• সোমবার , ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

’৭২ সালে শেখ মুজিব অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন: তারেক


প্রকাশিত: ৫:১৪ পিএম, ৯ এপ্রিল ১৪ , বুধবার

নিউজটি পড়া হয়েছে ২৬০ বার

৭২ সালে শেখ মুজিব অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন: তারেক

বিশেষ প্রতিনিধি, লন্ডন :
আপডেট: ১৫:৪৭, এপ্রিল ০৯, ২০১৪

লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘’৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে যেমন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাও জোর করে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’
গতকাল মঙ্গলবার রাতে লন্ডনের ওয়েস্ট মিনস্টার সেন্ট্রাল হলে ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সুশীল সমাজের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তারেক এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী মুজিবনগর সরকারের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের খসড়ায় সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হলেও ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশে ফেরার পর ১২ জানুয়ারি তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন।’
বিএনপির এই নেতা ২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশিত পত্রিকা ‘সাপ্তাহিকে’ পাকিস্তানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বন্দী থাকা এবং একসঙ্গে দেশে প্রত্যাবর্তনকারী ড. কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাত্করের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তাঁরা দুজনই সে সময় পাকিস্তানের পাসপোর্টে দেশে ফিরেছিলেন। জাতিসংঘের ব্যবস্থাপনায় দেশে ফেরার কথা আলোচনা হলেও সে সময়ে তাঁরা সেই ব্যবস্থায় আসেননি। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে এসে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের এই আয়োজনে বিএনপির দলীয় সংকট, নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনের ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা ও প্রশ্ন উত্থাপিত হলেও তারেক রহমান সেসব বিষয়ে কোনো মন্তব্যই করেননি। বরং প্রায় ৪০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক প্রমাণের পক্ষে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতার বই এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ওয়েবসাইটের তথ্য থেকে উদ্ধৃতি দেন। একই সঙ্গে তিনি দাবি করেন, শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি। ওই দাবির পক্ষে ফরাসি টিভির একটি প্রতিবেদনের অংশবিশেষ প্রদর্শন করেন এবং বিভিন্ন প্রকাশনার তথ্য উদ্ধৃত করেন।

তারেক বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে তাচ্ছিল্য করার জন্য বলেছেন যে কারও ঘোষণা-টোষনায় মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। কিন্তু তাঁর লেখা ‘বাংলাদেশ: এমারজেন্স অফ এ নেশন’ বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘মেজর জিয়া (লেটার প্রেসিডেন্ট) ওয়াজ দ্য ফার্স্ট টু ডিক্লেয়ার ইনডিপেনপেন্স’। তিনি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহর বই ‘বাংলাদেশ এট ওয়্যার’ থেকে ২৬ মার্চ কখন কীভাবে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তার বিবরণ উদ্ধৃত করেন।
বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি দাবি করে তারেক প্রথমা প্রকাশনার ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ বইয়ে তাজউদ্দীন আহমদের একান্ত সচিব মঈদুল হাসানের বক্তব্য উদ্ধৃত করেন, যেখানে মি. হাসান জানিয়েছেন যে তাজউদ্দীন আহমদ ২৫ মার্চ একটি ঘোষণা রেকর্ড করে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ জানালে তিনি তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
তারেক রহমান রাজাকারদের মন্ত্রী বানিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের কঠোর সমালোচনা করেন। জামালপুরে রাজাকার কমান্ডার হিসেবে জেলখাটা মাওলানা নুরুল ইসলামকে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী করার কথা উল্লেখের পাশাপাশি ফরিদপুরের রাজাকার পরিবারে নিজের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগই “রাজাকারের বংশবৃদ্ধিতে” সহায়তা করছে।’ তিনি দাবি করেন, তাঁরা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনে অনেককে সরকারে নিয়েছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো মামলার রেকর্ড ছিল না।
তারেক রহমান প্রবাসে বসবাসরত পেশাজীবীদের প্রতি বাংলাদেশের ভবিষ্যতের বিষয়ে দিকনির্দেশনা নির্ধারণে চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে বিএনপিকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।
বিএনপি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কায়েসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সাবেক দুই সভাপতি শাহগীর বখত ফারুক ও মকিম আহমেদ, কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির সাবেক অধ্যাপক এম এ মালেক, মানবাধিকার সংগঠক এম এ হাসনাত, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র ওহিদ আহমেদ, ফরেস্ট গেট মসজিদের ইমাম মাওলানা শামসুল হক বক্তব্য দেন।
এঁদের মধ্যে এম এ হাসনাত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগের সপ্তাহে বিএনপির নেতাদের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করে বলেন, এসব নেতা ঢাকায় থাকার পরও খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে মাঠে নামেননি। তিনি বলেন, তারেক রহমানকে তাই নতুন কিছু দিতে হবে। তিনি জানান, খালেদা জিয়াকে কার্যত গৃহবন্দী রাখার সময়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাংলাদেশ বিষয়ক কমিটির সদস্যদের কাছে বারবার অনুরোধ জানিয়েও তাঁদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি।