ পুরনো ঋণ আদায়, ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যবসা বাণিজ্যকে সম্প্রসারণ করা ও মুনাফায় ফিরতে চেষ্টা করবে।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক আগের পর্ষদ বাতিল করে এনবিএলের চেয়ারম্যান করেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে। স্বতন্ত্র পরিচালক মনোনীত করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেনকে।

গত বৃহস্পতিবার তারা একযোগে সবাই পদত্যাগ করেন। তাদের সঙ্গে পর্ষদে থাকা সিকদার পরিবারের একমাত্র সদস্য পারভীন হক সিকদারও পদত্যাগ করেন।১৯৮৩ সালে প্রায় একই সময়ে গঠিত ইউসিবিএলের সঙ্গে একীভূত হওয়া নিয়ে আলোচনা এবং এনবিএলের পর্ষদে এর বিরোধিতা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যে পর্ষদ ভেঙে দেয়া ও পুর্নগঠনের খবর আসে রোববার।

দশ সদস্যের নতুন পর্ষদে খলিলুর রহমানসহ আগের তিন পরিচালককে রাখা হয়েছে। পুরনোর মধ্যে আছেন উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন ও সিকদার ইন্স্যুরেন্সের মনোনীত পরিচালক সফিকুর রহমান।নতুন পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে এসেছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক কমিশনার ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক জহুরুল হুদা।

প্রতিনিধি পরিচালক হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একে এম তফাজ্জল হক, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী এরশাদ মাহমুদ ও আইনজীবী এহসানুল করিম।নিয়ম ও বিধি ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে নানা অনিয়মে ধুঁকতে থাকা বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংক গত ২০২৩ সালেও প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে। আগের বছরে লোকসান দিয়েছিল তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা।

১৯৮৩ সালে ১৮ উদ্যোক্তা পরিচালক শুরু করেন ন্যাশনাল ব্যাংক। ২০০৯ সালে পরিচালনা পর্ষদে ব্যাপক বদলের মাধ্যমে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ চলে যায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে।এক যুগের বেশি সময় ধরে চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মারা যান জয়নুল হক সিকদার। তার পর তার স্ত্রী মনোয়ারা সিকদার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন গত ডিসেম্বর পর্যন্ত।