• বৃহস্পতিবার , ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪


প্রকাশিত: ৯:৪০ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২৩ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫৭ বার

স্টাফ রিপোর্টার : হেফাজতে ইসলামের কারাবন্দি সব নেতাকর্মীকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মুক্তি দিতে এবং হেফাজত নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন হেফাজত মহাসচিব সাজিদুর রহমান।

বুধবার (২৫ অক্টোবর) ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের জাতীয় ওলামা মাশায়েখ সম্মেলনে হেফাজত নেতারা এসব কথা বলেন।জাতীয় নির্বাচনের আগে কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবি জানিয়ে নেতারা বলেন, নির্বাচনের আগে আলেমদের মুক্তি না দিলে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

হেফাজত মহাসচিব বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি আছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, অর্থ সম্পাদক মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ফখরুল ইসলাম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ অনেক আলেম। সাজানো মামলায় তাদের এত দীর্ঘ সময় অন্যায়ভাবে বন্দি করে রেখেছে সরকার। আজকের সম্মেলন থেকে কারাবন্দি সব নেতাকর্মীকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মুক্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। ২০১৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইসলামবিরোধী সব অপশক্তি প্রতিরোধ, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মজলুম মানবতার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বস্তরের আলেম ও তৌহিদী জনতাকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুৎসা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস করতে হবে। সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে।’

কর্মসূচি প্রসঙ্গে হেফাজত মহাসচিব সাজেদুর রহমান বলেন, ‘আগামী ৩ মাসের মধ্যে সারা দেশে হেফাজতে ইসলামের জেলা, উপজেলা ও মহানগর কমিটি গঠন করা হবে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চট্টগ্রাম, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে করা হবে শানে রেসালাত সম্মেলন। পর্যায়ক্রমে অন্য সব জেলাতেও অনুষ্ঠিত হবে।’

বেফাকের মহাসচিব ও হেফাজতের নায়েবে আমির মাহফুজুল হক বলেন, ‘হেফাজত রাজনৈতিক সংগঠন নয়, তবে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন। ইসলাম যদি রক্ষা না পায় তবে দেশের স্বাধীনতা রক্ষা পাবে না। কেউ যদি ইসলামবিরোধী কাজ করে, হেফাজত তা প্রতিরোধ করবে। হেফজতের ১৩ দফা বাস্তবায়ন করত হবে।’

কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির জন্য যেকোনও কর্মসূচি দিয়ে কারাগারের লৌহ কপাট ভেঙে তাদের বের করে আনতে হবে।হেফাজতের নায়েবে আমির আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের আগেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে আলেমদের মুক্তি দিতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জালেম ক্ষমতায় থাকলে আলেমরা মুক্তি পাবে না।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, আলেমদের জেলে রাখা হয়েছে, এটা সংবিধানের লঙ্ঘন। নির্বাচনের আগে সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচনের আগেই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। যদি না করা হয় জনগণ নির্বাচনে দাঁতভাঙা জবাব দেবে। এই দেশে কোনও অপশক্তি টিকে থাকতে পারবে না।

আহমদ আবদুল কাদের আরও বলেন, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আলেমদের মুক্তি চাই, না হলে দেশে যেকোনও পরিস্থিতির জন্য সরকার দায়ী থাকবে।হেফাজতের সহকারী মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজী বলেন, ‘আলেমরা জেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন। জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। জেলের ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না।

হেফাজত আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে বন্দি আছেন মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী, মুফতি ফখরুল ইসলাম, মুফতি মাহমুদ গুনবী ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ অনেক আলেম। তাদের দীর্ঘ সময় অন্যায়ভাবে সরকার বন্দি করে রেখেছে। আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও তারা মুক্তি পাচ্ছেন না। নতুন মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হচ্ছে। কঠোর গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রশাসনিক চাপ প্রয়োগ করে দেশের কওমি মাদরাসাগুলোকে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় রাখা হয়েছে। জুমার খুতবা ও ওয়াজ-মাহফিল নিয়ন্ত্রণে বারবার চেষ্টা করা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ধর্মীয় ও নাগরিক স্বাধীনতাও খর্ব করা হয়েছে।’

হেফাজতে ইসলাম একটি অরাজনৈতিক সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ দেশে মুসলমানদের ইমান-আক্বিদা ও ইসলামী তাহজীব-তমদ্দুন সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর হাত ধরে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতাকেন্দ্রিক কোনও ধরনের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ এই সংগঠনের নেই, যা আগেও বহুবার আমরা পরিষ্কার করে বলেছি। আমাদের কাজ হলো সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সব নাগরিকের কাছে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো। আমরা কখনও সহিংসতায় বিশ্বাসী নই। সবসময় আমরা সাংবিধানিক অধিকারের জায়গা থেকে নাগরিক ভাষায় জোরালো প্রতিবাদ করেছি এবং বিচারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি।’

হেফাজত আমির আরও বলেন, ‘ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর ভয়াবহ জুলুম চালাচ্ছে। ইসরায়েল সরকার ফিলিস্তিনের গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা এই বর্বরোচিত এ হামলার কঠোর নিন্দা এবং হতাহত মজলুমদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। পশ্চিমাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েল ইতিহাসের নিষ্ঠুর গণহত্যা চালাচ্ছে। তাই নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর অবিলম্বে ইসরায়েলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’