• রোববার , ২৪ নভেম্বর ২০২৪

৭৪ দুর্ভিক্ষের খোদেজা মাকে খুঁজতে সুজারল্যান্ড থেকে উলিপুরে


প্রকাশিত: ১১:৫৫ পিএম, ২৫ জানুয়ারী ১৯ , শুক্রবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ৫২ বার

কুড়িগ্রাম থেকে ফিরে আসাফা সেলিম : মা কোথায় তুমি..! ৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের ছোট্ট শিশু খোদেজা ৪৫ বছর পর মাকে খুঁজতে সুইজারল্যান্ড থেকে এসেছে কুড়িগ্রামের উলিপুরে। মাকে এখনও সে খুঁজে পায়নি। তবে সে আশাবাদি। খোদেজা জাতিরকন্ঠ কে জানালেন, সুজারল্যান্ড থেকে উলিপুরে মাকে আমার মনে পড়ে । হঠাৎ অকারণে একটা কি সুর গুনগুনিয়ে কানে আমার বাজে…’ রবি ঠাকুরের লেখা এই কবিতার মত খোদেজা রওফির কানে তার মারে গানের সুর গুনগুনিয়ে বাজতো। তাই তো তিনি দীর্ঘ ৪৫ বছর পর সেই মাকে খুঁজতেই চলে এলেন সুদূর সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে।

কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর ও চিলমারীতে হারিয়ে যাওয়া মা-বাবার খোঁজে দুই উপজেলা শহরের পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সুইজারল্যান্ড প্রবাসী খোদেজা রওফি। তার স্বামী জিইয়াস মরিনো ও প্রবাসী বন্ধুরা খোদেজাকে এই কাজে সহযোগিতা করছে।খোদেজা রওফি জানান, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে শুধু অপেক্ষায় প্রহর গুনেছি। দত্তক নেয়া সন্তান হিসেবে বিদেশে বড় হয়েছি। কোনো কিছুর কমতি রাখেনি পালক বাবা-মা। তবু মনের ভেতর শূন্যতা। ক্ষণেক্ষণে ব্যথা মনে দাগ কেটে যায়। আর বড় হয়ে যখন জানতে পারলাম আমার দেশ সুইজারল্যান্ড না, বাংলাদেশ। বাংলাদেশেই আমার জন্ম। তখন থেকেই মনে শূন্যতা।

সংসার-স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকার পরেও একটা সুতোর টান অনুভব করি মনের খাঁচায়। এক সময় বলেই ফেললাম মনের কথাটা আমার স্বামীকে। তিনিও রাজি হলেন আমার কথায়। এরপর বাংলাদেশে হারিয়ে যাওয়া বাবা-মাকে খুঁজতে আসি।খোদেজার সঙ্গে থাকা লোকজনের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে সাড়ে ৩ বছর বয়সী খোদেজাকে উলিপুর উপজেলার থেতরাই বাজারে কাঁদতে দেখে পাশের চিলমারী উপজেলার বেসরকারি শিশু সংগঠন টেরেডেস হোমে নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৭৮ সাল পর্যন্ত খোদেজা সেখানেই ছিল। এরপর সুইজারল্যান্ডের রওফি পরিবার তাকে সন্তান হিসেবে দত্তক নেন । নতুন শহরে খোদেজা তাদের সন্তান হিসেবেই পরিচতি লাভ করেন। পড়াশুনা শেষ করে জেনেভার সাইকেল ডেলা গোলেহে স্কুলের শিক্ষক হিসেবে ২০০১ সাল থেকে কাজ করছেন খোদেজা রওফি।

মা-বাবাকে হারানোর সময়কালের কোন স্মৃতিই মনে নেই তার। তবে ছোট্টবেলার স্মৃতি হিসেবে একটি সাদাকালো ছবি নিয়ে নতুন বাবা-মায়ের সঙ্গে পাড়ি দেয় জেনেভা শহরে ছোট্ট খাদিজা। সেই ছবিটি তিনি সাথে করে নিয়ে এসেছেন প্রমাণ স্বরূপ।প্রবাসী খাদিজা রওফি সুইজারল্যান্ডে এর জেনেভা থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে সেখানকার কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার জিইয়াস মরিনোকে বিয়ে করেন। তাদের দু’জনের সংসারে ৫ বছরের ইলিয়াস নামের একটি পুত্রসন্তান আছে।