• সোমবার , ১৮ নভেম্বর ২০২৪

নিজামীর ফাঁসি-জাতীর লজ্জা নিবারন


প্রকাশিত: ১:১১ এএম, ১১ মে ১৬ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৩৩২ বার

শফিক রহমান/ সাইফুল বারী মাসুম/মরিয়াম সুলতানা   :    নিজামীর ফাঁসি-জাতীর লজ্জা নিবারন-একাত্তরের ভয়ংকর খুনে বাহিনী আলবদরের নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। নিজামীর ফাঁসির মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা ২ লাখ নারীর ইজ্জতের অবমাননা Hang nigami-www.jatirkhantha.com.bd0ও লজ্জা কিছুটা নিবারন হয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

ফাঁসি কার্যকর প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক ​জাতিরকন্ঠকে বলেন, আজ মঙ্গলবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির পঞ্চম ঘটনা এটি। এর আগে রিভিউ আবেদন খারিজের পর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে।

আপিল বিভাগ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রা23ইব্যুনালের রায়ে নিজামীকে বলা হয়েছে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকার। ২০০০ সালে সেই নিজামীই হন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতের প্রধান বা আমির। এমনকি বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-০৬) তিনি প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্পমন্ত্রীও হন।

22মন্ত্রী হিসেবে রাজাকার নিজামীর গাড়িতে উড়ত জাতীয় পতাকাও। এ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল রায়ে বলেছিলেন, নিজামীকে এ দেশের মন্ত্রী করার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা ২ লাখ নারীর গালে চড় মারা হয়েছে। এটা জাতির জন্য লজ্জা, অবমাননা। নিজামী চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায়ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন। ২০১৪ সালের ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত ওই রায় দেন। ওই মামলা এখনো হাইকোর্টে বিচারাধীন।

গ্রেপ্তার ও মামলা: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে করা এক মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন নিজামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই বছরের ২ আগস্ট তাঁকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

nigami hang-www.jatirkhantha.com.bd২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল নিজামীর বিরুদ্ধে মামলায় ফাঁসির রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন নিজামী। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি আপিল বিভাগেও নিজামীর ফাঁসির রায় বহাল থাকে। এরপর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন নিজামী। ৫ মে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে চার সদস্যের বেঞ্চ নিজামীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন। প্রধান বিচারপতি মাত্র এক শব্দের আদেশে বলেন, ‘ডিসমিসড।’ এরপর থেকেই ফাঁসি কার্যকরের ক্ষণগণনা শুরু হয়। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ থাকলেও তিনি তা নেননি।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে নিজামীর বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগের মধ্যে আটটি প্রমাণিত হয়। প্রমাণিত অভিযোগের মধ্যে চারটিতে তাঁকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়। এগুলো হলো, বাউসগাড়ি ও ডেমরা গ্রামে ৪৫০ জনকে নির্বিচার হত্যা ও ধর্ষণ, করমজা গ্রামে ১০ জনকে হত্যা ও তিনজনকে ধর্ষণ, ধূলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে হত্যা এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা (২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ)। পরে আপিল বিভাগের রায়ে করমজা গ্রামে ১০ জনকে হত্যা ও তিনজনকে ধর্ষণের দায় (৪ নম্বর অভিযোগ) থেকে নিজামীকে খালাস দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন অভিযোগে তাঁর ফাঁসি বহাল রাখা হয়।

এ ছাড়া একাত্তরে কছিমুদ্দিনসহ তিনজনকে হত্যা, মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে নির্যাতন ও হত্যা, সোহরাব আলীকে হত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধা বদি, রুমি, আজাদ, সুরকার আলতাফ মাহমুদকে হত্যার দায়ে (১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগ) নিজামীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে কছিমুদ্দিনসহ তিনজনকে হত্যা এবং শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রে নির্যাতন ও হত্যার দায় (১ ও ৪ নম্বর অভিযোগ) থেকে নিজামীকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায়ে আপিল বিভাগ ও ট্রাইব্যুনাল পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, আলবদর বাহিনী যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল, তার ওপর নিজামীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ ছিল। একাত্তরের মে মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি নিধনযজ্ঞে যোগ দেয় জমিয়তে তালাবা (জামায়াতের তৎকালীন ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘ)। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিহত করার জন্য আলবদর ও আলশামস দুটি আধা সামরিক জঙ্গি বাহিনী গঠন করে ছাত্রসংঘ। এর মধ্যে আলবদরে যোগ দেন জমিয়তে তলাবার বিপুলসংখ্যক সদস্য।

এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিখিল পাকিস্তান ছাত্রসংঘ বা জমিয়তে তালাবার প্রধান (নাজিম-এ-আলা) মতিউর রহমান নিজামী। একাত্তরের ১৪ নভেম্বর জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম-এ নিজামী ‘বদর দিবস: পাকিস্তান ও আলবদর’ শীর্ষক প্রবন্ধ লেখেন। এই প্রবন্ধের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করে পাকিস্তানের পতাকা ওড়ানোর জন্য আলবদরদের উৎসাহ দেওয়া হয়।