”আমিন ও বারীর চোখের তারা, তাদের স্টার, তাদের চোখের আলো হয়ে গেল”
সংসদ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার ‘মিথ্যা’ লিখে তাকে গ্রেপ্তারের পথ তৈরি করেছিল।জরুরি অবস্থার সময় ডিজিএফআইয়ের ‘সরবরাহ করা’ খবর যাচাই ছাড়া প্রকাশের ‘ভুল’ ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম স্বীকারের পর তা নিয়ে আলোচনার মধ্যে সোমবার সংসদে একথা বলেন তিনি।
এরপর মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মামলার পাশাপাশি চলতি সংসদের নবম অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের বক্তৃতায় তার বিচারের দাবি ওঠে।সম্প্রতি দলীয় এক আলোচনা সভায় জরুরি অবস্থার সময় প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের ভূমিকার সমালোচনা করার পর সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায়ও সেই প্রসঙ্গটি তোলেন সংসদ নেতা হাসিনা।
“২০ বছর আমার বিরুদ্ধে লিখে গেছে। কারাগার থেকে বের হয়ে এই দুই পত্রিকা পড়ি না। প্রধানমন্ত্রী হয়ে তো পড়িই না। এই দুইটি পত্রিকার উপরে লেখা থাকে নির্ভিক সাংবাদিকতা। আমি ডেইলি স্টার এবং প্রথম আলোর কথা বলছি।”“তারা ডিজিএফআইর লেখা ছাপল। সেই লেখায় কি তারা সূত্রের নাম লিখেছিল? আমি তো তখন বিরোধী দলে ছিলাম। আঘাতটা আমার উপরই আগে আসল। আমাকে আগে গ্রেপ্তার করা হল। আমাকে গ্রেপ্তারের জন্য মিথ্যা লেখা লিখে গেছে এই দুটি পত্রিকা।”
সেনা নিয়ন্ত্রিত ওই সরকারের সময় বন্দি করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও।তখন দুই প্রধান নেত্রীকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার একটি ষড়যন্ত্র হয়েছিল এবং তাতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে আসছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
শেখ হাসিনা বলেন, “এটি (কথিত দুর্নীতির খবর) সাপ্লাই করেছে ডিজিএফআইর ব্রিগেডিয়ার আমিন ও ব্রিগেডিয়ার বারী, যারা শিক্ষক-ছাত্র-রাজনীতিবিদদের এত অত্যাচার করে গেছে, তাদের সঙ্গে কী এত সখ্যতা? ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এবং প্রথম আলোর মতিউর রহমান কি এর জবাব দিতে পারবেন?
“তারা হয় এটা করেছেন আমাকে রাজনীতি থেকে বিদায় দেওয়ার জন্য। না হয় তারা তাদের পে রোলে ছিল। তাদের দূতিয়ালি করেছে, তাদের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। যাদের দ্বারা সকলে নির্যাতিত, তারা তাদের চোখের তারা। আমিন ও বারীর চোখের তারা, তাদের স্টার, তাদের চোখের আলো হয়ে গেল।”
দুই সম্পাদকের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ ইউনূসের দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক অভিলাষ কারও থাকলে ভোটে আসতে হবে।“গণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের দম ঘোটে। অগণতান্ত্রিক পরিবেশে তাদের গুরুত্ব বাড়ে। রাজনীতি করার ক্ষমতা বা ইচ্ছা থাকলে ভোটে আসেন।”
“এদের সাথে আছে আরেকজন। ডাবল এ প্লাস নিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়ল। দল করার যোগ্যতা নেই। মামলায় হারল, দোষ শেখ হাসিনার।”
বয়স পেরিয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের দায়িত্ব থেকে নোবেলজয়ী ইউনূসকে সরকার সরিয়ে দেওয়ার পর তিনি আদালতে গিয়ে আইনি লড়াইয়ে হেরে গিয়েছিলেন।
এরপর ইউনূস পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন ঠেকাতে তৎপরতা চালিয়েছিলেন বলে আগেও ইঙ্গিত করেছিলেন শেখ হাসিনা।“এদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি। একটু যদি গণতন্ত্রকে ধরাশায়ী করা যায়, অগণতান্ত্রিক পন্থা আসে,” বলেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি বলেন, “তাদের এই আশা পূরণ হবে না। বাংলার জনগণ এখন অনেক সচেতন।”
মাহফুজ আনামকে নিয়ে ঘটনায় বিদেশিদের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের উপর সরকার কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে না।
“বলা হয়, কথা বলার স্বাধীনতা নেই। তাহলে এত কথা (টক শোতে) বলছেন কীভাবে? তারা হয়ত পরে দেখেনই না, তারা কী বলেন? যা ইচ্ছা বলে যান। মনের তাপ উত্তাপ বের করেন।”“মিডিয়ার জন্য যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি, আমি এর সবচেয়ে বড় ভিক্টিম… আমরা কোনোভাবেই গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করি না।”