আজ জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পাচ্ছে ১১১ প্রতিষ্ঠান
আসমা খন্দকার : রপ্তানি-বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও জাতীয় রপ্তানি ট্রফি আগামী রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে বিতরণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ দুপুর ২টায় এই ট্রফি বিতরণ করবেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এই ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।অনুষ্ঠানে ২০১১-২০১২ ও ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি এক সঙ্গে বিতরণ করা হবে। রপ্তানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ১১১টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে ‘জাতীয় রপ্তানি ট্রফি’।
এর মধ্যে রপ্তানি ট্রফি প্রাপ্তির তালিকা অনুযায়ী ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক ৬০টি প্রতিষ্ঠান এবং ২০১১-২০১২ অর্থবছরে ৫১টি প্রতিষ্ঠানকে এ ট্রফি দেওয়া হবে। স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ-এই তিন ক্যাটাগরিতে রপ্তানি ট্রফি দেওয়া হবে।সম্মিলিতভাবে দুই অর্থবছরেই সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড।
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নীতিমালা অনুসারে তৈরি পোশাক (ওভেন ও নিটওয়্যার), সব ধরনের সুতা, টেক্সটাইল ফেব্রিক্স, হোম স্পেশালাইজড ও টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, চামড়াজাত পণ্য, ফুটওয়্যার, কৃষিজাত পণ্য (তামাক বাদে), কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, ফুল ও ফলিয়েজ, হস্তশিল্পজাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল পণ্য, অন্যান্য শিল্প পণ্য, ওষুধ, কম্পিউটার সফটওয়্যার, প্যাকেজিং ও একসেসরিজ পণ্য এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলভুক্ত শতভাগ দেশি মালিকানার কারখানাসহ মোট ৩২টি শ্রেণিতে এই পদক দেওয়া হবে।
২০১২-১৩ অর্থবছরের সেরা রপ্তানিকারক স্বর্ণ ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে-রিফাত গার্মেন্ট, জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কামাল ইয়ার্ন, সান সান টেক্সটাইল মিলস, জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স, নোমান টেরিটাওয়েল, অ্যাপেক্স ফুডস, পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, আকিজ জুট মিলস, এপেক্স ট্যানারি, পিকার্ড বাংলাদেশ, এফ বি ফুটওয়্যার, আল-আজমী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, প্রাণ ডেইরি, রাজধানী এন্টারপ্রাইজ, কারুপণ্য রংপুর, বেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফার সিরামিকস, বিআরবি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ, মেরিন সেইফটি সিস্টেম, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, গ্রাফিক পিপল, ইউনিভার্সেল জিন্স, শাশা ডেনিমস, মন ট্রিমস এবং মীর টেলিকম।
২০১২-১৩ অর্থবছরে রৌপ্য ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনন্ত অ্যাপারেলস, স্কয়ার ফ্যাশন, বাদশা টেক্সটাইল, এনভয় টেক্সটাইল, ইউনিলায়েন্স টেক্সটাইল, সীমার্ক (বিডি), রেজা জুট ট্রেডিং, জনতা জুট মিলস, এসএফ ইন্ডাস্ট্রিজ, আর এম এম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ, লালমাই ফুটওয়্যার, মনসুর জেনারেল ট্রেডিং, প্রাণ অ্যাগ্রো, ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ, কোর দি জুট ওয়ার্কস, বেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সার্ভিস ইঞ্জিন, প্যাসিফিক জিন্স ও জাবের অ্যান্ড জোবায়ের একসেসরিজ।
এই বছরে ব্রোঞ্জ ট্রফি পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- অ্যাপারেল গ্যালারি, ইন্টারস্টফ অ্যাপারেলস, মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস, তালহা ফেব্রিক্স, জালালাবাদ ফ্রোজেন ফুডস, উত্তরা জুট ট্রেডার্স, সাদাত জুট ইন্ডাস্ট্রিজ, বেঙ্গল লেদার কমপ্লেক্স, এবিসি ফুটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ, ফুটবেড ফুটওয়্যার, এলিন ফুডস ট্রেড, প্রাণ ফুডস, হেলাল অ্যান্ড ব্রাদার্স, আরএফএল প্লাস্টিক এবং ইউনিগ্লোরি পেপার অ্যান্ড প্যাকেজিং।
২০১১-১২ অর্থবছরের সেরা রপ্তানিকারক ট্রফি পাচ্ছে যেসব প্রতিষ্ঠান : তৈরি পোশাক খাতের ওভেন উপখাত থেকে সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক হিসেবে স্বর্ণপদক পাচ্ছে রিফাত গার্মেন্টস। ওভেন রপ্তানিতে রৌপ্য পদক পাবে অনন্ত অ্যাপারেলস এবং ব্রোঞ্জ পদক পাবে সিনহা ইন্ডাস্ট্রিজ। তৈরি পোশাকের নিটওয়্যার উপখাতে শীর্ষ রপ্তানিকারক হিসেবে স্বর্ণপদক পাবে স্কয়ার ফ্যাশনস, রৌপ্য পাবে জিএমএস কম্পোজিট নিটিং ইন্ডাস্ট্রিজ ও ব্রোঞ্জ পাবে ফোর এইচ ফ্যাশনস। সব ধরনের সুতা রপ্তানিকারকদের মধ্যে স্বর্ণপদক পাবে স্কয়ার টেক্সটাইলস, রৌপ্য মোশারফ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস ও ব্রোঞ্জ পদক পাবে ভিয়েলাটেক্স স্পিনিং। টেক্সটাইল ফেব্রিক্স খাতে স্বর্ণপদক পাবে নোমান উইভিং মিলস, রৌপ্য এনভয় টেক্সটাইল ও ব্রোঞ্জ পদক পাবে প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল।
শীর্ষ রপ্তানিকারক পদক ছাড়াও হোম ও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতে সেরা রপ্তানিকারক হিসেবেও স্বর্ণপদক পাচ্ছে জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স। হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে এপেক্স ফুডস, সীমার্ক (বিডি) রৌপ্য এবং কুলিয়ারচর সি ফুডস (কক্সবাজার) ব্রোঞ্জ পদক পাচ্ছে। কাঁচা পাট রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে পপুলার জুট এক্সচেঞ্জ, রৌপ্য এফআর জুট ট্রেডিং কম্পানি ও ব্রোঞ্জ পদক পাবে রেজা জুট ট্রেডিং। পাটজাত দ্রব্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে আকিজ জুট মিলস, রৌপ্য জনতা জুট মিলস ও ব্রোঞ্জ পাবে করিম জুট স্পিনার্স।
২০১১-১২ অর্থবছরে স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদকের জন্য চূড়ান্ত হওয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানই প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের। এর মধ্যে প্রাণ এক্সপোর্টার্স স্বর্ণপদক, প্রাণ অ্যাগ্রো রৌপ্য এবং প্রাণ ফুডস ব্রোঞ্জ পদক পাবে।
চামড়া (ক্রাস্ট ও ফিনিশড) রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবেন অ্যাপেক্স ট্যানারি, রৌপ্য এসএএফ ইন্ডাস্ট্রিজ। চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে পিকার্ড বাংলাদেশ, রৌপ্য আরএমএম লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ। ফুটওয়্যার রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে এফবি ফুটওয়্যার। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে অ্যাগ্রি কনসার্ন, রৌপ্য ফার্ম ফ্রেশ এন্টারপ্রাইজ এবং ব্রোঞ্জ পাবে আল-আজমী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।
ফুল ও ফলিয়েজ রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে রাজধানী এন্টারপ্রাইজ, আর ক্যাপিটাল এন্টারপ্রাইজ। হস্তশিল্প রপ্তানি করে স্বর্ণপদক পাবে কারুপণ্য রংপুর, আর রৌপ্য কোর দি জুট ওয়ার্কস। প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে বেঙ্গল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ এবং রৌপ্য পাবে এভার ব্রাইট প্লাস্টিক। সিরামিক রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাচ্ছে ফার সিরামিকস। হালকা প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে স্বর্ণপদক পাবে ইউনিগ্লোরি সাইকেল এবং রৌপ্য ট্রান্সওয়ার্ল্ড বাইসাইকেল।
অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি করে স্বর্ণপদক পাবে তানভির পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজ ও আল-হাবিব এন্টারপ্রাইজ। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য খাতে বেক্সিমকো স্বর্ণপদক পাচ্ছে। কম্পিউটার সফটওয়্যার রপ্তানিতে সার্ভিস ইঞ্জিন স্বর্ণপদক এবং গ্রাফিক পিপল পাবে রৌপ্য পদক। ইপিজেডভুক্ত ১০০ শতাংশ বাংলাদেশি মালিকানাধীন (সি ক্যাটাগরি) তৈরি পোশাক শিল্প (ওভেন ও নিট) খাত থেকে ইউনির্ভাসেল জিন্স স্বর্ণপদক ও জিন্স ২০০০ রৌপ্য পদক পাবে।
ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা জানান, জাতীয় রপ্তানি ট্রফি নীতিমালা অনুসারে ২৫টি পণ্য খাতের প্রতিটিতে তিনটি করে (স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ) ট্রফি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যে ২৫টি পণ্য খাতে রপ্তানি ট্রফি দেওয়া হয় সেগুলো হলো, তৈরি পোশাক, নিট পোশাক, সব ধরনের সুতা, টেক্সটাইল, ফেব্রিক্স, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, কাঁচা পাট, পাটজাত দ্রব্য, চামড়া, চামড়াজাত দ্রব্য, পাদুকা, চা, কৃষিজ পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ পণ্য, ফুল, হস্তশিল্পজাত পণ্য, মেলামাইন বা প্লাস্টিকজাত পণ্য, সিরামিক, হালকা প্রকৌশল পণ্য, ইলেকট্রনিক ও ইলেকট্রনিকস পণ্য, অন্যান্য শিল্পজাত পণ্য, ওষুধজাত পণ্য, অন্যান্য রাসায়নিক পণ্য, কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রভৃতি।