চারদিকে চাপে মি. অর্থমন্ত্রী-মুহিত
বিশেষ প্রতিবেদক : আবারও চাপের মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিংয়ের ঘটনায় ড. আতিউরের পদত্যাগ, ব্যাংক সচিব ওএসডি এবং দুই ডেপুটি গভর্নরকে অপসারণ করা হলেও সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে এবং বাইরে বিষয়টি নিয়ে এখনও নানা আলোচনা চলছে।
ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরপরই গভর্নরসহ খোদ অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি। এ ঘটনায় অর্থমন্ত্রী তার দায় এড়াতে পারেন না –এমন কথা উঠেছে সরকারি দলেও।এদিকে ঘটনার সঙ্গে বাড়তি উপাদান হিসেবে যুক্ত হয়েছে পদত্যাগ নিয়ে ড. আতিউরের নাটকীয়তা, অর্থমন্ত্রীকে উপেক্ষা এবং তার ঢাকঢোল পেটানো সংবাদ সম্মেলন।
পদত্যাগ নিয়ে ড. আতিউরের এ নাটকীয়তায় অর্থমন্ত্রী ক্ষুব্ধ ও বিব্রত হয়েছেন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকিং এবং ড. আতিউরের বিষয়ে খোলামেলা কিছু মন্তব্যও করেছেন তিনি।এদিকে খোলামেলা বক্তব্যের কারণে অর্থমন্ত্রী দলের ভেতর নতুন করে সমালোচনার শিকার হয়েছেন। এমনকি স্বয়ং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে কারণে একই দৈনিকে প্রকাশিত বক্তব্যের একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
গত ১৮ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার/ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় অর্থমন্ত্রীর বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। বৈঠকে নেতারা জানান, অর্থমন্ত্রীর অতিকথনের জন্য সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের নেতাদের বক্তব্য সমর্থন করে বলেন, একজন সিনিয়র মন্ত্রী হয়ে এভাবে তার কথা বলা ঠিক হয়নি। চিন্তা-ভাবনা করে কথা বলা উচিত ছিল।
বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান।এদিকে বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ ও বিব্রত অর্থমন্ত্রী পদত্যাগও করতে পারেন এমন একটি গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কারো কারো মতে, অর্থমন্ত্রী পদত্যাগ করলেও আগামী বাজেট পাস হওয়া পর্যন্ত তিনি থাকছেন। তবে এ বিষয়ে কেউ সুনিশ্চিত নয়।
এর আগেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অর্থমন্ত্রী একাধিকবার পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন -এমন কথাও শোনা যায়। গত ১১ মার্চ ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে দশ কোটি মার্কিন ডলার লোপাটের ঘটনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি।
রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি রাবিশে পরিণত করার জন্য অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর দায়ী। ৮০০ কোটি টাকা হ্যাক হয়ে যাওয়ার পরও তারা এখনো দায়িত্ব পালন করছেন কোন নৈতিক অধিকারে? অবিলম্বে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদত্যাগ দাবি করছি।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আবুল মাল আবদুল মুহিতের সফলতা অনস্বীকার্য। কিন্তু তার এই সকল সফলতাকে ম্লান করে দিয়েছে আর্থিক খাতের কয়েকটি বড় ধরনের দুর্নীতি।
বিশেষত: হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংকে দুর্নীতি এবং সর্বোপরি শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়াও সম্ভব হয়নি তার পক্ষে।
সাম্প্রতিক সাক্ষাতকারে এ বিষয়ে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে খোলামেলা বক্তব্য রেখেছিলেন মুহিত। যে কারণে এখন অনেকেই তার ওপর নাখোশ বলে জানা যায়।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির পর যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে স্পস্ট বোঝা যায় অর্থমন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যকার সমন্বয় ছিল না। অনেক বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরের মতামত মিলত না। সমন্বয়হীনতার কারণেই এটি হতো।’
এই সমন্বয়হীনতার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো ব্যর্থতা আছে কি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি গভর্নর (আতিউর রহমান) দায়-দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু বিদেশে যেটা দেখা যায়, কোনো ব্যর্থতার জন্য নির্বাহী নয়, জনপ্রতিনিধি পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির জন্য দায়-দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করতে হলে অর্থমন্ত্রীকে পদত্যাগ করা উচিত ছিল। কারণ দেশের অর্থনীতির প্রধান হিসেবে অর্থনীতির যে কোনো খাতের ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীকে অবশ্যই নিতে হবে। একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে তাকে জবাবদিহিতা করতে হবে।’