’জিয়াউর রহমান ওয়াজ এ কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার’
এস রহমান : ‘জিয়াউর রহমান ওয়াজ এ কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার’- লিখে রাতারাতি বিখ্যাত তিনি? আলোচিত সমালোচিত কারো কারো ভাষায় বিশ্বাসঘাতক বেঈমান’ও হয়ে উঠেছেন উক্ত উক্তির লেখক সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। বইটির নাম ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’। এই বইটিতেই লেখক লিখেছেন:-‘জিয়াউর রহমান ওয়াজ এ কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার’।
বইটির প্রকাশক জানিয়েছেন ইতিমধ্যে বইটির রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি হয়েছে। যা কিনা ইতিপূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে’র কোন বই বিক্রিতে ঘটেনি। প্রকাশকের মতে, বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরায় এর বিক্রি সকল রেকর্ড ভঙ্গ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র এই সিনিয়র নেতা একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেও ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা।
মনজুর ১৯৯০ সালে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এরপর ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে রাজনীতি করেছেন তিনি।তার ছেলে সোহেল মনজুর সুমন বর্তমানে পিরোজপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও ভাণ্ডারিয়া বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন।
দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে এই নেতা বেশ প্রভাবশালী হওযায় তাঁর প্রতিপক্ষ রাজনীতিকরা এখন তাঁকে ঘায়েল করতে উদ্যত। প্রতিপক্ষরা ইতিমধ্যে ‘জিয়াউর রহমান ওয়াজ এ কোল্ড ব্লাডেড মার্ডারার’-এর লেখকের চরিত্র সম্পর্কে বিশ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের কাছেও নালিশ করেছেন।
উভয় অফিসের নেতারা এ নিয়ে অনুসন্ধানী তৎপরতা চালাচ্ছেন। প্রতিপক্ষরা নালিশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর এর বিরুদ্ধে যেন দৃষ্ঠান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ নামক বইয়ের ১৩২ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে, ‘ziaur rahman was a cold-blooded murderer.’ এছাড়া ১৩৩ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে জিয়া ও এরশাদ ‘পার্লামেন্টারী শাসনব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করেন নাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য, কারন দুজনেরই অাগমন সেনা ছাউনি থেকে এবং দুজনই স্বৈরশাসক’। এখানে এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানকে সরাসরি স্বৈরশাসক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
বরিশাল অঞ্চলের একাধিক রাজনীতিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিক নিয়ে পিরোজপুর- ২ আসন থেকে তিনবার জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর। একবার ধানের শীষ প্রতিকে জয়লাভ করেছেন এই সাবেক সংসদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তিনি।
অথচ তার লেখা বইয়ে দলটির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এমন আপত্তিকর মন্তব্য সহ্য করতে পারছেন না নেতা- কর্মীরা। নেতা-কর্মীরা এজন্য তাদের স্ব-স্ব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডিতে ইচ্ছামত লিখে গুষ্ঠি উদ্ধার করছেন মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান তাঁর ফেসবুক আইডিতে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে দক্ষিণাঞ্চল’ এই বইটির বিতর্কিত কয়েকটি পৃষ্ঠা নম্বরসহ কিছু উক্তি তুলে ধরে তার বিচার দাবি করেছেন খালেদা জিয়ার কাছে।
তিনি জাতিরকন্ঠকে জানিয়েছেন, বইটির উৎসর্গে জাতীয় চার নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ জাতীয়তাবাদী আদর্শের এ নেতা তার বইয়ের উৎসর্গে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করেননি ।এটা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বেইমানী’র নামান্তর।ইরান তার ফেসবুকের ওই পোস্টে আরো উল্লেখ করেন যে, ‘তিনি মূলতো জেলহত্যা মামলা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য বইটি লিখেছেন।’
এ ব্যাপারে মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম মনজুর জাতিরকন্ঠকে জানান, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ হিসেবে আমার আদর্শের জায়গা থেকে বইটা লেখা।’ রাজনীতি এক জিনিষ এবং ইতিহাস লেখা এক জিনিষ। তাছাড়া আমিতো ইতিহাস মিথ্যা লিখতে পারবো না। তিনি আরো বলেন, যারা সমালোচনা করছে তাঁরা লেখাপড়া না জেনে ইতিহাস না পড়ে বলছে। তাছাড়া আমি যে দল করিনা কেন বইয়ে’ তো সত্য লিখতে হবে। সত্য বরাবরই অপ্রিয় হয়।
ওদিকে ২০ দলের ওই নেতার পোষ্ঠের পর থেকে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বইটির ৩৪, ৮০, ৮৫, ১৩২, ১৩৩, ১৩৪ ও উৎসর্গ করা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন ২০ দলের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে অনেকে মন্তব্য করেছেন লেখক মনজুর সম্পর্কে। ছাত্রদল নেতা নুরুল হুদা মিন্টু হাওলাদার জানান, আওয়ামী লীগের নেতারা যে কথা বলতে পারেন না- সে কথা একজন বিএনপির সিনিয়র নেতার লেখায় কিভাবে উঠে আসে তা আমার বোধগম্য নয়। আমি বিশ্বাস করি তিনি তার লেখার পুনঃবিবেচনা করবেন।
মোঃ সাইফুল ইসলাম বাপ্পী বলেছেন, বাংলাদেশের ১৯ দফার রূপকার, আধুনিক বাংলার স্থপতি, বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, কোটি মানুষের আদর্শ শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউুর রহমান কে স্বৈরশাষক বলায় আমি দারুন ভাবে ব্যাথিত। কারন এই দলের নেতাকে আমি আমার রাজনৈতিক আদর্শ বলে বিশ্বাস করি।
তালুকদার মারুফ উল্লেখ করেছেন, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদের কর্মি হিসেবে জাতীয়তাবাদের প্রবর্তক এবং আদর্শ, একজন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বৈরশাষক বলায় আমি লজ্জিত এবং ব্যথিত।তানভীর আহমেদ উল্লেখ করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে লেখক সঠিক কথা লিখেছেন, চার নেতার চেয়ে জিয়া বড় হতে পারেন না, হ্যা জিয়াউর রহমান এক দেশ প্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সর্বজন শ্রদ্বেয় ও সন্মানীয়।