আহসান উল্লাহ হত্যায় ১১ আসামির খালাসের রায় বহালে উত্তপ্ত গাজীপুর
মোস্তফা কামাল প্রধান গাজীপুর থেকে : আহসান উল্লাহ হত্যায় ১১ আসামির খালাসের রায় বহালে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গাজীপুর। আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১১ জনের খালাসের রায় আপিল বিভাগে বহাল রাখার প্রতিবাদে টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।রোববার দুপুরে তারা রায়ের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে। আজ দুপুর দুইটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করছে।
এর আগে গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে হাইকোর্টের দেয়া খালাসের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ বিষয়ে শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ২১ জুন আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১১ আসামিকে হাইকোর্টের দেয়া খালাসের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের খালাসের রায় স্থগিত করে চেম্বার আদালত।একই সঙ্গে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
১৪ জুলাই ছিল রায়টি স্থগিতের শেষ দিন একই সঙ্গে রায় স্থগিত বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। ওইদিন আইনজীবীদের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আজ শুনানির দিন ধার্য করা হয়। শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ১১ আসামিকে হাইকোর্টের দেয়া খালাসের রায় বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন।
এ মামলায় হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়া ১১ আসামি হলেন- আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির।
গত ১৫ জুন আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড ও আট জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। অপরদিকে ১১ আসামিকে খালাস দেয়া হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু, মাহবুবুর রহমান, কানা হাফিজ, সোহাগ, শহিদুল ইসলাম শিপু। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আট আসামি হলেন- মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমদ হোসেন মজনু, আনোয়ার হোসেন আনু, বড় রতন, ছোট জাহাঙ্গীর, আব্দুস সালাম, মশিউর মিশু। অন্যদের খালাস দেয়া হয়েছে।
২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার সঙ্গে খুন হন ওমর ফারুক রতন নামে আরেকজন।ঘটনার পরদিন নিহতের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
তদন্ত শেষে এই মামলায় ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ জন এবং আসামিপক্ষে দু’জন সাক্ষ্য দেন।
এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়, খালাস পান অন্য দু’জন।আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে টঙ্গী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি গাজীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
টঙ্গীতে আওয়ামী লীগের সড়ক অবরোধ
আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় ১১ জনের খালাসের রায় আপিল বিভাগে বহাল রাখার প্রতিবাদে টঙ্গীতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।রোববার দুপুরে তারা রায়ের প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করছে।